ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মোহামেডানের গোলবন্যা চট্ট. আবাহনীর জালে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১০ এপ্রিল ২০১৫

মোহামেডানের গোলবন্যা চট্ট. আবাহনীর জালে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে বৃহস্পতিবারের খেলায় বড় ও আয়েশী জয় কুড়িয়ে নিয়েছে ‘সাদা-কালো’ খ্যাত দেশের ঐতিহ্যবাহী ফুটবল ক্লাব এবং গত লীগের চতুর্থ স্থান অর্জনকারী ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব লিমিটেড। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে তারা গত লীগের অষ্টম স্থান (দশ দলের মধ্যে) চট্টগ্রাম আবাহনী লিমিটেডকে হারায় ৫-০ গোলে। প্রথমার্ধে খেলার স্কোরলাইন ছিল ০-০। ম্যাচের প্রথম তিন গোল হয় মাত্র দশ মিনিটের ব্যবধানে! প্রিমিয়ার লীগে এ দুই দল সর্বশেষ মুখোমুখি হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ১ ফেব্রুয়ারি প্রথম লেগে চট্টগ্রাম আবাহনীকে ২-০ গোলে হারিয়েছিল ঢাকা মোহামেডান। দ্বিতীয় লেগে একই ভেন্যুতে ১৭ মে অনুষ্ঠিত ম্যাচেও ১-০ গোলে জেতে মোহামেডান। ১৩ জুলাই চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত তৃতীয় লেগের খেলাতেও জয়ের মুখ দেখে মোহামেডান। এবার স্কোরলাইন ছিল ২-০। মোহামেডান এবার গড়েছে তারুণ্য নির্ভর দল। তবু এই দল নিয়েই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য লড়াই করবে সাদা-কালোরা। লীগ শুরুর আগে এমনটাই জানিয়েছিলেন দলের কোচ কাজী জসিমউদ্দিন আহমেদ জোসি এবং দলীয় অধিনায়ক অরূপ কুমার বৈদ্য। শুক্রবারের ম্যাচটিতে প্রথম ৫৯ মিনিট পর্যন্ত গোল না খাওয়ার মানসিকতায় অটল ছিল চট্টগ্রামের ক্লাবটির। কিন্তু প্রথম গোল হজমের পরেই যেন চিড় ধরে তাদের রক্ষণদুর্গে। তাসের ঘরের মতোই ভেঙ্গে পড়ে দৃঢ় মানসিকতা। একের পর এক গোল খেয়ে যেন ‘পটোল’ তোলে তারা! রেফারি মিজানুর রহমান খেলা শেষের বাঁশি বাজালে মোহমেডানের খেলোয়াড়রা ছুটে যায় মোহামেডান-গ্যালারির দিকে। সেখানে খেলা উপভোগ করতে আসা শ’ তিনেক মোহামেডানপ্রেমী আনন্দে আত্মহারা হয়ে পড়ে। কোচ জোসি যখন তাদের সামনে দিয়ে ম্যাচ-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে যাচ্ছিলেন, দর্শকরা যেন আরও আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়ে। জোসিও হাসিমুখে হাত নাড়িয়ে তাদের ভালবাসা জানান। পক্ষান্তরে চট্টলা আবাহনীর খেলোয়াড়দের চেহারায় তখন ভিড় করেছে রাজ্যের হতাশা। যেন পৃথিবীর সবচেয়ে ক্লান্ত-বিধ্বস্ত পরাজিত যোদ্ধা তারা! ম্যাচের ৫৯ মিনিটে মধ্যমাঠে মোহামেডানের গিনির ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরাকে বল পাস দেন মিডফিল্ডার মোবারক হোসেন ভুঁইয়া। বল নিয়ে প্রতিপক্ষের বক্সে ঢুকে পড়েন বাঙ্গুরা। ডান পায়ে যে তীব্র শটটি নেন, তা ফেরাতে পারেননি চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক মোহাম্মদ এরশাদ (১-০)। ৬৪ মিনিটে আবার গোল করে ব্যবধান দ্বিগুণ করে মোহামেডান। ফরোয়ার্ড তৌহিদুল আলম সবুজ চমৎকারভাবে প্লেসিং শট করে গোল করেন (২-০)। ৬৯ মিনিটে প্রতিপক্ষের ডি-বক্সের ভেতরে বাঁ প্রান্ত দিয়ে মিডফিল্ডার মোহাম্মদ ইব্রাহিমের জোরালো শট চট্টগ্রাম আবাহনীর গোলরক্ষক ঠিকমতো আটকাতে পারেননি। বল চলে যায় ফাঁকায় দাঁড়ানো সুযোগসন্ধানী মিডফিল্ডার মাসুক মিয়া জনির কাছে। আলত টোকায় তিনি বল পাঠিয়ে দেন প্রতিপক্ষের জালে (৩-০)। ৮৬ মিনিটে ইব্রাহিমের পাস থেকে বল পেয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন বাঙ্গুরা (৪-০)। আর ইনজুরি সময়ে বাঙ্গুরার পাস থেকে গোল করেন অধিনায়ক অরূপ কুমার বৈদ্য (৫-০)। ঢাকা মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব স্থাপিত হয় ১৯৩৩ সালে ঢাকার হাজারীবাগে। এটি কলকাতা মোহামেডানের ঢাকার শাখা হিসেবে ঢাকার মুসলিম সমাজে ক্রীড়া জাগরণ সৃষ্টি করে। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ঢাকার ক্রীড়াঙ্গনে এক শূন্যতার সৃষ্টি হয়। সেই ক্রান্তিকালে কলকাতা মোহামেডানের প্রখ্যাত ফুটবলার মোহাম্মদ শাহজাহান ঢাকায় চলে আসেন এবং ঢাকা মোহামেডানের দায়িত্ব নেন। তিনি ঢাকা মোহামেডানকে সুসংগঠিত ও পুনর্গঠিত করেন। ১৯৫৫ সাল পর্যন্ত ঢাকার ফুটবলে একক প্রাধান্য ছিল ঢাকা ওয়ান্ডারার্সের। ১৯৫৬ সালে ওয়ান্ডারার্সের কিছু তারকা ফুটবলার ও ক্লাব কর্মকর্তা ঢাকা মোহামেডানে যোগ দেন। এরপর ঢাকা মোহামেডান ধীরে ধীরে ঢাকার ফুটবলে প্রাধান্য বিস্তার করতে থাকে। ১৯৫৬ সালে প্রথমবারের মতো ঢাকা লীগের ফাইনাল খেলে ও রানার্সআপ হয়। ১৯৫৭ সালে প্রথমবারের মতো মোহামেডান ঢাকা লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়, একই বছর মোহামেডান স্বাধীনতা দিবস ফুটবল টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হয়। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়েও নব্বই দশকের মাঝামাঝি পর্যন্ত দাপট ছিল মোহামেডানের। তবে এখন আর সেই আগের জৌলুস নেই তাদের। দীর্ঘসময় ধরে লীগের শিরোপা বঞ্চিত তারা। এবার কি তারা পারবে কাক্সিক্ষত লীগ-শিরোপা খরা কাটিয়ে সমর্থকদের মুখে হাসি ফোটাতে?
×