ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য সময় চেয়েছেন

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১০ এপ্রিল ২০১৫

রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার জন্য সময় চেয়েছেন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী কামারুজ্জামান মৃত্যুদ- কার্যকর নিয়ে ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে সময় চেয়েছেন। সে অনুযায়ী তাকে সময় দেয়া হয়েছে। তবে সে সময় কতটুকু তা জানা যায়নি। প্রাণভিক্ষার বিষয়ে জানতে কারাগারে কোন ম্যাজিস্ট্র্রেট যাননি। সে অনুযায়ী বৃহস্পতিবারের মধ্যে কামারুজ্জামানের ফাঁসি কার্যকর হওয়ার সম্ভাবনা নেই। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম দু’জনই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন বৃহস্পতিবারের মধ্যেই প্রাণভিক্ষার সিদ্ধান্তের বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। কামারুজ্জামানের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাত করে আইনজীবীরা জানিয়েছেন, তিনি এ বিষয়ে যৌক্তিক সময় চেয়েছেন। এ বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেছেন, যৌক্তিক সময় মানে সাত দিন নয়। কারাবিধিতে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সময়সীমা সাত দিন হলেও এ ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য নয়। যৌক্তিক সময় মানে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে যতটুকু সময় লাগে সেটিকেই বোঝায়। যৌক্তিক সময় মানেই সাত দিন, এটা হতে পারে না। অন্যদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেছেন, কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। আর প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে রায় দ্রুত কার্যকর করবে সরকার। এ ব্যাপারে ‘আদালতের রায়ের নির্দেশনা ও কারাবিধি’ অনুযায়ীই তারা সব পদক্ষেপ নেবে। মৃত্যুদ- বহাল রেখে সুপ্রীমকোর্টের দেয়া চূড়ান্ত রায়ের বিরুদ্ধে কামারুজ্জামানের করা রিভিউ আবেদন খারিজ করে দেয়া রায়ের অনুলিপিতে বুধবার স্বাক্ষর করেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহাসহ বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা। পরে রায়ের অনুলিপি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হয়ে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছানোর পর এই যুদ্ধাপরাধীর দ- কার্যকরে বাকিসব প্রক্রিয়াই সম্পন্ন হয়। বুধবার রিভিউ আবেদনের খরিজ করে দেয়া রায়ের অনুলিপি কারাগারে পাঠানো হয়েছে। ঐ রায় কামারুজ্জমানের পড়ে শুনানোও হয়েছে। বৃহস্পতিবার তার আইনজীবীরা কামারুজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেছেন। এদিকে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, যুদ্ধাপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত জামায়াত নেতা মুহাম্মদ কামারুজ্জামান প্রাণভিক্ষার জন্য আবেদন করলে তা রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। আর প্রাণভিক্ষার আবেদন না করলে রায় দ্রুত কার্যকর করবে সরকার। এ ব্যাপারে ‘আদালতের রায়ের নির্দেশনা ও কারাবিধি’ অনুযায়ীই তারা সব পদক্ষেপ নেবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সচিবালয়ের সাংবাদিকদের একথা বলেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, কামারুজ্জামান রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সে সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবারের মধ্যেই জানাতে হবে। তিনি বলেন, প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি না সেটা তো আমাদের বৃহস্পতিবারই জানাতে হবে। আমাদের কাছে আদালত থেকে যে নির্দেশ এসেছে সে অনুযায়ী আইজি প্রিজন কাজ করছেন। প্রাণভিক্ষা না চাইলে বৃহস্পতিবারই এই যুদ্ধাপরাধীর দ- কার্যকর করা হবে কি না- এমন প্রশ্নে কামাল বলেন, সেটা এই মুহূর্তে বলতে পারব না। তবে সময় মতোই কার্যকর হবে। রায় কার্যকরে ‘কোন বিলম্ব হচ্ছে না’ মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আপনারা নিশ্চিত থাকেন, যথাযথভাবেই এ প্রক্রিয়া শেষ হবে। আমাদের ম্যাজিস্ট্রেট তার কাছে যাবে। তার বক্তব্য অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ্যাটর্নি জেনারেল ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কামারুজ্জামানের রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে যৌক্তিক সময় চাওয়ার বিষয়ে এ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছেন, যৌক্তিক সময় মানে সাত দিন নয়। কারাবিধিতে প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সময়সীমা সাত দিন হলেও এ ক্ষেত্রে কারাবিধি প্রযোজ্য নয়। তিনি বলেন, যৌক্তিক সময় মানে প্রাণভিক্ষার আবেদন করতে যতটুকু সময় লাগে সেটিকেই বোঝায়। তাঁর মতে, যৌক্তিক সময় মানেই সাত দিন, এটা হতে পারে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে জবাবে তিনি এসব কথা বলেন। যতদ্রুত সম্ভব প্রাণভিক্ষা চাওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ক্ষেত্রে জেলকোড প্রযোজ্য হবে না। তাই এখানে সাত দিনের প্রসঙ্গ আসে না। প্রাণভিক্ষা করার নির্দিষ্ট সময়সীমা আইনে বেঁধে দেয়া হয়নি বলে জানিয়ে তিনি জানান, সেটা দ্রুততম সময়ের মধ্যে করতে হবে। জেল কর্তৃপক্ষ রিভিউয়ের রায় তাকে পড়ে শুনিয়ে সঙ্গে সঙ্গে জানতে চেয়েছেন, তিনি ক্ষমাভিক্ষা করবেন কি-না। আসামি সেটি জানাতে কিছুটা সময় নিতে চেয়েছেন, তবে খুব বেশি দেরি করার সুযোগ নেই। মাহবুবে আলম জানান, যদি তিনি প্রাণভিক্ষা না করেন অথবা করলেও তা নামঞ্জুর হয়, তবে সরকারের পক্ষে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ফাঁসির দিনক্ষণ ঠিক করে দিলে জেল কর্তৃপক্ষ তা কার্যকর করবে। তবে প্রাণভিক্ষা করা হলে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত না জানা অথবা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসি কার্যকর করা যাবে না বলেও জানান এ্যাটর্নি জেনারেল। রায় এখন কিভাবে কার্যকর করা হবে সে প্রশ্নে রাষ্ট্রের এই সর্বোচ্চ আইন কর্মকর্তা আবারও বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনালস) আইন ১৯৭৩-এর ২০(৩) ধারা অনুসারে সরকার সে ব্যবস্থা নেবে। রায় কার্যকরের বিষয়টি এখন সম্পূর্ণভাবে সরকারের ওপর নির্ভশীল বলেও জানান তিনি। আইনজীবীদের সাক্ষাত ॥ মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত কামারুজ্জামানের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন, প্রাণভিক্ষার বিষয়ে তিনি ভাবনা-চিন্তা করবেন এবং পরে তার সিদ্ধান্ত জানাবেন। এ বিষয়ে কামারুজ্জামান ‘যৌক্তিক’ সময় নিতে চেয়েছেন বলেও জানান আইনজীবীরা। তারা বলেন, প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না সে সিদ্ধান্ত তিনি নিজেই নেবেন। আমাদের কাছে তিনি শুধু এ বিষয়ে আইনগত বিভিন্ন দিকগুলো জানতে চেয়েছেন। আমরা সেসব বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছি। বৃহস্পতিবার বেলা পৌনে বারোটার দিকে কামারুজ্জামানের সঙ্গে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে সাক্ষাত শেষে বের হয়ে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আইনজীবী এ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির। জেলগেটে ব্রিফিংয়ে তিনি বলেন, কামারুজ্জামান আমাদের সঙ্গে সাক্ষাত করতে চেয়েছিলেন। সে অনুসারে কারা কর্তৃপক্ষ মঙ্গলবার রাতে চিঠি দেন। সে চিঠি পেয়ে কারাগারের ভেতরে আমরা দেখা করে এসেছি। শিশির মনির বলেন, কামারুজ্জামান আমাদের কাছে রিভিউ খারিজের রায়ের বিষয়ে জানতে চেয়েছেন, আমাদের পরামর্শ নিয়েছেন। তিনি আমাদের কাছে আইনের বিধি বিধান সম্পর্কে জানতে চেয়েছেন। আমরা আইনজীবী হিসেবে যথাসাধ্য জানাতে চেষ্টা করেছি। শীর্ষ এ যুদ্ধাপরাধী প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না সে বিষয়ে কোন কথা হয়েছে কি-না, এ প্রশ্নের জবাবে শিশির মনির বলেন, বাকি বিষয়গুলো নিতান্তই তার সিদ্ধান্তের বিষয়। তিনি আমাদের কাছে আইনের প্রভিশনগুলো জানতে চেয়েছেন, দেশে কী নজির রয়েছে জানতে চেয়েছেন। আমরা তাকে সাধ্যমতো জানিয়েছি। তিনি কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। এ বিষয়ে তিনি চিন্তা করবেন, ভাববেন, ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিয়ে যথাযথ (কারা) কর্তৃপক্ষকে জানাবেন। আইনে এজন্য খুব বেশি সময় দেয়া হয়নি। তাহলে তিনি কত সময় নিতে চান বলে জানতে চান সাংবাদিকরা। এর জবাবে কামারুজ্জামানের আইনজীবী বলেন, কারাবিধিতে সাত দিনের সময় দেয়া হয়েছে। তবে কারাবিধি এ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় স্মরণ করিয়ে দিলে শিশির মনির জানান, যৌক্তিক সময়ের মধ্যেই ভাবনা-চিন্তা করে সিদ্ধান্ত জানাবেন কামারুজ্জামান। এর আগে সকাল ১০টা ৫২ মিনিটে কারাগার কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন পাঁচ আইনজীবী। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলেন তার আইনজীবীরা। এ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির ছাড়াও পাঁচ সদস্যের আইনজীবী দলে ছিলেন ব্যারিস্টার এহসান সিদ্দিকী, মতিউর রহমান আকন, আসাদ উদ্দিন ও এ্যাডভোকেট মুজিবুর রহমান। বুধবার সন্ধ্যা ৬টার পর কামারুজ্জামানকে তার রিভিউ আবেদন খারিজের পূর্ণাঙ্গ রায় পড়ে শোনান কারা কর্তৃপক্ষ। সে সময় আইন অনুসারে তিনি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইবেন কি-না জানতে চাওয়া হয়। তিনি তার আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের ইচ্ছা পোষণ করে জানিয়েছিলেন, আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে এ বিষয়ে জানাবেন। তার সেই ইচ্ছা অনুসারে আইনজীবীদের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ দেয়া হয়। এরপর রাতেই সাক্ষাত করার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে সময় নির্ধারণ করে আইনজীবীদের চিঠি পাঠান কারা কর্তৃপক্ষ।
×