ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুরুতেই রহমতগঞ্জে আটকে গেল আবাহনী

প্রকাশিত: ০৪:২১, ৯ এপ্রিল ২০১৫

শুরুতেই রহমতগঞ্জে আটকে গেল আবাহনী

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘মান্যবর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ’ ফুটবলে বুধবারের খেলায় অঘটন ঘটিয়েছে ‘জায়ান্ট কিলার’ খ্যাত রহমতগঞ্জ মুসলিম ফ্রেন্ডস সোসাইটি। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত দিনের প্রথম ম্যাচে তারা গত লীগের রানার্সআপ ঢাকা আবাহনী লিমিটেডকে রুখে দেয় ২-২ গোলে ড্র করে। ইনজুরি সময়ে এবং খেলা শেষ হওয়ার ঠিক কয়েক সেকেন্ড আগে গোল করে আবাহনী শিবিরকে স্তব্ধ করে দেয় একসময়কার ‘আইলো রহমতগঞ্জ’ এবং ‘ডাইলপট্টি’ খ্যাত পুরান ঢাকার এই ক্লাবটি। প্রথমার্ধে খেলার স্কোরলাইন ছিল ০-০। এই ড্রয়ে শিরোপা প্রত্যাশী ‘আকাশী নীল’ খ্যাত আবাহনী শুরুতেই হোঁচট খেল। প্রিমিয়ার লীগে আবাহনী-রহমতগঞ্জ সর্বশেষ মুখোমুখি হয় ২০১২ লীগে। বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ৪ ফেব্রুয়ারি আবাহনী ৩-০ গোলে রহমতগঞ্জকে হারায়। ফিরতি লেগে ১১ মে আবাহনী জেতে ৪-০ গোলে। দুই মৌসুম আগে প্রিমিয়ার লীগে অবনমিত হওয়া রহমতগঞ্জ এবার বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নশিপ লীগে শিরোপা জিতে এ বছর আবারও উঠে আসে প্রিমিয়ার লীগে। ধানম-ির ঐতিহ্যবাহী ক্লাব আবাহনী গোলের জন্য এ ম্যাচে প্রচুর আক্রমণ করে রহমতগঞ্জের সীমানায়। প্রথমার্ধের পুরোটা সময় রহমতগঞ্জের সীমানায় আবাহনীর খেলোয়াড়রা বল নিয়ন্ত্রণে রেখে খেললেও গোল করতে ব্যর্থ হয়। সেক্ষেত্রে কৃতিত্ব দিতেই হবে রহমতগঞ্জের ডিফেন্ডার এবং গোলরক্ষক সামিউল ইসলাম মাসুমকে। কিন্তু দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচের গতিপথ পাল্টে যায়। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭ মিনিটে বহু প্রত্যাশিত গোলের দেখা পায় জর্জ কোটানের শিষ্যরা। এ সময় আবাহনীর হাঙ্গেরিয়ান মিডফিল্ডার গাবর ডেমজেনের থ্রো থেকে বল পেয়ে সতীর্থ সাবালোস সোরবার উদ্দেশে বাড়িয়ে দেন। সোরবা চমৎকার প্লেসিং শটে রহমতগঞ্জের বল পাঠিয়ে উল্লাসে মেতে ওঠেন (১-০)। তবে আবাহনীর এই উল্লাস মিলিয়ে যায় ৫৯ মিনিটেই। সুমন দে’র সহযোগিতায় নাইজিরিয়ান ফরোয়ার্ড গিডিওন সোলোমন গোল করে খেলায় ফেরান রহমতগঞ্জকে (১-১)। এরপর গোল পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে আবাহনী। ৭২ মিনিটে নাসিরের এ্যাসিস্ট থেকে গোল করে আবাহনীকে এগিয়ে নেন এগিয়ে নেন গাবোর ডেমজেন (২-১)। যখনই মনে হচ্ছিল ওই ব্যবধানেই জিততে যাচ্ছে আবাহনী, তখনই অঘটন। খেলা শেষ হওয়ার কয়েক সেকেন্ড আগে (ইনজুরি সময়) বদলি ফরোয়ার্ড মান্নাফ রাব্বির অসাধারণ গোলে আবারও সমতায় ফেরে রহমতগঞ্জ (২-২)। এরপর রেফারি আজাদ রহমান খেলা শেষের বাঁশি বাজালে রহমতগঞ্জের সঙ্গে ড্র করে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে মাঠ ছাড়ে আবাহনী, একরাশ হতাশা নিয়ে। ঢাকা আবাহনীর কোচ জর্জ কোটান লীগ শুরুর আগের দিন বলেছিলেন, তাদের দলটি ভাল মানের, তবে ভাল গোল স্কোরারের অভাব আছে। বুধবারের ম্যাচে অবশ্য ডিফেন্সের সমস্যাই প্রতিফলিত হয়েছে। আর দলীয় অধিনায়ক প্রাণতোষ কুমার বলেছিলেন, তার দল ফেডারেশন কাপে বেশকিছু ভুল করেছে। গোল মিস করেছে। সেই ভুলগুলো থেকে শিক্ষাগ্রহণ করে লীগে ভাল করতে চান তারা। কিন্তু প্রথম ম্যাচেই ড্র করে সে কথা রাখতে পারলেন না প্রাণতোষ। ঢাকার ফুটবলে উল্লেখযোগ্য একটি নাম রহমতগঞ্জ এমএফএস। রাজধানীর রহমতগঞ্জের এ ক্লাবটি ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। ঢাকা প্রথম বিভাগ লীগে তারা খেলা শুরু করে ১৯৬৬ সাল থেকে। নিয়মিত লীগে অংশগ্রহণ করলেও তেমন সাফল্য ধরা দেয়নি রহমতগঞ্জের কাছে। দেশে বড় ধরনের সাফল্য না পেলেও দেশের বাইরে দুটি সাফল্য আছে তাদের। ঢাকার ফুটবলে এ ক্লাবের উল্লেখ করার মতো সাফল্যও মাত্র দুটি। ১৯৭৭ সালে লীগে রানার্সআপ হয় রহমতগঞ্জ। একই বছর লিবারেশন কাপেও রানার্সআপের ট্রফি পায় তারা। এ দুই আসরেই আবাহনীর কাছে হেরে শিরোপাবঞ্চিত হয় রহমতগঞ্জ। তবে দলটি ১৯৯৪ সালে নেপালের কিংস কাপে চ্যাম্পিয়ন এবং ১৯৯৬ সালে একই টুর্নামেন্টে রানার্সআপ হয়। এর আগে ১৯৭৪ সালে ভারতের বরদুলাই ট্রফির সেমিফাইনাল পর্যন্ত খেলার কৃতিত্ব দেখায় তারা। এছাড়া ঢাকা লীগে বেশ ক’বার তৃতীয় ও চতুর্থ স্থান পায় রহমতগঞ্জ। দেশের ফুটবলে পেশাদারিত্ব আসার পর এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন পারফর্মেন্স দেখাতে পারেনি তারা। মাঝারি মান নিয়েই টিকে আছে। এবার তারা কেমন করবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
×