ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ঠাকুরগাঁওয়ে দরিদ্র কৃষকের ঘরে সচ্ছলতা

মরা নদীর বুকে বোরো চাষ

প্রকাশিত: ০৩:৫৩, ৯ এপ্রিল ২০১৫

মরা নদীর বুকে বোরো চাষ

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও, ৮ এপ্রিল ॥ ঠাকুরগাঁওয়ে মরা নদীরগুলোর বুক ভরে উঠেছে ভূমিহীন চাষীদের ফলানো ধানে। মৃতপ্রায় এসব নদ-নদীতে জেগে ওঠা বালুচরে বোরো ধান চাষ করছেন ভূমিহীন দরিদ্র কৃষকরা। এতে নদীর তীরের দরিদ্র অনেক কৃষকের ঘরে সচ্ছলতাও এসেছে। জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় ১২টি নদীর উৎসমুখ উজানের বিভিন্ন বিল। শুকনো মৌসুমে বিলে পানি না থাকায় এসব নদ-নদীতে চর পড়ে যায়। আর এ সুযোগে নদী তীরবর্তী ভূমিহীনরা নদীর চরকেই চাষাবাদের মাধ্যম হিসেবে বেছে নেয়। শুকনো মৌসুমে প্রতিবছরের ন্যায় এ বছর জেলার ছোট-বড় নদীগুলোতে বোরো ধান চাষ করেছেন সহস্রাধিক কৃষক। বর্তমানে রোপন পরবর্তী পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। নদীতে ধানের সবুজ চারা গাছ বাতাসে দোল খাচ্ছে। নদী বক্ষের বিস্তীর্ণ এলাকা ধান গাছের কাঁচা রঙে সবুজ হয়ে উঠেছে। শুধু টাঙ্গন নদীতেই নয়, জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ছোট-বড় প্রায় ১২টি নদীর চিত্র একই। শুকনো মৌসুমে উজানের বিলে পানি না থাকায় প্রতিবছর এই মৌসুমে ঠাকুরগাঁওয়ের প্রতিটি নদীই পানিশূন্য হয়ে যায়। চুয়ে আসা সামান্য পানিতেই নদীর দুই কূলের ভূমিহীনরা প্রতিবছরই চাষ করে আসছেন বোরো ধান। ভূমিহীন বোরো চাষীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, নিজস্ব জমি না থাকায় তারা চাষাবাদ করতে পারেন না। অপরদিকে সেচ দেয়া পানির চেয়ে নদীর চুয়ে আসা পানি বোরো চাষে অনেক বেশি উপকারী। এতে সার ও সেচসহ সবকিছুতেই সাশ্রয় হয় চাষীদের। ঠাকুরগাঁও জেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া ঠাকুরগাঁও টাংগন, সেনুয়া, ভুল্লী, ঢেপা, শুক, বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার অহনা, তিরনই, রানীশংকৈলের কুলিক, পীরগঞ্জের লাচ্ছি, চরনা এবং হরিপুর উপজেলার সীমান্ত দিয়ে বয়ে যাওয়া নাগর নদীতে এখন বিস্তৃীর্ণ চর। প্রায় প্রতিটি নদীর বালুচরে চাষ করা হয়েছে বোরো ধান। অধিকাংশ চাষীই গত ৮-১০ বছর থেকে জেগে ওঠা চরে বোরো ধান চাষ করছেন। নবেম্বর মাস থেকে নদীতে পানি কমে গেলে বালুচরের জায়গা নিজেদের দখলে নিয়ে বোরো চাষের উপযোগী করে তোলার জন্য কাজে নেমে পড়েন চাষীরা। মাস দুয়েক পরিশ্রম করে বেদা ও কোদাল দিয়ে বালু সরিয়ে আইল বেঁধে পানি আটক করা হয়। ডিসেম্বর-জানুয়ারিতে জমি সমান করার পর বোরো ধান রোপন করা হয়। চাষীরা জানায়, নদীতে বোরো ধান চাষে বিঘা প্রতি খরচ হয় প্রায় ২ থেকে ৩ হাজার টাকা। বিপরীতে এক বিঘা জমিতে ধান আসে ২২ থেকে ২৫ মণ। তা দিয়েই ভূমিহীন কৃষকদের কয়েক মাসের খাবারের যোগান হয়। আগাম ধান লাগানোর কারণে জ্যৈষ্ঠ মাসের প্রথম সপ্তাহে ফসল ঘরে তুলতে পারবেন বলে আশা করছেন তারা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ঠাকুরগাঁও কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আরশেদ আলী বলেন, ‘ভূমিহীন কৃষকরা সুযোগ পেলেই এসব নদীর চরে চাষাবাদ করেন। এখন তারা বোরো আবাদ করছেন। পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী প্রকাশ কৃষ্ণ সরকার বলেন, ‘জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত নদ-নদী ড্রেজিং করে বাঁধ ও পানি প্রবাহের ব্যবস্থা করা হবে। সেই সঙ্গে পানির সঠিক ব্যবস্থাপনা ও রক্ষণাবেক্ষণে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়ে কৃষিক্ষেত্রে সেচ সুবিধা অব্যাহত রাখা সম্ভব।
×