ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশ রায়

জঙ্গীকে স্পেস দেয়ার কোন সুযোগ নেই

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ৯ এপ্রিল ২০১৫

জঙ্গীকে স্পেস দেয়ার কোন সুযোগ নেই

আমাদের অনেক সমস্যা। তবে সব থেকে বড় সমস্যা স্বভাবের। কথাটি আমার নিজের নয়। যার কাছ থেকে জেনেছিলাম তিনি আমাকে পৃথিবীতে নিয়ে এসেছিলেন। এই স্বভাবের সমস্যার কারণে দেখি যে কারণে তিরস্কার শোনার কথা নয়, সে কারণেও শুনতে হয়। মাঝে মাঝে তিরস্কার পাই অনেক পাঠকের কাছ থেকে। তারা শেখ হাসিনার দালাল বলে। আবার গত তিন দশকের বেশি কলাম লিখে আওয়ামী লীগের লোকদের কাছ থেকেও যে কম তিরস্কার পেয়েছি তাও নয়। যেহেতু খুব ছোটবেলায় জেনেছিলাম, আমাদের স্বভাবে সমস্যা আছে। তাই এ নিয়ে কোন কষ্ট পাই না। কিন্তু যখন কেউ প্রশংসা পাওয়ার যোগ্য হন, তখন যদি তাকে প্রশংসা না করা হয়, সেটা যে কতটা নিচুতা, তা কিন্তু আমরা ভাবি না। বহু কারণে পশ্চিমারা আমাদের থেকে এগিয়ে গেছে। তাদের স্বভাবে পরিশ্রম আছে, শ্রদ্ধাবোধ আছে, নিয়মতান্ত্রিকতা আছে; পড়ে পাওয়া চৌদ্দ আনা থেকে তারা বরং অর্জনকে ভালবাসেÑ এমনি অনেক সদগুণ তাদের চরিত্রে আছে। এ সব সদগুণের কারণেই তারা এগিয়ে গেছে। তবে কেন যেন আমার মনে হয়, তারা যে অপরকে এবং ভালকে প্রশংসা করতে পারে এই সদগুণটিই তাদের বেশি এগিয়ে নিচ্ছে। অন্যদিকে আমাদের দেশে ভালকে প্রশংসা করলেই তার ভেতর স্বার্থ খোঁজা হয়, যাকে প্রশংসা করা হয় তাঁর দালাল বলা হয়। কিন্তু এসব কাঁটার তিলক মাথায় নিয়েও কোন কোন কাজ বা কথাকে যদি প্রশংসা না করা হয়, তাহলে সেখানে নিজের ক্ষুদ্রতা প্রকাশ পায়, দীনতা প্রকাশ পায়। তিন মাস ধরে খালেদা কী করেছে এই বাংলাদেশে! কত ঘরে ঘরে কান্না। এই লেখা যখন লিখছি তখন চোখের সামনে একটি দৈনিক পত্রিকার ছবি, পেট্রোলবোমায় পুড়ে যাওয়া সন্তানকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়ে গেছে। আর পিতা মাথাগুঁজে পড়ে আছে তার বিছানায়। খুবই সস্তা বিছানা। একেবারে দেশের অতি সাধারণ একজন নাগরিক তিনি। আমিও পিতা, প্রতিদিন সন্তানের মাথায় চুমু খাই। সন্তানের হাগ আমাকে রোমাঞ্চিত করে। তাই ওই মাথাগুঁজে থাকা পিতার ছবি দেখে একজন বাবা হিসেবে কীভাবে চোখের জল ধরে রাখি বলুন? আমি তো অতি সামান্য মানুষ, কেউ কি পারে এ দৃশ্য দেখার পর চোখের জল ধরে রাখতে। খালেদার এই কীর্তি(!) এখন দেশ বয়ে বেড়াচ্ছে। সাধারণ মানুষ বয়ে বেড়াচ্ছে। খালেদার এই জঙ্গী তৎপরতার শুরুতে এই কলামে লিখেছিলাম, মুক্তিযুদ্ধের জন্য যদি দেশকে নয় মাস কষ্ট করতে হয়, ত্যাগ করতে হয় অনেক কিছু- তাহলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীদের বিরুদ্ধে এ সংগ্রামে অন্তত তিন থেকে চার মাস কষ্ট করতে হবে। ত্যাগ করতে হবে দেশের মানুষকে। নেতা হিসেবে শেখ হাসিনা এখন অনেক বড়। তাই আমরা তিন থেকে চার মাস সময় লাগবে হিসাব করেছিলাম, উনি তিন মাসে সে যুদ্ধের একটা পর্যায়ে জয়ী হয়েছেন। পরাজিত খালেদা, রাতের তস্করের মতো নিঃশব্দে নিজ বাসায় ফিরে গেছেন। কিন্তু এ বিজয়ের পরে শেখ হাসিনা যে কথা বলেছেন, তাতে তাঁকে প্রশংসা না করলে নিজের দীনতাই প্রকাশ পাবে। শেখ হাসিনা কিন্তু এ বিজয় যে তাঁর বা তাঁর দলের এমনকি তাঁর সরকারের তাও বলেননি। তিনি বলেছেন, এ বিজয় দেশের জনগণের ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার। এরপর এ নিয়ে আর ব্যাখ্যার কোন প্রয়োজন নেই। আসলে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে জয়ী করার জন্য দেশের সাধারণ মানুষ আবারও একাত্তরের মতো জীবন দিয়েছে। মাতা, পিতা, শিশুসন্তান এমনকি গর্ভের ভ্রূণ আগুনে পুড়ে চিহ্নিত করেছে বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির নেতা কে। অন্যদিকে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী শক্তির নেতাকে পরাজিত করার পর শেখ হাসিনা বিজয়ের সকল কৃতিত্ব জনগণকে ও জীবন উৎসর্গকারীদের দিয়েছেন। এর ফলে তিনি শুধু জনগণ ও আত্ম-উৎসর্গকারীদের সম্মানিতই করেননি, প্রমাণ করেছেন তিনি নেতা। শেখ হাসিনার এ বক্তব্যের পর তাঁর প্রতি সব আস্থা রাখা ছাড়া তাঁকে কোন কিছু বলার থাকে না। তবে তারপরও বলতে হয়, আপনি তাদের পরিবারকে আর্থিক সহায়তা দিয়েছেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনার এ বিজয়ের সকল কৃতিত্ব এ সাধারণ মানুষকে দিয়েছেন। এরপরও দেশের মানুষ ও তাদের নেতা হিসেবেও আরেকটুখানি আপনি ভেবে দেখতে পারেন। ভেবে দেখতে পারেন এদের একটি রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেয়ার বিষয়। কারণ যারা জীবন দিয়ে দেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে রক্ষা করল তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি না দিলে ইতিহাসে আমরা ছোট হয়ে যাব। অবশ্য এ নিয়ে আমাদের মিডিয়ায়, আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীদের কাছে শেখ হাসিনা অনেক সমালোচিত হতে পারেন। কারণ আমরা যারা মিডিয়ায় আছি আর অধিকাংশ বুদ্ধিজীবীর চরিত্র দেখে মনে হয়, ‘বেহায়া’ শব্দটি আমাদের জন্যই সৃষ্টি হয়েছিল। সৈয়দ মুজতবা আলী বা সুনীতি চট্টোপাধ্যায়ের মতো বহু ভাষায় জ্ঞান থাকলে হয়ত মিলিয়ে দেখতে পারতাম অন্যান্য ভাষায় বেহায়ার সমার্থক যে শব্দটি আছে তা আসলে বেহায়া শব্দ যা প্রকাশ করে ততটা করে কিনা? কারণ মনে হয় না আমাদের চরিত্রে যে বেহায়াপনা আছে এমনটি পৃথিবীর অন্য কোন জনগোষ্ঠীর চরিত্রে তা আছে। তাই বেহায়ার মতো এতটা প্রকাশের কোন শব্দ অন্য ভাষায় প্রয়োজন পড়ে। আমরা কতটা বেহায়া তা একটু তাকিয়ে দেখলে বোঝা যায়, পরাজিত হয়ে নিজেকে রক্ষা করার জন্য এবং আবার শক্তি সঞ্চয় করে দেশের বিরুদ্ধে আবার আঘাত হানার জন্য অনেকটা পালিয়ে নিজের বাসায় গেলেন খালেদা। আমাদের কিছু কিছু পত্রিকা লিখল- সরকারের সঙ্গে একটি সমঝোতার ভেতর দিয়ে গেছে। তারপরই নানান বুদ্ধিজীবীর মতামত- এখন আর তার বিরুদ্ধে কোন কিছু না করে তাকে স্বচ্ছন্দে তার কাজ করতে দেয়া উচিত। এমনকি সরকারের ভেতরও যারা গোলাম আযমপন্থী আছে তারা বেহায়ার মতো বলল, ‘আমরা তাকে একটা স্পেস দিয়েছি।’ কিন্তু এদের সবার জবাব দিয়ে দিলেন শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের নগর নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে। তিনি বললেন, বড় মানুষদের তিনি চেনেন। ভাল করেই চেনেন। তাই তিনি বিশ্বাস রাখেন দেশের সাধারণ মানুষের ওপর। তারাই খালেদাকে পরাজিত করেছে। সেই মানুষেরাই বিজয়ী হয়েছে। বিজয়ী হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। যারা এ সরকারের সঙ্গে খালেদার সমঝোতার কথা বলছেন, তাকে স্পেস দেয়ার কথা বলছেন, শেখ হাসিনা ঠিকই তাই তাদের মুখের ওপর জানিয়ে দিলেন তাঁর সত্যটি। এ কারণেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বের ওপর শতভাগ আস্থা রাখা যায়। জনগণকে এখন সে আস্থাই রাখতে হবে। সতর্কভাবে খেয়াল রাখতে হবে শেখ হাসিনা কোন্্ পথে এগোচ্ছেন। যেদিন খালেদা বাসায় গেছেন তার পরদিনই শেখ হাসিনা দেশের প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সারাদেশে আরও সজাগ থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কারণ জঙ্গীরা যখন খুব বেশিদূর পিছিয়ে যায় তখনই ধরে নিতে হয় তারা এতটা পেছন দিকে রান করল মূলত বড় ধরনের আরেকটা হিট করার জন্য। এটাই সব জঙ্গীদের কৌশল। বুদ্ধিজীবীর খোলসে এমাজউদ্দীন আহমদসহ কিছু চিহ্নিতরাও মাঠে নেমেছেন। তাঁদের সঙ্গে মিডিয়ার একটি অংশ আর কয়েক শক্তিশালী সম্পাদকও আছেন। তারা নতুন কৌশল নিয়েছে শক্তি সঞ্চয় করার। এ মুহূর্তে বড় আঘাত হানার আগে তারা আপাতত তাদের গায়ের জঙ্গী লেবাসটি একটু মুছে ফেলতে চায়। যে কারণে তারা সিটি নির্বাচনকে ব্যবহার করছে। তারা যেমন সিটি নির্বাচনকে ব্যবহার করছে তেমনি তারা বিদেশীদেরও আবার ভিন্নভাবে বোঝানোর চেষ্টা করছে। গত কয়েকদিনের খবর হলো, বিএনপির অনেক বুদ্ধিজীবী, তাদের প্রতিনিধি ও রাজনীতিক এখন দিল্লীতে। সেখানে তারা নানানভাবে ভারত সরকারের কাছে, তাদের থিঙ্ক ট্যাঙ্কদের কাছে বিএনপিকে নতুনভাবে সেল করতে চাচ্ছে। এ কারণে দেশের জনগণের এখন সজাগ থাকা অনেক বেশি প্রয়োজন। কোনমতেই যেন বিএনপি-জামায়াত কোন রাজনৈতিক স্পেস না পায় সেটা জনগণকেই নিশ্চিত করতে হবে। কারণ বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে হলে জঙ্গী ও জঙ্গীনেত্রী খালেদাকে নিঃশেষ করেই এগোতে হবে। বাংলাদেশে অনেক রাজনৈতিক দল থাকবে, অনেক মতাদর্শ থাকবে; কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাইরে নয় এবং জঙ্গী নয়। এর পাশাপাশি ভবিষ্যত মিডিয়া নিয়েও দেশের জনগণকে ভাবতে হবে। মতপ্রকাশের নামে স্বেচ্ছাচারিতা, জঙ্গীবাদ, অর্থনীতি ধ্বংসকে উস্কে দেয়া মিডিয়ার কাজ নয়। মিডিয়ার স্বাধীনতা মানে এ নয়। যে দেশে দারিদ্র্য আছে, অশিক্ষা আছে, মৌলবাদ আছে সেখানে মিডিয়া কীভাবে চলবে সেটাও জনগণকে নিশ্চিত করতে হবে। ব্রিটেন, আমেরিকা, ভারত, জাপান কোন দেশের মিডিয়া কিন্তু বাংলাদেশের মতো এমন দেশবিরোধী জঙ্গী শক্তির মতপ্রকাশ করার সুযোগ পায় না। আর সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, চীন যারা দ্রুত উন্নত হয়েছে তাদের কথা তো ভিন্ন। জাতি হিসেবে তারা অনেক বেশি রেজিমেন্টাল, তাই তাদের পক্ষে অমনভাবে সম্ভব হয়েছে। আমরা আর্গুমেনটেটিভ। তাই বলে জঙ্গীর পক্ষে আর্গুমেন্ট করার জন্য শহীদের রক্তে কেনা বাংলাদেশে মিডিয়া ব্যবহার হতে পারে না। [email protected]
×