ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখীর ছোবল

প্রকাশিত: ০৪:১২, ৮ এপ্রিল ২০১৫

কালবৈশাখীর ছোবল

কালবৈশাখী ও শীলাবৃষ্টিতে বগুড়া, যশোর ও কুষ্টিয়াসহ সাত জেলায় ৩৯ জন মারা গেছে। আহত হয়েছে কয়েকশ’ মানুষ। ঝড়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে শত শত বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে ফসলের। শনিবার মৌসুমের প্রথম কালবৈশাখীতে ল-ভ- হয়ে পড়ে বগুড়ার বিভিন্ন এলাকা। কেবল বগুড়াতেই ঝড়ে মারা গেছে ১৮ জন। বিদ্যুত সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয় বিভিন্ন এলাকা। ঝড়ে রাজধানী ঢাকাতে শতাধিক বিলবোর্ড, তোরণ ও গাছের ডাল ভেঙ্গে পড়ে। বৃষ্টি ও কালবৈশাখীর কবলে পড়ে অফিস শেষে ঘরে ফেরা মানুষজন ভোগান্তির মুখে পড়েন। যানবাহনের অভাবে অনেক স্থানে মানুষজন আটকা পড়েন। ঘণ্টার পর ঘণ্টা তাদের বিভিন্ন দোকানপাট ও ভবনের নিচে অপেক্ষা করতে হয়। ঝড়ের শুরু থেকেই বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে নগরীর পুরো এলাকা। বৈশাখ এক আবহমান ধারা। প্রাকৃতিক নিয়মেই কালবৈশাখী এই সময়টায় হানা দেয়। এ সময় ভারী বৃষ্টি স্বাভাবিক, কখনও দুর্যোগ-দুর্বিপাকের মাত্রা কম, কখনও বা বেশি হয়ে থাকে। ফিবছরই আমরা একই ধরনের চেনা-জানা সমস্যাগুলো মোকাবেলা করে থাকি। একই ধরনের কষ্ট সহ্য করতে হয়; কিন্তু শুরুতে কষ্ট লাঘবে বা কষ্টভাগ কমাতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কোন উদ্যোগ আমাদের চোখে পড়ে না। বিশ্বের অনেক দেশই খেয়ালি প্রকৃতির ক্ষতি মোকাবেলা করে সুফল পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের সে ব্যাপারে তেমন কোন উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। এখানে মানুষ প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলা করে তার নিজের অভিজ্ঞতায়। গত কয়েকদিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখী নতুন কোন অভিজ্ঞতা দেয়নি। একই দৃশ্য, একইভাবে মানুষের দুর্ভোগ, একই ক্ষয়ক্ষতি। আসলে এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলা ঠিক নয়। ড্রেনে পানি জমে যায়, জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করেÑ এটা কি প্রকৃতির দায়? বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে পড়ে, তার ছিড়ে যায়, সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়Ñ এটা মাঝে-মধ্যে দুর্ঘটনা হতে পারে, নিত্য ঘটনা হতে পারে না। আবহাওয়া অফিস বছরে হয়তো দু-একবার পূর্বাভাস দিতে ব্যর্থ হতে পারে, সব সময় পেছনে পড়ে থাকবে কেন! নদীতে নৌডুবি ও সাগরে ট্রলার ডুবে মাঝিমাল্লা ও যাত্রীরা বেঘোরে প্রাণ দেবে কেন! বিলবোর্ড টেকসই করার কি কোন প্রযুক্তি নেই, যা আমরা কাজে লাগাতে পারি? সবচেয়ে বিস্ময়কর, এমন অবস্থায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের জরুরীভিত্তিতে ত্রাণ পৌঁছানোর উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় না। এবারের ঝড়ে শত শত মানুষ এখনও গৃহহীন হয়ে খোলা আকাশের নিচে। তাদের জন্য অনতিবিলম্বে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন। ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে নিরাপদ আশ্রয়ে নিয়ে যাওয়া দরকার। খাবার ও পানীয় পৌঁছানোর জন্য মাঠ পর্যায়ে সরকারী উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। ঝড়ের কবলে পড়ে যেসব কৃষকের ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তাদের অবিলম্বে সহযোগিতার কথা ভাবা দরকার।
×