স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে আইন থাকলেও তার প্রয়োগ নেই। এত দিন সাধারণ মানুষ এসব সমালোচনা করলেও এখন খোদ স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম নিজেই তা স্বীকার করেছেন। সোমবার বিকেলে নিজ মন্ত্রণালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারের মাঠ পর্যায়ে নিয়োগপ্রাপ্তরা কেউ কোন কাজ করে না। বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সারাবিশ্বের মতো দেশেও নানা আনুষ্ঠানিকতায় আজ ৬ এপ্রিল দিবসটি পালিত হচ্ছে। এবার স্বাস্থ্য দিবসের প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘নিরাপদ পুষ্টিকর খাবার-সুস্থ জীবনের অঙ্গীকার।’ দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি ভেজাল খাবার পরিহার ও মানসম্পন্ন খাবার গ্রহণ করার জন্য সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবসের বাণীতে বলেন, সুস্বাস্থ্য মানুষের অমূল্য সম্পদ। অর্থ, বিত্ত, বৈভব নয়; মূলত সুস্বাস্থ্যই পারে মানুষকে প্রকৃত সুখী করতে। সরকার জনস্বাস্থ্যের উন্নয়নে চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধি, শিক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা, স্যানিটেশন ব্যবস্থার উন্নয়নসহ ব্যাপক কর্মকা- বাস্তবায়ন করছে। দেশের প্রান্তিক মানুষের কাছেও আজ এর সুফল পৌঁছে গেছে। ফলে রোগ-ব্যাধির প্রকোপ কমেছে, মা ও শিশুমৃত্যু উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পেয়েছে, বেড়েছে মানুষের গড় আয়ু। এ সাফল্য ধরে রাখার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি জটিল রোগের হাত থেকে রক্ষায় নিরাপদ ও পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবারের গুরুত্ব অপরিসীম। এ জন্য নিরাপদ ও পুষ্টিকর খাদ্য সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করা খুবই জরুরী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাণীতে বলেন, জনসাধারণের মধ্যে খাদ্য গ্রহণজনিত রোগ-ব্যাধির প্রকোপ কমাতে অনিরাপদ খাদ্য গ্রহণ হ্রাসের কোন বিকল্প নেই। খাদ্য উৎপাদন, বিপণন, সংরক্ষণ, প্রস্তুতকরণ ও গ্রহণের যে কোন পর্যায়ে খাদ্য অনিরাপদ হতে পারে। এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে সকল স্তরের খাদ্য উৎপাদনকারী, বিপণনকারী, ভোক্তা, আইন বাস্তবায়নকারী সংস্থাসহ সকলের ব্যাপক সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। জনগণের সার্বিক স্বাস্থ্যের মানোন্নয়নে অঙ্গীকারাবদ্ধ। খাদ্য নিরাপত্তা ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণের ওপর গুরুত্বারোপ ও নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধিতে আমরা দেশব্যাপী নানামুখী কর্মসূচী বাস্তবায়ন করছি। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ প্রণয়ন করা হয়েছে। খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ গঠন করা হয়েছে। গ্রাম পর্যায়ে সাধারণ মানুষের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে কমিউনিটি ক্লিনিক সাফল্যের সঙ্গে কাজ করছে, যা ইতোমধ্যে বিশ্ববাসীর নজর কেড়েছে। উপজেলা ও জেলা হাসপাতালের শয্যাসংখ্যা বৃদ্ধি করেছি। দেশে বিশেষায়িত হাসপাতাল ও বিশেষায়িত চিকিৎসাসেবা বহুগুণে বৃদ্ধি করা হয়েছে। নতুন নতুন মেডিক্যাল কলেজ স্থাপন করা হয়েছে। আমাদের নেয়া এ সকল পদক্ষেপের সুফল এখন জনগণ পাচ্ছেন। স্বাস্থ্য খাতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ জাতিসংঘসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা আমাদের পুরস্কৃত করেছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য দিবস উদ্যাপনের মধ্য দিয়ে দেশের সকল দায়িত্বশীল মানুষ, সাধারণ ভোক্তা, বিপণনকারী ও প্রস্তুতকারীসহ সকলের মাঝে নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে ব্যাপক সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে- এটাই আমার প্রত্যাশা।
এদিকে মন্ত্রী সংবাদ সম্মেলনে বলেন, নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে মাঠ পর্যায়ের লোকজনকে বেতন ভাতা দেয়া হলেও তারা কোন কাজ করে না। এ জন্য সিভিল সার্জনকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যেন এরা কাজ করে। তদারকির দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন না করলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে দেশের ব্যবসায়ীরা মুনাফা গ্রহণের মাত্রা কিছুটা কমালে সাধারণ মানুষ নিরাপদ খাদ্য পেতে পারেন বলে মনে করেন তিনি। নিরাপদ খাদ্যর বিষয়ে সকলকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন।
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশে বর্তমানে অসংক্রামক রোগের বিস্তার তুলনামূলকভাবে কিছুটা বেড়েছে। এর মধ্যে অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, ক্যান্সার, কিডনি সমস্যা অন্যতম।