ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উখিয়ায় রহস্যময় স্থাপনা

প্রকাশিত: ০৪:২৪, ৭ এপ্রিল ২০১৫

উখিয়ায় রহস্যময় স্থাপনা

দেশের দুর্গম অঞ্চলগুলোকে মূলত জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের গোপন তৎপরতার কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। সাম্প্রতিক সময়ে চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বেশ কয়েকটি জঙ্গী আস্তানা ও প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের সন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্রসহ প্রশিক্ষণ সরঞ্জাম। গ্রেফতার করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট কয়েকজন জঙ্গীকেও। মূলত ভারত-বার্মা সীমান্তবর্তী পাহাড়ী এলাকা এবং সমুদ্র উপকূলের ভৌগোলিক সুবিধাকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গীরা তাদের আস্তানাগুলো গড়ে তুলছে। গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকটি ঘটনা প্রমাণ করে জঙ্গী প্রশিক্ষণ ও অর্থায়নের একটি ব্যাপক নেটওয়ার্ক গড়ে উঠেছে এ অঞ্চলে। যার অনেকগুলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে এখনও অধরা। কিছু কওমী মাদ্রাসা, বার্মা থেকে আসা কিছু রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন শিবিরের ছত্রছায়ায় কক্সবাজারের বেশিরভাগ অঞ্চলে এ জঙ্গী সংগঠনগুলো বিভিন্ন নামে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। রবিবার সহযোগী একটি দৈনিকে প্রকাশিত খবরে জানা গেছে, কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার কুতুপালং রোহিঙ্গা শিবিরের পাশে পাহাড়ী বনভূমিতে গড়ে উঠেছে কিছু রহস্যময় স্থাপনা। প্রায় ১০ একর বনভূমিতে রাতারাতি গড়ে ওঠা এ স্থাপনাগুলোর মধ্যে রয়েছে ৪০টি সেমিপাকা ঘর, মসজিদ ও হাসপাতাল। কে বা কারা কী উদ্দেশ্যে এসব স্থাপনা নির্মাণ করেছে, তা নিয়ে রয়েছে নানা বিস্ময় ও শঙ্কা। গহীন এই পাহাড়ে এত নির্মাণসামগ্রী এনে বন বিভাগসহ প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে কিভাবে স্থাপনাগুলো গড়ে তোলা হলো সে প্রশ্ন এলাকাবাসীরও। শুধু তাই নয়, নির্মাণকাজ চলছিল সশস্ত্র পাহারায়। সন্দেহ করা হচ্ছে, এটা কোন জঙ্গীগোষ্ঠীর কাজ কিনা। আড়ালে সশস্ত্র প্রশিক্ষণ শিবির গড়াই তাদের উদ্দেশ্য কিনা। জানা গেছে, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুনধুম পয়েন্ট থেকে ছয়-সাত কিলোমিটার দূরে মাছকারিয়া বনভূমিতে গাছ কেটে এসব স্থাপনা করা হচ্ছে। কাছেই রয়েছে রোহিঙ্গাদের নিবন্ধিত ও অনিবন্ধিত দুটি আশ্রয় শিবির। রহস্যময় স্থাপনাগুলো জঙ্গী অর্থায়নেই গড়ে তোলা হচ্ছে- দাবি এলাকাবাসীর। তাদের ধারণা এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে কোন এনজিও বা জঙ্গী অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান, যাদের নামে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে। উল্লেখ্য, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে নিয়ে আসা এবং এখানে জঙ্গী কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করার জন্য দীর্ঘদিন ধরে মুসলিম এইডসহ মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক কিছু এনজিওর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। এলাকাটিতে দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গা জঙ্গী সংগঠন রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) লোকজনের যাতায়াত রয়েছে। আরএসওর সঙ্গে যোগাযোগ আছে মধ্যপ্রাচ্য ও মধ্য এশিয়ার এনজিওভিত্তিক কয়েকটি জঙ্গী সংগঠনের। এখানে বিভিন্ন সময় রোহিঙ্গাদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণের পর বান্দরবানের কুলাচি, দুছড়ি এবং মিয়ানমার সীমান্তবর্তী আরএসওর সামরিক ট্রেনিং ক্যাম্পে নিয়ে প্রশিক্ষণ দেয়ার কথা শোনা যায়। তাই এরহস্যময় স্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা আরও ঘনীভূত হচ্ছে। বন বিভাগ বা প্রশাসনের অগোচরে এ রকম অবকাঠামো নির্মাণ সত্যিই উদ্বিগ্ন হওয়ার মতোই। গত তিন সপ্তাহ ধরে সশস্ত্র পাহারায় এ কাজ চলল, কেউ দেখল না। প্রশাসন তাহলে করেটা কী? বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। দেখতে হবে যাদের দেখার দায়িত্ব ছিল তারা সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করেছে কিনা? নাকি শস্যের ভেতরই ভূত লুকিয়ে আছে। কারণ, এটা কেবল সীমান্ত এলাকাই নয়- ব্যাপক রোহিঙ্গা শরণার্থীর অবস্থানও সেখানে রয়েছে। মনে রাখা দরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিরবচ্ছিন্ন অভিযানের পরও দেশে জঙ্গী তৎপরতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। এখনও দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী আস্তানা উদ্ধারসহ জঙ্গী সদস্যরা ধরা পড়ছে। তাই জঙ্গী দমনে প্রশাসনের কঠোরতা অবলম্বনের বিকল্প নেই।
×