ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকায় ৩৭৬ কিমি পানির লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ৬ এপ্রিল ২০১৫

ঢাকায় ৩৭৬ কিমি পানির লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণ হচ্ছে

ফিরোজ মান্না ॥ ঢাকা ওয়াসা নগরীতে পানির গুণগত মান বাড়াতে নতুন করে পাইপ লাইন স্থাপনের জন্য প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের আর্থিক সহযোগিতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। এর বাইরে ওয়াসা নগরীর বস্তিবাসীদের বৈধ পানির সংযোগ ও স্যুয়ারেজ সেবা দেয়ার প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। এই প্রকল্পের আওতায় কড়াইল বস্তিতে পানির বৈধ সংযোগ দেয়া হয়েছে। ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, নগরীর ফকিরাপুল, মালিবাগ, মগবাজার, মৌচাক, রামপুরাসহ আরও কয়েকটি এলাকায ৩৭৬ কিলোমিটার পানির লাইন পুনর্বাসন ও সম্প্রসারণের কাজ আগামী মাস থেকে শুরু করতে যাচ্ছে। এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক সহায়তায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে সাড়ে তিন বছর সময় লাগবে। ষোলোটি ডিএমএ’র (ডিস্ট্রিক্ট মিটারিং এরিয়া) আওতায় প্রকল্পে নতুন লাইন স্থাপনের মাধ্যমে পানির গুণগত মান নিশ্চিত করা সম্ভব হবে। একই সঙ্গে ঢাকা ওয়াসার সিস্টেম লসও অনেকাংশে কমে যাবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের জন্য ইতোমধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। কোরিয়ার কুনহুয়া ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড কনসালটিং কোম্পানি লিমিটেড নামের এই কোম্পানি পরামর্শক হিসেবে কাজ করবে। ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী তাকসিম এ খান বলেন, কয়েক বছরে ঢাকা ওয়াসা তার কার্যক্রম এবং পানি সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এনেছে। ওয়াসা একটি টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও গণমুখী পানি সরবরাহ ব্যবস্থাপনার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। বর্তমান সরকারের আমলে ঢাকা ওয়াসার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রাজধানীতে পানির কোন সঙ্কট নেই বললেই চলে। ওয়াসার বিভিন্ন প্রকল্পে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সঙ্গে কোরিয়ার অবদান অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলেও তিনি উল্লেখ করেন। ওয়াসার কার্যক্রমে কোরিয়া অব্যাহত সহযোগিতা দিয়ে আসছে। এই প্রকল্পে কোরীয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠানটির কাছ থেকে সর্বোচ্চ সেবা পাওয়া যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি। ঢাকা ওয়াসা বর্তমানে নগরীতে দৈনিক ২৩০ কোটি লিটার পানির চাহিদার বিপরীতে দৈনিক ২৪২ কোটি লিটার পানি উৎপাদন ও সরবরাহের সক্ষমতা অর্জন করেছে। এদিকে, ওয়াসার আরেকটি প্রকল্পে নগরীর বস্তিবাসীদের বৈধ পানির সংযোগ ও স্যুয়ারেজ সেবা দেয়ার কাজ চলছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতোমধ্যে কড়াইল বস্তিতে ৪৫৬ বৈধ পানি সংযোগের মাধ্যমে ১৫ হাজার ৬৪০ পরিবারকে সেবা দেয়া হচ্ছে। আরও ৩শ’ বস্তিতে ৯৭৭ সংযোগের মাধ্যমে মোট ৬৩ হাজার ৬১৮ পরিবারকে পানি সরবরাহ সেবা দেয়ার কাজ চলছে। পানি সংযোগ দেয়ার পরেই স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করা হবে। ঢাকা ওয়াসা এবং ওয়াটার এ্যান্ড স্যানিটেশন ফর দ্য আরবান পওর নামের (ডব্লিউএসইউপি) একটি সংস্থা যৌথভাবে কাজ করছে। ডব্লিউএসইউপি ওয়সার সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর প্রায় ৯ মাস চলে গেছে। এখন পর্যন্ত ঢাকার সব বস্তিবাসীর জন্য পানির বৈধ সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি। তবে এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর সব বস্তিতে পানি ও স্যুয়ারেজ সেবা দেয়া হবে। ঢাকা ওয়াসা ও ডব্লিউএসইউপি বস্তিবাসীদের নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে। গত বছরের মার্চে নেদারল্যান্ডের ডব্লিউএসইউপি ও ঢাকা ওয়াসা যৌথভাবে কাজ শুরু করে। ঢাকার বস্তিগুলোতে ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ সেবা উন্নয়ন এবং রাজস্ব আয়ের দিকেও বিশেষ লক্ষ্য রাখা হযেছে। ওয়াসা জানিয়েছে, ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে রাজধানীর সকল বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ প্রদানের লক্ষ্যে ঢাকা ওয়াসা অঙ্গীকারাবদ্ধ। ডব্লিউএসইউপি’র সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর বস্তিবাসীদের জন্য ঢাকা ওয়াসার সেবা দেয়ার ক্ষেত্রে বিশেষ অগ্রগতি হবে। তাদের সহযোগিতায় প্রকল্পের কাজ অনেকটা সহজ হবে। দীর্ঘদিন ধরে আমরা রাজধানীর বস্তিবাসীর জন্য পানি ও স্যুয়ারেজ সেবা দেয়ার জন্য কাজ করে যাচ্ছি। ডব্লিউএসইউপি সহযোগিতার হাত বাড়ানোর আগেই কয়েকটি বস্তিতে বৈধ পানির সংযোগ ও স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের কাজ শুরু করেছি। কড়াইল বস্তিতে ৪৫৬ বৈধ পানির সংযোগ স্থাপন করতে পেরেছি। এখন সেখানে স্যুয়ারেজ লাইন স্থাপনের জন্য কাজ শুরু করা হবে। আগে এ সব বস্তিতে পানির সংযোগ ছিল অবৈধ। সংযোগগুলো বৈধ হওয়ায় সরকারের রাজস্বও আসছে। নিম্নœ আয়ের জনগোষ্ঠীকে বৈধ পানি সরবরাহ সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে সহায়তার জন্য উন্নয়ন সহযোগী প্রতিষ্ঠানসহ স্থানীয় বিভিন্ন এনজিওকেও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ওয়াসার এমডি। বস্তিবাসীদের জন্য ঢাকা ওয়াসা যে উপায়ে কাজ করে যাচ্ছে তা তৃতীয় বিশ্বের জন্য একটি ‘রোল মডেল’ বলে তিনি উল্লেখ করেন। অন্যদিকে, ঢাকা শহরকে শত ভাগ স্যুয়ারেজ কাভারেজের আওতায় আনার জন্য ওয়াসা ঢাকা শহরের একটি স্যুয়ারেজ মাস্টার প্ল্যান তৈরি করেছে। প্রস্তাবিত এই মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়নের সময়সীমা ধরা হয়েছে ২০৩৫ সাল পর্যন্ত। এই সময়ের মধ্যে মাস্টার প্ল্যানটি পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে। মাস্টার প্ল্যান বাস্তবায়ন হলে ঢাকা মহানগরী আধুনিক নগরীতে পরিণত হবে। বর্তমানে নগরীর মাত্র ৩০ ভাগ এলাকা স্যুয়ারেজ কাভারেজে রয়েছে। মাস্টার প্ল্যানের আওতায় ঢাকা ওয়াসা সার্ভিস এরিয়া প্রায় ৪শ’ বর্গ কিলোমিটারসহ রাজউকের ঢাকা মেট্রোপলিটন ডেভেলপমেন্ট প্ল্যানের (ডিএমডিপি) মোট এক হাজার ৪২৪ বর্গকি.মি. এলাকাকে স্যুয়ারেজ নেটওয়ার্কের আওতায় আনার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এই মহাপরিকল্পনা ২০৩৫ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করা হবে।
×