ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আগামী বাজেট হবে ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি ॥ অর্থমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৬ এপ্রিল ২০১৫

আগামী বাজেট  হবে ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি ॥  অর্থমন্ত্রী

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক ॥ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরের বাজেট হবে ৩ লাখ কোটি টাকার কাছাকাছি। তবে এখনও কত টাকা হবে সেটি নির্ধারণ হয়নি। অন্যদিকে ৬ শতাংশ প্রবৃদ্ধির গ-ি থেকে বেরিয়ে আসার তাগিদ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা। রবিবার অর্থনীতিবিদ ও বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ তথ্য জানান। রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, আগামী বাজেটে কালো টাকা বিনিয়োগে বিশেষ কোন সুযোগ দেয়া হবে না। এখন যেভাবে আছে সেভাবেই থাকবে। তিনি বলেন, সরকারী যেসব প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের অর্থ সরকারী কোষাগারে জমা না দিয়ে চেয়ারম্যানরা নিজস¦ এ্যাকাউন্টে জমা রাখবেন তাদের জেল জরিমানা হওয়া উচিত। তিনি জানান, রেলওয়ে খাতে গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। প্রাক-বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কেএএস মুর্শীদ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান, অর্থনীতিবিদ ড. বিনায়ক সেন, বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি ড. আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক জামাল উদ্দিন আহমেদ, অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর এবং বিআইডিএস-এর নাজনীন আখতার প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ডিসেম্বরে দেশের অর্থনীতির যে অবস্থা ছিল এতে আশাবাদী ছিলাম ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে। কিন্তু গত তিন মাস ধরে যে ঝামেলা চলছে এতে লক্ষ্য পূরণ নিয়ে সংশয় আছে। ড. বিনায়ক সেন বলেন, মিলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল (এমডিজি) অর্জন এবং অবস্থা সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন বাজেটে থাকতে পারে। এমডিজির পর এসডিজির বিষয়েও নির্দেশনা থাকতে হবে। ২০২১ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্য শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে। তিনি আরও বলেন, রেল ও শহরাঞ্চলে চলাচলকারী পাবলিক বাস উন্নত করতে হবে। প্রয়োজনে ডাবল ডেকার বাসের সংখ্যা বাড়াতে হবে। সোনালী ব্যাংক সরকারী খাতে রেখে বাকি ব্যাংকগুলো বেসরকারী খাতে ছেড়ে দেয়ারও প্রস্তাব করেন এ অর্থনীতিবিদ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) মহাপরিচালক কেএএস মুর্শিদ বলেন, জ্ঞানের দক্ষতা বাড়াতে হবে। জ্ঞানভিত্তিক অর্থনীতি গড়ে তুলতে না পারলে আমাদের অর্থনীতির যে আকাক্সক্ষা তা পূরণ হবে না। এজন্য উচ্চ শিক্ষা-দক্ষতা উন্নয়ন ও গবেষণা খাতে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এবারের বাজেট অন্য প্রেক্ষাপটে হচ্ছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক সমস্যার কারণে সরবরাহ চেইনে বিঘœ সৃষ্টি হয়েছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু সবাই চাইবে সহায়তা পেতে। এক্ষেত্রে লবিভিত্তিক প্রণোদনা না দিয়ে তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত খাতে প্রণোদনা দেয়া উচিত হবে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংকগুলোর ঋণ ব্যবস্থা নিয়ে বিশেষ নজর দিতে হবে। কেননা ব্যাংকগুলোর প্রায় ৯০ শতাংশ ঋণ চার শতাংশ ঋণগ্রহীতার হাতে। অন্যদিকে এডিপির আওতায় প্রকল্পের গুণগত বাস্তবায়নের ওপর নজর দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি। বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগ বোর্ডকে ঢেলে সাজাতে হবে। সরকারের রাজস্ব আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশি হচ্ছে। এক্ষেত্রে ২০১২ সালে পাস হওয়া ভ্যাট আইন কার্যকর করার দিকে নজর দিতে হবে। কেননা ভ্যাট আদায়ে ব্যয় বেশি হয় না। এক্ষেত্রে সরকার বেশি লাভবান হতে পারে। অর্থনীতিবিদ আহসান এইচ মনসুর বলেন, আমরা প্রবৃদ্ধির ক্ষেত্রে একটি নির্দিষ্ট গ-ির ভিতর আটকে গেছি। এ জায়গা থেকে বেরিয়ে আসতে পারছি না। এর প্রধান কারণ বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত হচ্ছে না। রিজার্ভ ম্যানেজমেন্ট ঠিক মতো করতে হবে। মূল্যস্ফীতি কম রাখতে পারলে ব্যাংক ঋণের সুদের হার এমনিতেই কমে আসবে। ইতোমধ্যেই ২ শতাংশ সুদের হার কমিয়েছে ব্যাংকগুলো। প্রাক-বাজেট আলোচনায় অর্থনীতিবিদরা আরও বলেন, শিক্ষাখাতে বরাদ্দ যাতে বেতন ভাতায় বেশি ব্যয় না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের স্কলারশিপে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। শেয়ার বাজারে যে লুটপাট হচ্ছে তা আমরা চোখে দেখতে পারি না। ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের ক্ষতির হাত থেকে বাঁচাতে শেয়ার বাজার উন্নয়নে শক্ত নীতিমালা করা উচিত। শস্য বহুমুখীকরণের দিকে বিশেষ উদ্যোগ থাকতে হবে। প্রতিবছর ২ মিলিয়ন মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি একটি অন্যতম চ্যালেঞ্জ। বাজেটে এ বিষয়ে বিশেষ উদ্যোগ থাকতে হবে।
×