ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ার সহযোগিতায় চট্টগ্রামে কারখানা পিএইচপি’র

সড়কে নামছে দেশে তৈরি ‘সেডান কার’ ॥ জ্বালানিতে সাশ্রয়, দামও কম

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ৬ এপ্রিল ২০১৫

সড়কে নামছে দেশে তৈরি ‘সেডান কার’ ॥ জ্বালানিতে সাশ্রয়, দামও কম

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ মালয়েশিয়ার বিশ্বখ্যাত গাড়ি নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ‘প্রোটন’-এর সঙ্গে যৌথ ব্যবস্থাপনায় দেশে প্রথম ‘সেডান কার’ উৎপাদন করতে যাচ্ছে অন্যতম শীর্ষ স্থানীয় শিল্প গ্রুপ পিএইচপি ফ্যামিলি। বাংলাদেশের সড়কে চলবে দেশে তৈরি এই গাড়ি। প্রায় ৪শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে চট্টগ্রামে আনোয়ারায় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এই গাড়ি তৈরির কারখানা। সরকারী উদ্যোগে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের কারখানায় জিপ, বাস ও ট্রাক এতদিন ধরে সংযোজিত হলেও সেডান কার তৈরির কারখানা এটিই প্রথম। দেশী উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠান পিএইচপির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ১৬শ’ সিসি এই গাড়ির মূল্য হবে বিদেশ থেকে আমদানি করা রিকন্ডিশন্ড গাড়ির তুলনায় কম। এর জ্বালানি খরচও কম হবে। শুরুর দিকে প্রতিবছর ১২শ’ গাড়ি তৈরির টার্গেট নিয়ে প্রতিষ্ঠানটি যাত্রা শুরু করছে। চট্টগ্রামের আনোয়ারায় ৩০ একর জমির ওপর পিএইচপি স্থাপন করেছে সেডান কার তৈরির কারখানা। এতে কাজ করবে ৫০ বিশেষজ্ঞ প্রকৌশলীসহ শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। ‘প্রোটন’ ব্র্যান্ডের এ গাড়ি সংযোজনকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মালয়েশিয়ার সেলাঙ্গরে প্রোটন সেন্টার অব এক্সেলেন্স কমপ্লেক্সে সম্প্রতি এ সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন প্রোটনের সিইও দাতো আবদুল হারিথ আবদুল্লাহ ও পিএইচি বোর্ড অব ম্যানেজমেন্টের ডিরেক্টর মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন চৌধুরী। চুক্তি স্বাক্ষরকালে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও প্রোটনের চেয়ারম্যান ডাঃ মাহাথির মোহাম্মদ এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন পিএইচপির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী, ব্যবস্থাপনা পরিচালক আকতার পারভেজ চৌধুরী হিরু ও পরিচালক জহিরুল ইসলাম রিংকু। পিএইচপি গ্রুপের কর্মকর্তারা জানান, তাদের কারখানায় উৎপাদনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সড়কে যাত্রা শুরু করছে দেশে তৈরি সেডান কার। এর নাম হবে ‘প্রোটন পিএইচপি’। এ গাড়ির দাম হবে বিশ্বখ্যাত টয়োটা রিকন্ডিশন্ড কারের চেয়ে কম। জ্বালানি খরচের দিক থেকেও এই গাড়ি তুলনামূলক সাশ্রয়ী হবে। সম্পূর্ণ নতুন গাড়ি বিধায় প্রথম ৫ বছর রিকন্ডিশন্ড গাড়ির মতো ফিটনেস লাগবে না। ফিটনেস করাতে হবে ৫ বছর পর। এতে অর্থ সাশ্রয় যেমন হবে তেমনি কমবে হয়রানিও। চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে প্রোটনের সিইও দাতো আবদুল হারিথ আবদুল্লাহ বলেন, বাংলাদেশে স্থাপিত কারখানায় সংযোজিত গাড়ি প্রথমে পরীক্ষা করে দেখা হবে প্রোটনের আন্তর্জাতিক বৈশিষ্ট্য ও মান অনুযায়ী। মান নিশ্চিত হওয়ার পর প্রোটনের লাইসেন্স পাবে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠান পিএইচপি। পিএইচপি ফ্যামিলির ভাইস-চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মহসিন চৌধুরী জানান, প্রথম ২৫ হাজার কিলোমিটারের গ্যারান্টি দেয়া হবে। এর মধ্যে যদি কোন গাড়িতে যান্ত্রিক গোলযোগ দেখা দেয় তাহলে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সেই কার মেরামত করে দেয়া হবে। এর জন্য ক্রেতার কোন খরচ লাগবে না। বিপণনের জন্য দেশের ৬টি জেলায় থাকবে ৬টি শোরুম। এছাড়া থাকবে পর্যাপ্তসংখ্যক সার্ভিস সেন্টার। ফলে টয়োটা গাড়ির মতো এই গাড়িও সহজে মেরামত করা যাবে। গাড়ির যন্ত্রণাংশও হবে সহজলভ্য। গাড়ির কারিগরি দিক প্রসঙ্গে জানানো হয়, অটো ও মেন্যুয়েলÑ দুইভাবেই প্রোটন গাড়ি চালানো যাবে। এ গাড়িতে ব্যবহার করা হবে বিশ্ব বিখ্যাত টার্বো ইঞ্জিন। ফলে যাত্রীদের ভ্রমণ হবে বেশ আরামদায়ক। দেশে যে কোন গ্যারেজে এই সেডান কার মেরামত করা সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, বাংলাদেশে প্রতিবছর ১৪ থেকে ১৫ হাজার গাড়ি আমদানি হয়ে থাকে, যার প্রায় ৭০ শতাংশই সেডান কার। এর বেশিরভাগই আমদানি হয় জাপান থেকে। এছাড়া ভারত থেকে অনেক গাড়ি আমদানি হয়ে থাকে। এতে দেশ থেকে প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রাও চলে যায়। দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা ও সড়ক উন্নয়নের পাশাপাশি গাড়ির চাহিদাও বাড়ছে। এই বিষয়টি বিবেচনায় নিয়েই দেশে গাড়ি তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করে পিএইচপি ফ্যামিলি। মালয়েশিয়ায় ‘প্রোটন সাগা’ ব্র্যান্ড নিয়ে সেডান কারের যাত্রা শুরু হয়েছিল ১৯৮৫ সালে। বেশ দ্রুতই এ গাড়ি জনপ্রিয়তা লাভ করে। মালয়েশীয় এ প্রতিষ্ঠানটি যুক্তরাজ্য, মধ্যপ্রাচ্য, অস্ট্রেলিয়া, এশিয়াসহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ক্রেতার রুচি ও পছন্দ অনুযায়ী গাড়ি তৈরি করে থাকে। প্রতিষ্ঠানটি সাধারণত ১৫শ’ সিসি গাড়ি তৈরি করলেও বাংলাদেশে তৈরি করা হবে ১৬শ’ সিসির সেডান কার।
×