ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আড়াই হাজার বছর আগের ও বর্তমানের মুদ্রা প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ৫ এপ্রিল ২০১৫

আড়াই হাজার বছর আগের ও বর্তমানের মুদ্রা প্রদর্শনী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একেবারে আদিমতম সময় হতে পারে সভ্যতার সূচনাপর্ব। মানুষ সবে বিনিময় প্রথার সূচনা করেছে। তখন নির্দিষ্ট ধরনের কড়ি, হাঙ্গরের দাঁত, পাথরের বিনিময়ে চলত বেচাকেনা। তখন এসবকেই মুদ্রা বলা হতো। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে স্বর্ণ, রৌপ্যসহ মূল্যবান ধাতব পদার্থ দিয়ে মুদ্রা তৈরি হতে থাকে। যুগ আরও আধুনিক হলে চামড়া থেকে প্রস্তুত করা বিশেষ এক ধরনের কাগজে মুদ্রার ছাপা শুরু হয়, যা কাগজি নোট হিসেবে প্রচলিত। মুদ্রার এই বিবর্তন দেখে সময়কে চেনা যায়। তা হয়ে ওঠে ইতিহাসের ধারক। এমনি করে হারিয়ে যাওয়া বহু ইতিহাস ও সভ্যতা আবিষ্কারে সহায়তা করেছে প্রাচীন মুদ্রা। স্বাভাবিকভাবেই মানুষের আগ্রহ জন্মায় দুর্লভ এসব মুদ্রার প্রতি। নিজের চোখে দেখতে চান এসব মুদ্রা। সেই সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ। শনিবার থেকে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘বসুন্ধরা সিমেন্ট মুদ্রা প্রদর্শনী ২০১৫’। এখানে দেখা যাচ্ছেÑ প্রাচীন যুগ, পাল-সেন-গুপ্ত যুগ, সুলতানী ও মোগল যুগসহ ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ের শাসকের আমলে বাংলা অঞ্চলে প্রচলিত বিভিন্ন মুদ্রা থেকে শুরু করে ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের মুদ্রা ও কাগজি নোট নিয়ে সাজানো হয়েছে এই প্রদর্শনী। ইতিহাসের নিরিখে আদি থেকে বর্তমান কালের মুদ্রা ও কাগজি নোটের এই প্রদর্শনী দর্শক সাধারণের দেখা ও জানার পাশাপাশি গবেষকদের জন্যও ইতিহাসে নতুন নতুন তথ্য ও বিশ্লেষণের উপাদান যোগাবে। এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে খ্রিস্টপূর্ব ৪০০-২২৫-এর চায়না মুদ্রা মিং, ৬৪১ থেকে ৬৯৪ খ্রিস্টাব্দের সম্রাট শশাঙ্কের স্বর্ণমুদ্রা, ৬৪৫-৭০৫ খ্রিস্টাব্দের মুসলমান শাসকদের প্রথম দিকের মুদ্রা, আবদুল্লাহ আল মালেক বিন মারওয়ানের মুদ্রা, ভারতীয় সম্রাট ইলতুতমিশের বিরল হর্সম্যান টাইপ মুদ্রাসহ প্রাচীন ও আধুনিক মুদ্রা। জিপিওতে বসুন্ধরা সিমেন্টের সহযোগিতায় আয়োজিত প্রদর্শনী শনিবার দুপুরে উদ্বোধন করেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সৌখিন মুদ্রা সংগ্রাহকদের দুই হাজার মুদ্রা নিয়ে এবারের আয়োজন শুরু হয়েছে। প্রদর্শনীতে প্রায় আড়াই হাজার বছর আগের মুদ্রা থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক সময়ে প্রচলিত পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কাগজি ও ধাতব মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, মুদ্রা ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং সংস্কৃতির কথা বলে। প্রতিটি মুদ্রায় জাগ্রত থাকে একেক অঞ্চলের রাজনৈতিক ও সামাজিক ইতিহাস। মুদ্রার প্রচলন মানব সভ্যতার ইতিহাসে বাঁক বদলকারী ঘটনা। তিনি বলেন, যারা মুদ্রা সংগ্রহ করেন তাঁরা মন-মানসিকতার দিক থেকে উন্নত চিন্তার অধিকারী। শখের বসে মুদ্রা সংগ্রহ করলেও এগুলো ইতিহাসের ধারক-বাহক। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশুবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি বলেন, অনেক সময় ইতিহাস বিকৃত হয় কিন্তু কয়েন বা মুদ্রার কারণে ইতিহাস বিকৃতির সুযোগ কম থাকে। কারণ মুদ্রা ইতিহাসকে ধারণ করে। আগের আমলের মুদ্রায় তাই দেখা যায়। বিএনসিএসের সভাপতি অমলেন্দ্র সাহার সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেনÑ বাংলাদেশ ডাক বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রবাস চন্দ্র সাহা, বিএনসিএসের সাধারণ সম্পাদক এমএ কাশেম, প্রতœতত্ত্ববিদ মোঃ হোসেন চৌধুরী, সুফি মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। বিএনসিএসের সভাপতি অমলেন্দ্র সাহা বলেন, তৃতীয়বারের মতো এ প্রদর্শনীর আয়োজন চলছে। এবারের প্রদর্শনীতে ২৬ জন মুদ্রা সংগ্রাহকের প্রায় দুই হাজার মুদ্রা প্রদর্শিত হচ্ছে। এরমধ্যে রয়েছেÑ ব্রিটিশ ভারতীয় ও স্বাধীন ভারতের মুদ্রা, মোগল শাসক, পাকিস্তান, চীন, ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের প্রাচীন মুদ্রাসহ পৃথিবীর ক্ষুদ্রতম মুদ্রা। মুদ্রা ও কাগজি নোট প্রদর্শনীর উদ্বোধনী দিনেই দর্শনার্থীদের ভিড় দেখা গেছে। রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থেকে আজমির হোসেন স্ত্রী ও দুই সন্তানসহ প্রদর্শনী দেখতে এসেছেন। তাঁর শিশুসন্তানদের বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন সময়ের হারিয়ে যাওয়া মুদ্রা ও কাগজি নোটের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা দিতেই তিনি পরিবারের সদস্যদের প্রদর্শনীতে নিয়ে এসেছেন। দেশের হারিয়ে যাওয়া ইতিহাস-ঐতিহ্য নতুন প্রজন্মকে জানাতে এ ধরনের প্রদর্শনীর আয়োজন সব সময়ই হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। সবার জন্য উন্মুক্ত তিন দিনব্যাপী এ প্রদর্শনী ৬ এপ্রিল পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত চলবে।
×