ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে নদী-খাল দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ৪ এপ্রিল ২০১৫

বাগেরহাটে নদী-খাল দখল করে বাড়িঘর নির্মাণ

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাট ও ফকিরহাটে নদী-খাল দখল করে ববসা প্রতিষ্ঠান, ক্লাব, দোকান, বাড়িঘর নির্মাণ করার প্রতিযোগিতা চলছে। প্রভাবশালী কতিপয় দখলবাজ নদী-খালের চিহ্ন পর্যন্ত মুছে দিয়ে সেখানে স্থায়ী অবকাঠামো গড়ে তুলছেন। কেউ কেউ আবার অবৈধ দখল বজায় রাখার জন্য এক পাশে রাজনৈতিক দলের সহযোগী সংগঠনের বা ধর্মীয় নামকরণে সাইনবোর্ড তুলে দিচ্ছেন। কোথাও কোথাও মাছচাষের নামে সরকারী নদী-খালে বাঁধ দিয়েছে প্রভাবশালীরা। প্রশাসনের নাকের ডগায় এসব দখল হলেও সকলেই রহস্যজনক নিশ্চুপ। ফলে জলাবদ্ধতা ও পরিবেশ বিপর্যয় ক্রমশ বাড়ছে। এনিয়ে জনমনে ক্ষোভের অন্ত নেই। একাধিকবার জেলা আইন-শৃঙ্খলা ও উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় বিষয়টি উত্থাপিত হলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আগামী বর্ষা মৌসুমে পানি নিষ্কাশন না হওয়ার ফলে ফকিরহাট সদর, পিলজঙ্গ, বেতাগা, শুভদিয়া এবং বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছি, খানপুর ইউনিয়নের কমপক্ষে ৩০টি গ্রাম প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী। যে কোন মূল্যে অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে ভরাট নদী-খাল যথাযথ খননের দাবি জানিয়েছেন তাঁরা। বাগেরহাট-মংলা-খুলনা মহাসড়কের পাশে কাটাখালী ভায়া সিএ্যান্ডবি বাজার পর্যন্ত একটি সরকারী স্বনির্ভর খাল রয়েছে। ওই খাল দিয়ে উপজেলার ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের সিঙ্গাতী, পাগলা, পিলজঙ্গ ইউনিয়নের বালিয়াডাঙ্গা, হোগোলডাঙ্গা, পিলজঙ্গ, টাউন নওয়াপাড়া, বাগেরহাট সদর উপজেলার রাখালগাছী ইউনিয়নের রাখালগাছী, সুগন্ধী কোররী ও সুনগর এলাকার পানি কাটাখালী ক্যানেল দিয়ে সরবরাহ হয়ে থাকে। একই সঙ্গে খানপুর, বেতাগা ও শুভদিয়া এলাকার পানি সংলগ্ন খাল দিয়ে প্রবাহিত হয়। কিন্তু সেই পানি নিষ্কাশনের পথ বন্ধ করে অবৈধ দখলকারীরা সেখানে ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ নানা স্থাপনা তৈরি করেছে। এতে খালের মূল মুখ পলি জমে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। সেখানে প্রতিনিয়ত ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। স্বাভাবিক পানি প্রবাহ প্রায় বন্ধ হতে বসেছে। বর্ষা মৌসুমে বৃষ্টির পানি জমে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, জালের মতো ছড়িয়ে থাকা প্রবাহমান খালের কোন একটি বন্ধ হয়ে গেলে ওই এলাকার প্রায় সকল খাল নদীর ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ে। অন্য খালগুলোও দ্রুত ভরাট হতে শুরু করে। বাগেরহাট-কাটাখালী সড়কের সিএ্যান্ডবি বাজার, মাথাভাঙ্গা, মহাদেবের দোকান, কাঁঠালতলা, নওয়াপাড়া ও কাটাখালীর মধ্যে কাটাখালী বাসস্ট্যান্ডের পশ্চিম পাশের অবস্থা সবচেয়ে শোচনীয়। কোন প্রকার পরিকল্পনা ছাড়াই যে যার ইচ্ছামতো ঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করছে। শুধু তাই নয়, সকল স্ট্যান্ডের ময়লা আবর্জনা ফেলে মুখ ও তার পাশে কয়েকটি স্থান বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। দেখলে মনে হয়, জমি ও ক্যানেল দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। অপর দিকে ফকিরহাট সদর ইউনিয়নের বিশ্বরোড ও পুরাতন মরা ভৈরব নদী এলাকায় একই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে নদীটির দু’পাশ দখল করে এমন ভাবে ঘরবাড়ি দোকানঘর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়েছে যে আগামী বর্ষা মৌসুমে একটু বৃষ্টি হলেই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হবে। স্থানীয় সচেতন মহলের ধারণা বর্ষা মৌসুমের আগেই অবৈধ দখলকারীদের উচ্ছেদ করে নদী ও ক্যানেলগুলো পরিষ্কার করা একান্ত জরুরী। এছাড়া শুভদিয়া ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি সরকারী নদী-খাল দখল করে মাছচাষ করা হচ্ছে।
×