ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

বর্ণিল উৎসব আয়োজনে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন

প্রকাশিত: ০৬:২১, ৪ এপ্রিল ২০১৫

বর্ণিল উৎসব আয়োজনে জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উদযাপন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শুক্রবার সকাল থেকেই উৎসবমুখর হয়ে ওঠে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)। বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাসহ চলচ্চিত্রশিল্পী ও কলাকুশলীদের আগমনে পুরো প্রাঙ্গণে বিরাজ করে আনন্দময় পরিবেশ। আর এমন মনমাতানো পরিবেশের উপলক্ষ ছিল জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস। দিনভর নানা বর্ণিল আয়োজনে বিএফডিসি উদযাপন করে দিবসটি। অন্যদিকে বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত চলচ্চিত্র দিবসকেন্দ্রিক পোস্টার প্রদর্শনী, আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। চৈত্রের সকালে বিএফডিসি আঙিনায় প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে বাংলা চলচ্চিত্রের সোনালী দিনের সাক্ষ্যবহ নানা পোস্টার। এ ছাড়া চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষে বের হয় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা। বিএফডিসি থেকে বের হয়ে কাওরানবাজার ঘুরে আবার বিএফডিসিতে এসে শেষ হয় শোভাযাত্রা। এতে অংশ নেয় চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সংগঠন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় চলচ্চিত্র অধ্যয়ন বিভাগ। সেই সঙ্গে ছিল আলোচনা, সেমিনার ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। তথ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে এবং বিএফডিসির তত্ত্বাবধানে ‘গাহি মানুষের জয়গান’ সেøাগানে দিনব্যাপী এ আয়োজনের উদ্বোধন হয় সকালে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। সম্মানিত অতিথি ছিলেন তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ ও সাংসদ সুকুমার রঞ্জন ঘোষ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বিএফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হারুনুর রশীদসহ চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট অনেকে। সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের পর অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। এছাড়া উদ্বোধন করা হয় ডিজিটাল কমপ্লেক্স এবং ‘গাহি মানুষের জয়গান’ শীর্ষক স্মরণিকা। চলচ্চিত্র ও নাট্যব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমামের শুভেচ্ছা বক্তব্যের মাধ্যমে শুরু হয় আলোচনা পর্ব। আলোচনায় উঠে আসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি কৃতজ্ঞতার প্রকাশ। বক্তারা বলেন, এফডিসি যাঁর সিদ্ধান্ত, স্বপ্ন ও বলিষ্ঠ পদক্ষেপে যাত্রা শুরু করে তিনি হলেন জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান। দেশীয় চলচ্চিত্র উন্নয়নে তাঁর স্বপ্ন আজ বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে। চলচ্চিত্রাঙ্গনে যারা পূর্বসূরি ছিলেন তারা অনেক সীমাবদ্ধতার মধ্যেও ভাল ভাল ছবি নির্মাণ করেছেন। এখন ডিজিটাল মাধ্যমের প্রয়োজন নতুন রূপ পেয়েছে চলচ্চিত্র। এই নতুন সুযোগ নিয়ে নতুন নির্মাতারা ভাল ভাল ছবি উপহার দেবেন এটাই প্রত্যাশা। বিএফডিসির ৮ নম্বর ফ্লোরে অনুষ্ঠিত হয় ‘ডিজিটাল চলচ্চিত্র : সঙ্কট ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক সেমিনার। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নন্দিত চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, তথ্য সচিব মর্তুজা আহমেদ, চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব হাসান ইমাম, সৈয়দ সালাউদ্দীন জাকী, অনিমেষ আইচ, জাকির হোসেন রাজু, ফাহমিদুল হক প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক ড. মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন। মূল প্রবন্ধে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, গত শতাব্দীর নব্বইয়ের দশকে দ্রুত বিকাশ লাভ করতে থাকে ডিজিটাল চলচ্চিত্র এবং বর্তমানে বিশ্বব্যাপী চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনের প্রায় পুরোটাই চলে গেছে ডিজটাল পদ্ধতির নিয়ন্ত্রণে। ডিজিটাল পদ্ধতি আসার ফলে চলচ্চিত্র নির্মাণের ব্যয় ও সময় দুটিই কমেছে। পাইরেসির সমস্যাও হ্রাস পেয়েছে। ডিজিটাল চলচ্চিত্রের আয়ুষ্কাল সীমাহীন। ডিজিটাল পদ্ধতি আসার ফলে কিছু সীমাবদ্ধতার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আউটডোর লোকেশনে ডিজিটাল প্রযুক্তিতে দৃশ্য ধারণের মান তুলনামূলকভাবে খারাপ হয়। প্রস্তুতি ছাড়া অনেকেই চলচ্চিত্র নির্মাণে আসার ফলে নান্দনিক ও কারিগরি উভয় দিক থেকেই মানহীন চলচ্চিত্র নির্মিত হচ্ছে। মূল বক্তব্যের পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন যুক্তি প্রদর্শন করে অন্য বক্তারা বলেন, আমরা এখনও পরিপূর্ণ ডিজিটাল চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে সক্ষম হইনি। এ নিয়ে বিতর্কের সুযোগ নেই। ডিজিটাল পদ্ধতি আসবেই। চলচ্চিত্রের ভাষা বুঝে, আমাদের সমাজ, জাতি তথা আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে ছবি নির্মাণ করতে হবে। সর্বোপরি ভাল গল্পের সঙ্গে প্রয়োজন নির্মাতার উপযুক্ত নির্দেশনা ও কারিগরি দক্ষতা। আয়োজনের অংশ হিসেবে পুরনো দিনের চলচ্চিত্রসংশ্লিষ্ট যন্ত্রাংশ, পোস্টার, ক্যামেরা, লেন্সসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদির প্রদর্শনী হয়। অনুষ্ঠিত হয় চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। সন্ধ্যায় ছিল মনোজজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন ॥ জাতীয় চলচ্চিত্র দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের ব্যবস্থাপনায় বিকেলে একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত ও নৃত্যকলা কেন্দ্রের লবিতে বর্ণিল সাজে আয়োজন করা হয় বাংলা চলচ্চিত্রের পোস্টার ও প্রয়াত চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বদের প্রতিকৃতি প্রদর্শনী। চমৎকার করে সজ্জিত এ প্রদর্শনীতে উপস্থাপিত হয় বরেণ্য চলচ্চিত্র পরিচালক ও চলচ্চিত্রাভিনয়শিল্পীদের নানা অভিব্যক্তির প্রতিকৃতি। সঙ্গে স্বর্ণযুগের কালজয়ী বাংলা সিনেমার নজরকাড়া পোস্টার। আর সন্ধ্যায় একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয় আলোচনা ও চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠান। আলোচনা অনুষ্ঠানে একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সভাপতিত্বে সম্মানিত অতিথি ছিলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, টোকন ঠাকুর ও নোমান রবিন। আলোচনা শেষে চলচ্চিত্রের গানের অনুষ্ঠানে একক সঙ্গীত পরিবেশন করে ইয়াসমিন আলী, সোহানুর রহমান, জন সুমিত দেউড়ী, চন্দনা মজুমদার, সুচিত্রা সূত্রধর, রোকসানা আক্তার, মামুন জাহিদ খান, দিনাত জাহান মুন্নি ও রাফি তালুকদার। তাঁদের পরিবেশিত কয়েকটি গানের শিরোনাম ছিল ‘ফুলের মালা পরিয়ে দিলাম’, ‘আমার বুকের মধ্যিখানে’, ‘আয়নাতে ঐ মুখ দেখবে যখন’, ‘ওরে নীল দরিয়া’, ‘নিথুয়া পাথারে’, ‘চারা গাছে ফুল ফুইটাছে’. ‘আমাকে পোড়াতে যদি এত লাগে ভাল’, ‘তোমারে লেগেছে এত যে ভাল’ ও ‘এই মন তোমাকে দিলাম’। সব শেষে ‘সব সখিরে পার করিতে’ ও ‘নীল আকাশের নিচে’ গান দুটি পরিবেশন করে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। গ্যালারি চিত্রকে আলমগীর হকের চিত্র প্রদর্শনী ॥ শুক্রবার থেকে ধানম-ির গ্যালারি চিত্রকে শুরু হলো কানাডা প্রবাসী শিল্পী আলমগীর হকের চিত্রকলা প্রদর্শনী। সাউন্ড এ্যান্ড স্মেলস অব নেচার শীর্ষক এ প্রদর্শনীর উদ্বোধন হয় বিকেলে। যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বরেণ্য চিত্রশিল্পী রফিকুন নবী এবং খ্যাতিমান স্থপতি ও চিত্রসমালোচক সামসুল ওয়ারেস। প্রদর্শনীর চিত্রকর্ম প্রসঙ্গে অনুভূতি প্রকাশ করে বক্তব্য রাখেন আলমগীর হক। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন চিত্রকের নির্বাহী পরিচালক চিত্রশিল্পী মোঃ মনিরুজ্জামান। শিল্পীর সাম্প্রতিককালে কোলাজ মাধ্যমে আঁকা ৫০টি চিত্রকর্ম ঠাঁই পেয়েছে প্রদর্শনীতে। আগামী ১২ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে প্রদর্শনী। প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত শিল্পানুরাগীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে। ছায়ানটে শ্রোতার আসর ॥ শুক্রবার সন্ধ্যায় শ্রোতার আসরের আয়োজন করে ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট। ছায়ানট সংস্কৃতি ভবনের রমেশচন্দ্র দত্ত স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত সঙ্গীতাসরে শুদ্ধ সঙ্গীত পরিবেশন করবেন সঞ্জীব সান্যাল শুভ, শ্রাবন্তী ধর, টিংকু শীল ও রাকিমুন নাহার রীতি। কিশোরগঞ্জে সপ্তাহব্যাপী চন্দ্রাবতী নাট্যোৎসব নিজস্ব সংবাদদাতা কিশোরগঞ্জ ॥ ‘সহিংসতার প্রতিবাদে নাটক’-এ স্লোগান নিয়ে কিশোরগঞ্জে সপ্তাহব্যাপী চন্দ্রাবতী নাট্যোৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ থিয়েটার ফোরামের উদ্যোগে এ নাট্যোৎসবে ৯টি নাটক প্রদর্শন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। জেলা শিল্পকলা একাডেমিতে বিশিষ্ট নাট্য ব্যক্তিত্ব সুধেন্দু বিশ্বাস উৎসবের উদ্বোধন করেন। ২৭ মার্চ থেকে ২ এপ্রিল পর্যন্ত প্রদর্শিত হয় নাটকগুলো।
×