ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাল্টে গেল ঢাকা দক্ষিণের আগের সব হিসাব-নিকাশ

সাঈদ খোকনের পক্ষে প্রকাশ্যেই মাঠে নামলেন হাজী সেলিম

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ৪ এপ্রিল ২০১৫

সাঈদ খোকনের পক্ষে প্রকাশ্যেই মাঠে নামলেন হাজী সেলিম

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মান অভিমান ভুলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনের পক্ষে প্রকাশ্যেই মাঠে নামলেন সাংসদ হাজী সেলিম। খোকনকে মেয়র হিসেবে বিজয়ী করতে সকলের প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। এরমধ্য দিয়ে দক্ষিণে নির্বাচনের হিসাব-নিকাশ আবারও বদলে গেল। শুক্রবার চকবাজার শাহী জামে মসজিদে জুমার নামাজ শেষে মহানগর আওয়ামী লীগের এই দুই নেতা সাঈদ খোকন ও হাজী সেলিম গলাগলি করে বাইরে অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের সামনে আসেন। কেবল একসঙ্গে নামাজ পড়া নয়, নিজের বাসায় খোকনকে নিয়ে দুপুরের খাবারও খেয়েছেন এই স্বতন্ত্র সাংসদ হাজী সেলিম। দুই জায়গাতেই তাদের সঙ্গে ছিলেন আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা। মসজিদ থেকে বের হয়ে সাঈদ খোকন সাংবাদিকদের বলেন, সেলিম ভাই নামাজ পড়ার দাওয়াত দিয়েছিলেন। এক সঙ্গে নামাজ পড়লাম। আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ড. আবদুর রাজ্জাক, জাহাঙ্গীর কবীর নানক, সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নারায়ণগঞ্জের সাংসদ নজরুল ইসলাম বাবু এবং সাবেক সাংসদ মোস্তফা জালাল মহিউদ্দীনকেও এ সময় সেলিম-খোকনের সঙ্গে দেখা যায়। মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বাধা পাওয়ার অভিযোগ তুলে কয়েকদিন আগেও যিনি সংসদে কথা বলেছেন, সেই হাজী সেলিমই এখন দল মনোনীত প্রার্থী সাঈদ খোকনের হয়ে মাঠে নেমেছেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এম এ আজিজ, সাংগঠনিক সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এবং ছাত্রলীগ সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগও সেখানে ছিলেন। প্রতীক বরাদ্দের আগে নেতাকর্মীদের সঙ্গে নিয়ে এভাবে জমায়েতে আচরণবিধি লঙ্ঘন হলো কি না- এমন প্রশ্নে সাঈদ খোকন বলেন, মানুষের সুস্বাস্থ্য কামনা করে এবং নিজের জন্য শুধু দোয়া চেয়েছি। সেলিম ভাইয়ের দাওয়াতেই দলের নেতাকর্মীরা এখানে এসেছিলেন। আমরা দু’জন এখানে আসায় কেউ কেউ এসেছেন। মসজিদ থেকে খোকনকে নিয়ে লালবাগে নিজের বাসা আরজু কমপ্লেক্সে যান হাজী সেলিম। সেখানেই তারা দুপুরে খাবার খেয়েছেন বলে খোকনের একান্ত সচিব হাবিবুল ইসলাম সুমন জনকণ্ঠকে জানান। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এ দুই নেতার ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন, দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাজী সেলিম এখন থেকে সাঈদ খোকনের পক্ষেই কাজ করবেন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায় থেকে সবুজসঙ্কেত পেয়ে এবার দক্ষিণের মেয়র পদের মনোনয়নপত্র নেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সাঈদ খোকন। তিনি ঢাকার সাবেক মেয়র মোহাম্মদ হানিফের ছেলে। কিন্তু মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাজী মোহাম্মদ সেলিমও মেয়র হতে সাংসদ পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র কেনেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনকে হারিয়ে স্বতন্ত্র সাংসদ হয়েছেন তিনি। আইন অনুযায়ী, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে সংসদ সদস্যপদ ছাড়তে হয়। যা হাজী সেলিমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ছিল। এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দলের হাজী সেলিমকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেন। এরপর হাজী সেলিম মনোনয়নপত্র জমা না দিয়ে ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে জানান, তিনি আজমির শরিফ জিয়ারতে ভারতে যাচ্ছেন। তার সহকর্মীরাও একই কথা জানান। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার সময় শেষ হওয়ার পরদিন সোমবার আওয়ামী লীগের এই নেতাকে দেখা যায় সংসদে। তিনি স্পীকারকে বলেন, মেয়র প্রার্থী হতে তিনি সংসদ সদস্যপদ ছাড়তে চিঠি দিলেও তা ছিঁড়ে ফেলা হয়েছে। তবে কে ছিঁড়েছে, সে বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি পুরান ঢাকার এই ব্যবসায়ী রাজনীতিক। তিনি বলেন, এইডা তো কওন যাইব না। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতে ঢাকা সিটি নির্বাচন নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর বাসায় পৃথক বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বৈঠকে সাঈদ খোকনের পক্ষে সরাসরি মাঠে নামার সিদ্ধান্ত হয় হাজী সেলিমের।
×