ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আটকেপড়া পাকিস্তানী

প্রকাশিত: ০৪:০৮, ৩ এপ্রিল ২০১৫

আটকেপড়া পাকিস্তানী

বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের সমস্যা নাগরিক সংক্রান্ত। তারা বাংলাদেশী না পাকিস্তানী? ২০০৩ সালের ১৮ মে বাংলাদেশ হাইকোর্টের এক রায় অনুযায়ী ১৯৭১ সালের পর এ দেশে জন্ম নেয়া বিহারীরা জন্মসূত্রে বাংলাদেশী। তারা ভোটার তালিকাভুক্তও হয়েছে। সুতরাং ’৭১ পূর্বরা পাকিস্তানী নাগরিক। আটকেপড়াদের পাকিস্তানে ফেরত পাঠানোর বিষয়টি কূটনৈতিকভাবে সমাধানের জন্য বাংলাদেশ বরাবরই সচেষ্ট। এই ইস্যুটি বেশ পুরনো। বিভিন্ন ফোরামে এদের ফেরত নেয়ার দাবি সব সময় উঠে আসছে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার এ বিষয়ে তাদের অনীহার কথা বলে আসছে। এদের ফেরত নিতে পাকিস্তান গত চার দশকের বেশি সময় ধরে গাঁই-গুঁই করে আসছে না নেবার উসিলায়। ক’দিন আগে পাকিস্তান সরকার বলে দিয়েছে, তারা আটকেপড়া পাকিস্তানীদের সে দেশে ফেরত নেবে না। বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের জন্য গঠিত কমিটির এ বিষয়ে একটি আবেদনের শুনানি চলছে পাকিস্তান সুপ্রীমকোর্টে। শুনানিকালে সরকারী এ্যাটর্নি বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ৪ থেকে ৫ লাখ আটকেপড়া পাকিস্তানী বসবাস করছেন। এদের দায়-দায়িত্ব শুধুই বাংলাদেশের। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুনানির জন্য কোর্টে পেশ করা প্রতিবেদনে বলেছে, আটকেপড়াদের অনেকে এখন আর পাকিস্তানে ফিরতে চায় না। প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের ২০০৩ ও ২০০৪ সালের এ বিষয়ক রায়ের কপি সংযুক্ত করে জানিয়েছে, এ রায়গুলোতে বিহারীদের বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বলে মেনে নেয়া হয়েছে। তাদের ভোটাধিকারের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। এছাড়া গত দুটো সংসদ নির্বাচনে তারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন। তারা বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করছেন। যদিও প্রতিবেদন প্রকাশের আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছেন, আটকেপড়া পাকিস্তানীদের ফেরত নিতে তারা ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগ ও দাঙ্গা হাঙ্গামার কারণে ভারতের বিহারসহ অন্য রাজ্য হতে প্রায় ১৩ লাখ উর্দুভাষী মুসলিম পূর্ববঙ্গে চলে আসে। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় এরা বাঙালী নিধনে ঝঁাঁপিয়ে পড়ে। পুরো ’৭১ এরা পাকি বাহিনীর সশস্ত্র সহযোগী হয়ে নৃশংসভাবে গণহত্যা চালায়। মুক্তিযুদ্ধের পর পরই এদের বড় অংশ পাকিস্তান ও বিহারে পালিয়ে যায়, আটকে পড়ে কয়েক লাখ বিহারী। জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশন এদের শরণার্থী হিসেবে সহায়তা করে শুরুতে। তবে পরবর্তীতে এদের শরণার্থী মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ ভারত পাকিস্তান যুদ্ধবন্দী ও আটকেপড়াদের বিষয়ে ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তানী সরকার তাদের ফেরত নেয়ার কথা। কিন্তু মাত্র ১ লাখ ৭০ হাজার বিহারী ফেরত নেয়। এরপর ১৯৯২ সালে পাকিস্তান সরকার ঘোষণা দেয় যে, তিন শ’ পরিবারকে পাকিস্তানে ফেরত নেয়া হবে। কিন্তু ১৯৯৩ সালে মাত্র ৫০ পরিবারকে ফেরত নেয়ার পর প্রক্রিয়াটি অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত হয়ে যায়। পরে বিভিন্ন ফোরামে বিষয়টি উত্থাপন করা হলেও সন্তোষজনক কোন সুরাহা হয়নি। অথচ বাংলাদেশ বার বার তাদের ফেরত নেয়ার জন্য অনুরোধ জানিয়ে আসছে।
×