ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানবিক পরিস্থিতি ভয়াবহ ॥ জাতিসংঘ

সৌদি-ইয়েমেন ॥ সীমান্তে তীব্র লড়াই

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২ এপ্রিল ২০১৫

সৌদি-ইয়েমেন ॥ সীমান্তে তীব্র লড়াই

গত সপ্তাহে সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা শুরু হওয়ার পর থেকে মঙ্গলবার ইয়মেনী সীমান্তে সৌদি সৈন্যদের সঙ্গে হুতি যোদ্ধাদের সংঘর্ষ হয়েছে। দুই পক্ষের মধ্যে সীমান্তে প্রচ- গুলি বিনিময় হয়। এদিকে ইয়মেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী স্থলভাগে ত্বরিত আরব হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন। সৌদি নেতৃত্বাধীন বিমান হামলা ও অবরোধের জন্য ইয়েমেনে বাইরে থেকে কোন সাহায্য যেতে না পারায় সাহায্যদাতা গোষ্ঠীগুলো মানবিক সঙ্কট সৃষ্টির ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছে। সৌদি আরব গত বৃহস্পতিবার থেকে শিয়া হুতিদের বিরুদ্ধে বিমাল হামলা অভিযানে আরব রাষ্ট্রগুলোর একটি জোটের নেতৃত্ব দিচ্ছে। গত বছর হুতিরা আরব বিশ্বের দরিদ্রতম দেশ ইয়েমেনের ক্ষমতা দখলের পর সে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। খবর ইয়াহু নিউজ ও আলজাজিরার। এই সংঘাত ইতোমধ্যে চরম বিশৃঙ্খল অবস্থার শিকার দেশটিকে গৃহযুদ্ধের মুখোমুখি করেছে এবং ওয়াশিংটনকে আল কায়েদার বিরুদ্ধে মার্কিন গোপন ড্রোন হামলার অন্যতম প্রধান ঘাঁটি থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রত্যাহারে বাধ্য করেছে। উত্তর ইয়েমেনের বাসিন্দা ও উপজাতীয় সূত্রে সৌদি সীমান্তের কিছু বিস্তৃত ভূখ- বরাবর উভয়পক্ষের গোলন্দাজ ও রকেট হামলার খবর পাওয়া যায়। সেখানে বিস্ফোরণ ও প্রচ- গোলাগুলির আওয়াজ শোনা যায় এবং সৌদি হেলিকপ্টারগুলো আকাশে চক্কর দেয়। দক্ষিণাঞ্চলীয় এডেন বন্দরে হুতি যোদ্ধারা এবং মিত্র সেনা ইউনিটগুলো প্রেসিডেন্ট হাদির অনুগত বাহিনীর বিরুদ্ধে হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। তারা অনুপস্থিত প্রেসিডেন্টের বাহিনীর সর্বশেষ প্রধান ঘাঁটিটি দখলের চেষ্টা করছে। হুতি বাহিনী এডেনে হাদি অনুগতদের ওপর গোলা নিক্ষেপ করলে অন্তত ৩৬ জন নিহত হয়। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের জঙ্গীবিমানগুলো বিমানবন্দরের কাছে হুতি অবস্থানগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ করে। আরও পশ্চিমে হুতি যোদ্ধারা লোহিত সাগরের গুরুত্বপূর্ণ বাব আল-মান্দের প্রণালীর কাছে একটি উপকূলীয় সামরিক ঘাঁটিতে ঢুকে পড়েছে। বাব আল-মান্দ লোহিত সাগরকে এডেন উপসাগর ও আরব সাগরের সঙ্গে সংযুক্ত করেছে। এটি জ্বালানি বহনের গুরুত্বপূর্ণ সমুদ্রপথ। জাহাজগুলো ইউরোপ, এশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের জন্য প্রতিদিন এ পথ দিয়ে ৩০ লক্ষাধিক ব্যারেল তেল নিয়ে যায়। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার জায়েদ রাআদ আল হুসেইন বলেছেন, সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের হুতি অবস্থানের ওপর অব্যাহত বোমা হামলায় ইয়েমেন ‘সম্পূর্ণ ভেঙ্গে পড়ার কিনারায়’ পৌঁছেছে। তিনি বলেন, ‘ইয়েমেনের অবস্থা অত্যন্ত ভীতিপ্রদ। গত চারদিনে বহু লোক নিহত হয়েছে।’ সাহায্যদাতা গোষ্ঠীগুলো বিমান ও সমুদ্রপথ অবরুদ্ধ থাকায় সেখানে একটি মানবিক সঙ্কট সষ্টির বিষয়ে সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, হতাহতের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অতিজরুরী সাহায্য অসম্ভব হয়ে পড়েছে। জাতিসংঘের শিশু তহবিল বলেছে, গত সপ্তাহে লড়াইয়ে অন্তত ৬২ শিশু নিহত এবং ৩০ শিশু আহত হয়েছে। ইউনিসেফের জুলিয়েন হারনেইস বলেন, ‘শিশুদের রক্ষা করা অতীব প্রয়োজন। লড়াইয়ে সকল পক্ষের উচিত শিশুদের রক্ষায় সম্ভব সবরকম ব্যবস্থা গ্রহণ করা।’ ডক্টরস উইথআউট বর্ডারস নামে একটি সংগঠন বলেছে, তারা গত ১৯ মার্চ থেকে সৌদি নেতৃত্বাধীন বোমা হামলায় আহত ৫৫০ জনেরও বেশি রোগীকে গ্রহণ করেছে। সংগঠনটির গ্রেগ এল্ডার বলেন, ‘আমাদের দেশের (ইয়েমেন) অভ্যন্তরে মানবিক ত্রাণ ও সাহায্যকর্মীদের আসার সুযোগদানের পথ বের করা জরুরী।’ তিনি দালেহর তিনটি হাসপাতালে হুতি সংশ্লিষ্ঠ যোদ্ধাদের হামলার নিন্দা জানান। ওই হামলায় অজ্ঞাতসংখ্যক ব্যক্তি হতাহত হয়েছে। সৌদি কর্তৃপক্ষ বলেছে, তারা সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে সীমান্ত বরাবর সৈন্য সমাবেশ করেছে। তবে তারা সৈন্য প্রেরণের ব্যাপারে কোন সময়সূচী দেয়নি। পাকিস্তান বলেছে, তারা সৌদি আরবের সমর্থনে সৈন্য প্রেরণ করছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের মুখপাত্র ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমদ আসেরি বলেন, ‘স্থল অভিযান ‘অবশ্যম্ভাবী’ বলেই আমরা সীমান্তে সেনা সমাবেশ ঘটাচ্ছি না ... যদি অন্যান্য উপায়ে লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়।’
×