ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিনে ৫ কোটি লিটার পানি পাওয়া যাবে

রাজধানীতে আরও ৪০ গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২ এপ্রিল ২০১৫

রাজধানীতে আরও ৪০ গভীর নলকূপ বসানো হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ রাজধানীর বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নির্বিঘœ রাখতে নতুন আরও ৪০টি গভীর নলকূপ স্থাপন করা হচ্ছে। ফলে ঢাকা মহানগরীতে ঢাকা ওয়াসার বর্তমান পানি সরবরাহ ব্যবস্থা অটুট রাখতে ভূ-পৃষ্ঠের পানি সরবাহের যে সব প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে সেগুলো শেষ না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সময়ে ভূ-গর্ভস্থ ৫০ কোটি লিটার নিরাপদ পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলে মনে করা হচ্ছে। এটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ২৫২ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৪২ কোটি এবং ঢাকা ওয়াসার তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের ভৌত অবকাঠামো বিভাগের সদস্য আরাস্তু খান বলেন, বর্তমানে চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় এক্সিলারেট গ্রোথ এ্যান্ড রিডিউসিং প্রভার্টি এ পঞ্চম অধ্যায়ে উল্লিখিত ওয়াটার সাপ্লাই এ্যান্ড স্যানিটেশন (ডব্লিউএসএস) সেক্টরের পলিসিজ এ্যান্ড স্ট্রাটেজিসসমূহের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। এ সব দিক বিবেচনা করে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য সুপারিশ করা হয়েছে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ঢাকা মহানগরীতে বর্তমানে প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ মানুষ বসবাস করে এবং পানির চাহিদা প্রতিদিন ২৪০ কোটি লিটার। প্রতি ৫ শতাংশ হারে মানুষ বাড়ছে এবং ২০২০ সাল নাগাদ এ শহরের জনসংখ্যা ১ কোটি ৮০ লাখে পৌঁছাবে। জনগণের জীবনযাত্রার মান বেড়ে যাওয়ায় পানির ব্যবহার বাড়ছে। ২০২০ সাল নাগাদ ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ শহরে প্রতিদিন পানির চাহিদা হবে ৩০০ কোটি লিটার। ঢাকা মেট্রোপলিটন সিটি, নারায়ণগঞ্জ সিটি এবং পার্শ্ববর্তী এলাকায় ঢাকা ওয়াসা পানি সরবরাহ করে থাকে। প্রতিদিন ২৪০ কোটি লিটার পানি উৎপাদিত হয়, যার ৮০ শতাংশই আসে ভূ-গর্ভস্থ থেকে। ৬৭০টি গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূ-গর্ভস্থ এ পানি উত্তোলন করা হয়। অবশিষ্ট ২০ শতাংশ পানি আসে ভূÑউপরিস্থ উৎস থেকে এবং ৫টি শোধনাগারের মাধ্যমে এ পানি শোধন করা হচ্ছে। ঢাকা ওয়াসার গভীর নলকূপের পানির নির্ভরতা কমানোর জন্য ইতোমধ্যেই তিনটি বড় ধরনের পানি শোধনাগার প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এ সব শোধনাগার থেকে প্রতিদিন ১৪০ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা সম্ভব হবে। কিন্তু এ সমস্ত পানি শোধনাগার থেকে ঢাকাবাসীকে পানি সরবরাহ করতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময়ের প্রয়োজন। বাস্তবায়িতব্য পানি শোধনাগারসমূহ সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন সময়ের জন্য ঢাকা ওয়াসার পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য জরুরী ভিত্তিতে গভীর নলকূপভিত্তিক প্রকল্প হাতে নেয়া প্রয়োজন। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তাবিত প্রকল্পটি গ্রহণ করা হচ্ছে। সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার বিভাগের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে ২০১৩ সালের ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত স্টিয়ারিং কমিটির সভায় ঢাকা শহরে পানি সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক রাখার জন্য চলতি প্রকল্প সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত তিন বছর মেয়াদি এ ধরনের নতুন প্রকল্প অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা ওয়াসা প্রতিবছর ৫০ কোটি লিটার অতিরিক্ত পানি উৎপাদন সম্ভব এমন তিন বছরভিত্তিক ৩১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৪ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য একটি প্রকল্প ২০১৪ সালের ৯ জুলাই পরিকল্পা কমিশনে পাঠানো হয়। ওই বছরের ৩১ আগস্ট প্রকল্পটির ওপর প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠালে চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দ্বিতীয়বার পিইসি সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রকল্প ব্যয় হয়েছে ২৫২ কোটি টাকা করা হয়েছে। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২৪২ কোটি এবং ঢাকা ওয়াসার তহবিল থেকে ১০ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। সেইসঙ্গে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন কাল ধরা হয়েছে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ৪০টি নতুন গভীর নলকূপ স্থাপন, ৯২টি গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন, ২০টি গভীর নলকূপ নতুনভাবে প্রতিস্থাপন, পাঁচটি ডিপ এ্যকুইফার গভীর নলকূপ স্থাপন, এবং পাঁচটি ডিপ এ্যবুইফার গভীর নলকূপ প্রতিস্থাপন, ৫০ কিলোমিটার পানির লাইন স্থাপন, ৭৫ কিলোমিটার রাস্তা কাটার ক্ষতিপূরণ, ২০ কিলোমিটার পানির লাইন পুনর্বাসন, ২০ হাজার ঘনমিটার ভূমি উন্নয়ন এবং ১২ হাজার ৫০০ বর্গমিটার ভূমি সংরক্ষণ কার্যক্রম করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে অর্থবছরভিত্তিক বরাদ্দ চাহিদা হচ্ছে, চলতি অর্থবছরে ৫০ কোটি টাকা, আগামী ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৭২ কোটি টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৩০ কোটি টাকা। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর বর্তমানে যাবতীয় প্রক্রিয়াকরণ শেষ হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় এটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে।
×