ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

জমি দখলের শত কৌশল

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ১ এপ্রিল ২০১৫

জমি দখলের শত কৌশল

সঠিক রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সরকারের নানা খাতের জমি দখল, নদী-খাল-বিল দখল, প্রভাবশালীদের দ্বারা নিরীহ জনগণের জমি-বাসস্থান দখলের ঘটনা বছরের পর বছর ধরে চলে আসছে। এ ধরনের ঘটনায় দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের দায়িত্বহীনতা কোনভাবেই জবাবদিহিতার বাইরে থাকতে পারে না, থাকা উচিতও নয়। অথচ বছরের পর বছর ধরে এই ধরনের বেশিরভাগ ঘটনাই রয়ে গেছে প্রতিকারহীন। বর্তমানেও দখলের প্রচেষ্টা থেমে নেই। তবে পাল্টেছে দখলের কৌশল। দেশের বিভিন্ন স্থানে বন বিভাগের সংরক্ষিত বনাঞ্চলে ভয়াবহ আগুনে পোড়ানো হচ্ছে মূল্যবান বনজ সম্পদ। এই ধরনের সংবাদ বেশ কিছু দিন ধরে পত্রপত্রিকায় আসছে। দেখা যায় অসাধু দখলকারী এবং বনের কাঠ ও কয়লা পাচারকারী সিন্ডিকেটচক্র পরিকল্পিতভাবে পরিবেশ ধ্বংসকারী এই কাজটি করে আসছে। এতে নির্মমভাবে পুড়ে ছাই হচ্ছে বনের জীবজন্তুও। ক্ষতি হচ্ছে শত কোটি টাকা। এর উদ্দেশ্য যে জমি দখলের কৌশল তাতে কোন সন্দেহ নেই। রাজশাহীর গোদাগাড়ীর পদ্মার চরে দুর্বৃত্তরা সামাজিক বনায়ন কর্মসূচীর আওতায় সরকারীভাবে গড়ে তোলা বনে আগুন দিয়ে ২০ হাজার গাছ পুড়িয়ে ফেলেছে। চট্টগ্রাম দক্ষিণ বন বিভাগের আওতাধীন চন্দনাইশে দুর্বৃত্তের দেয়া আগুনে পুড়ে গেছে কয়েক হাজার একর বন। এতে বাগানের বিভিন্ন প্রজাতির গাছসহ পুড়ে গেছে নানা ধরনের লতাগুল্ম। অগ্নিকাণ্ডে ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে বন বিভাগের দাবি। এছাড়া টেকনাফ ও উখিয়ায় জুম চাষের নামে পরিকল্পিতভাবে বন পুড়িয়ে ফেলা হচ্ছে মূলত জমি দখলের জন্য। বন বিভাগ কর্তৃপক্ষ নির্বিকার থাকায় দখলদাররা এই কৌশলটি ব্যবহার করছে। এভাবে বন ধ্বংস করে বিস্তীর্ণ বন ভূমিতে বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় গাছ যেখানে বড় সহায়ক শক্তি, সেখানে বন পোড়ানোর এই খবর নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলেন, একটি দেশে বনভূমি তথা সবুজ এলাকার পরিমাণ মূল ভূখ-ের কমপক্ষে ২৫ শতাংশ থাকা দরকার। কিন্তু আমাদের দেশে এর অস্তিত্ব ১০ শতাংশেরও নিচে। তারপর রয়েছে দখলবাজদের অব্যাহত ছোবল। বনে আগুন দিয়ে গাছ-গাছালি নিধন করে জমি দখলের চেষ্টার বিষয়টি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিল, এখানে স্বার্থান্বেষী মহলের স্বেচ্ছাচারিতা কতটা প্রকট। দুর্বৃত্তরা প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রাতের আঁধারে এ ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে। বাকি যে বনজ সম্পদ রয়েছে, যেগুলোর অস্তিত্ব এখনও টিকে আছে, সেগুলোও যে তাদের কোপানলে পড়বে না তার নিশ্চয়তা কোথায়? দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, আর্থ-সামাজিক প্রয়োজন ও বাস্তবতায় বনের জমি ও তার গাছগাছালি সংরক্ষণ, সম্প্রসারণ এবং উন্নয়ন অতি জরুরী। যেভাবে, যে কৌশলে জমি দখলের উদ্দেশ্যে গাছ নিধন, বনভূমি উজাড়ের উন্মাদনা চলছে, তা ঠেকানোর জন্য প্রশাসনিক তদারকির পাশাপাশি মানুষকে সচেতন করে তোলা দরকার। জনসংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বনভূমির পরিমাণ কমে গেছে দ্রুত। এ ক্ষেত্রে কেবল বনভূমির জমি বা গাছগাছালির সংখ্যাই কমেনি, কমেছে বন্য জীবজন্তু ও পাখ-পাখালির সংখ্যাও। এতে পরিবেশের ওপর পড়ছে নানাভাবে বিরূপ প্রভাব। দেশে জনসংখ্যা বাড়ছে, এটা বাস্তবতা। নানা কৌশলে বনভূমির জমি দখল করা হচ্ছে মানুষের বসবাসের স্থান যোগাতে। বন আমাদের শুধু ফলমূলই যোগায় না, প্রাকৃতিক বিপর্যয় থেকেও রক্ষা করে। কাজেই বিদ্যমান বনাঞ্চলকে রক্ষা করতে হবে যে কোন উপায়ে। বন উজাড়কারী, বনের জমি দখলকারীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা।
×