ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পাক সুপ্রীমকোর্টে প্রতিবেদন

এদেশে আটকেপড়াদের দায়িত্ব নেবে না পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ এপ্রিল ২০১৫

এদেশে আটকেপড়াদের দায়িত্ব নেবে না পাকিস্তান

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতির প্রশংসা করেছে পাকিস্তান। দেশটি মনে করে শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশ থেকে ছেলেদের পোশাক ও সিরামিক পণ্য নেয়ার বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেছে দেশটি। অপরদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের দায়িত্ব নেবে না দেশটি। ঢাকায় পাকিস্তানের নবনিযুক্ত হাইকমিশনার সুজা আলম মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠককালে হাইকমিশনার সুজা আলম শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নারীর উন্নয়ন, প্রযুক্তি, ক্ষুদ্র ঋণ প্রভৃতি খাতে বাংলাদেশে যে অভূতপূর্ব উন্নয়ন ঘটছে তার ভূয়সী প্রশংসা করেন। তিনি বলেন, শুধু দক্ষিণ এশিয়া নয়, মুসলিম দেশগুলোর মধ্যেও বাংলাদেশের এ অগ্রগতি উল্লেখযোগ্য। বাংলাদেশে সৌরশক্তি সম্প্রসারণের বিষয়ে হাইকমিশনার সুজা আলমের আগ্রহের প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী জানান, বাংলাদেশের দুর্গম চরাঞ্চলে যেসব স্থানে প্রধান সঞ্চালন লাইন হতে বিদ্যুত সরবরাহ খুবই জটিল সে সব স্থানে সৌর বিদ্যুত কার্যকর ভূমিকা রাখছে। মাহমুদ আলী আরও বলেন, এ বিষয়ে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য পাকিস্তান হতে একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করতে পারে। এর আগে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে বৈঠককালে হাই কমিশনার সুজা আলম বলেন বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক কূটনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের পাশাপাশি বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক সম্প্রসারণের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশেষ করে ছেলেদের পোশাকের বিরাট বাজার রয়েছে পাকিস্তানে। তিনি বাংলাদেশের সিরামিক পণ্যের বিষয়ে পাকিস্তানের ক্রেতাদের আগ্রহের কথা জানান। এ বিষয়ে বাণিজ্যিক প্রতিনিধি দলের সফর বিনিময় দুদেশের মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে কার্যকরী ভূমিকা রাখবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। পাকিস্তানের হাইকমিশনার দুদেশের জনগণের মধ্যে উভয়ের প্রতি যে সৌহার্দপূর্ণ মনোভাব রয়েছে তা দুদেশের জন্য সুফলদায়ী কার্যাবলীতে রূপান্তরের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আটকেপড়া নাগরিকদের দায়িত্ব নেবে না পাকিস্তান ॥ বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানী নাগরিকদের দায়িত্ব নেবে না পাকিস্তান। সোমবার পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে দেশটির সুপ্রমকোর্টে পেশ করা এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার পাকিস্তানের এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব বলা হয়েছে। এক্সপ্রেস ট্রিবিউন পত্রিকার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর অনেক পাকিস্তানী বাংলাদেশে আটকা পড়েন। জাতিগত পরিচয়ে তাদের অধিকাংশই বিহারি। সোমবার থেকে বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানীদের স্বদেশে প্রত্যাবাসনের জন্য গঠিত কমিটির এ বিষয়ক একটি আবেদনের শুনানি শুরু করেছে পাকিস্তানের সুপ্রীমকোর্ট। সুপ্রীমকোর্টের শুনানিতে দেশটির সরকারের পক্ষে ডেপুটি এ্যাটর্নি জেনারেল সোহেল মাহমুদ জানান, বর্তমানে বাংলাদেশে ৪ থেকে ৫ লাখ আটকেপড়া পাকিস্তানী বসবাস করছেন। ‘এই মানুষগুলোর দায়-দায়িত্ব শুধুই বাংলাদেশের’ বলেও উল্লেখ করেন তিনি। এছাড়া সুপ্রীমকোর্টে পেশ করা ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ‘আটকেপড়া পাকিস্তানীদের ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য রয়েছে। তাদের অনেকেই এখন আর পাকিস্তানে ফিরে যেতে চান না’। ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশের মধ্যে যুদ্ধবন্দী এবং আটকেপড়া বেসামরিক নাগরিকদের স্বদেশে প্রত্যাবর্তনের ব্যাপারে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সম্পন্ন হয়। আর এ চুক্তির পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্ট অবাঙালীদের নাগরিকত্ব বিষয়ে আদেশ দেয়ার আগে পর্যন্ত প্রায় এক লাখ ৭০ হাজার পাকিস্তানী নাগরিক সেদেশে ফিরে গেছেন। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই প্রতিবেদনের সঙ্গে বাংলাদেশের সুপ্রীমকোর্টের ২০০৩ এবং ২০০৮ সালের এ বিষয়ক রায়ের কপি সংযুক্ত করে জানিয়েছে, এ রায়গুলোতেও বিহারিদের বাংলাদেশের নাগরিক বলে মেনে নেয়া হয়েছে এবং ভোটাধিকারের ঘোষণাও দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশে বসবাসরত বিহারিদের অনেকেই গত দু’টো সংসদ নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন এবং বাংলাদেশের পাসপোর্ট বহন করছেন বলে দাবি করেছে ওই প্রতিবেদন। যদিও এ প্রতিবেদন প্রকাশের আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, বাংলাদেশে আটকেপড়া পাকিস্তানীদের ফেরত নেয়ার বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করছে। তবে মঙ্গলবার পুনরায় সুপ্রীমকোর্টে এ বিষয়ে শুনানি শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে এক্সপ্রেস ট্রিবিউন।
×