ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

লাঙ্গলবন্দ পরিদর্শন করলেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ ॥ তীর্থস্থান সংরক্ষণের দা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ মার্চ ২০১৫

লাঙ্গলবন্দ পরিদর্শন করলেন নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ ॥ তীর্থস্থান সংরক্ষণের দা

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ নারায়ণগঞ্জের লাঙ্গলবন্দে পুণ্যস্নানে এসে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনাস্থল সোমবার সকালে পরিদর্শন করেছেন দেশের নাগরিক সমাজের নেতৃবৃন্দ। পরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে লেখক প্রাবন্ধিক সৈয়দ আবুল মকসুদ সাংবাদিকদের বলেন, পুণ্যস্নানে এসে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ১০ জনের মৃত্যুর ঘটনা খুবই দুঃখজনক। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন যে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে, আমরা আশা করবো, তারা সরকারী প্রভাবমুক্ত হয়ে নিরপেক্ষভাবে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধান করবে এবং আগামীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবেন। তিনি আরও বলেন, লাঙ্গলবন্দে প্রতিবছর পুণ্যস্নান করতে ১০-১৫ লাখ মানুষ আসে। দেশ-বিদেশের এ সব পুণ্যার্থীর জন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি, টয়লেট, কাপড় বদলানোর স্থান, বিশ্রামের ব্যবস্থা নেই। লাঙ্গলবন্দের দেবোত্তর সম্পত্তিগুলি প্রভাশালী দখলদাররা জাল দলিলের মাধ্যমে দখল করে নিয়েছে। নদী ভরাট হয়ে কচুরিপানায় পূর্ণ হয়ে থাকে যা পুণ্যার্থীদের জন্য বিড়ম্বনার কারণ। লাঙ্গলবন্দের স্নানঘাটের পার্শ্ববর্তী রাস্তা সরু হওয়ায় পুণ্যার্থীদের ভিড়ের মধ্যে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হয়। আগামী বছর থেকে পুণ্যার্থীদের নিরাপত্তা কিভাবে আরও বাড়ানো যায় এবং পুণ্যস্নান উৎসবে আয়োজক জেলা-পুলিশ প্রশাসন, স্নান উদযাপন কমিটির সঙ্গে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সমাজকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা যায় তা ঠিক করা উচিৎ। নিহতদের পরিবারকে লাশ বহন ও সৎকার বাবদ ২৫ হাজার টাকা করে দিয়েছে প্রশাসন। নিহতরা তাদের পরিবারের আয় রোজগারের উৎস ছিলেন, তাই সরকারের উচিত নিহত ১০ জনের প্রত্যেক পরিবারকে যথাযথ ক্ষতিপূরণ দেয়া। সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের নেতা পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান পুরো উপমহাদেশের মধ্যে লাঙ্গলবন্দ অন্যতম তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত। মহাত্মা গান্ধীর দেহভস্ম হিমালয়, ত্রিবেনীসঙ্গম ও লাঙ্গলবন্দে ছড়ানো হয়েছিল। স্বামী বিবেকানন্দ লাঙ্গলবন্দে স্নান করতে এসেছিলেন। অষ্টমী স্নানের দিন কারা বেইলী ব্রিজ ভাঙ্গার গুজব ছড়িয়েছিল তাদের চিহ্নিত করতে হবে। ৪৭ একর দেবোত্তর সম্পত্তি বেদখল হতে হতে এখন মাত্র সোয়া দুই একর রয়েছে। কারা এ সমস্ত দেবোত্তর সম্পত্তি জাল কাগজপত্র তৈরি করে বেদখল করেছে তাদেরও চিহ্নিত করে সম্পত্তি পুনরুদ্ধার করতে হবে। লাঙ্গলবন্দ এখন শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের তীর্থস্থান নয়, এটিকে বিশ্ব সংস্কৃতির ঐতিহ্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে তা সংরক্ষণ করতে হবে। ব্রহ্মপুত্র নদের কচুরিপানা পরিষ্কারের জন্য সরকার প্রয়োজনে নাগরিকদের কাছে স্বেচ্ছা শ্রমের আহ্বান জানাতে পারে। লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি শঙ্কর কুমার সাহা প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে দেখা করে কথা বলেন। পরিদর্শনকালে তাদের সঙ্গে আরও উপস্থিত ছিলেন কৃষিবিদ অধ্যাপক নূর মোহাম্মদ তালুকদার, হাসান আহমেদ, সুবোধ এম বাস্কে, নারী নেত্রী জয়ন্তী রায় এবং শায়লা আহমেদ লোপা। নাগরিক সমাজের প্রতিনিধি দলটি নগর ভবনে গিয়ে নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াৎ আইভীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। উল্লেখ, গত ২৭ মার্চ লাঙ্গলবন্দে অষ্টমী স্নান চলাকালে ভিড়ের চাপে পদদলিত হয়ে ৭ জন নারীসহ ১০ পুণ্যার্থী নিহত হয়। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসন ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।
×