ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উদীচীর সঙ্গীতসন্ধ্যায় তিন শিল্পীর অনবদ্য পরিবেশনা

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ৩১ মার্চ ২০১৫

উদীচীর সঙ্গীতসন্ধ্যায় তিন শিল্পীর অনবদ্য পরিবেশনা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মাটির সুরমাখা লোকগানের সঙ্গে জীবনমুখী গান ও রবীন্দ্রসঙ্গীতের অনিন্দ্য সুরের অনুরণনে শ্রোতাকে মাতিয়ে রাখলেন শিল্পীত্রয়। সোমবার চৈত্রের সন্ধ্যায় সুফিয়া কামাল জাতীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে বসেছিল এ সঙ্গীতাসর। এ আয়োজনে গান শোনালেন বাংলাদেশের বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত সাধক ও শিল্পী স্বপন কুমার হালদার এবং ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীতশিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ও তাঁর মেয়ে শবনম সুরিতা ডানা। তাঁরা তিনজনই সদ্য বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী আয়োজিত ষষ্ঠ সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার আমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন। উৎসবের সমাপনী আয়োজনের অংশ হিসেবে এ সঙ্গীতানুষ্ঠানের আয়োজন করে উদীচী। শবনম সুরিতা ডানার গান দিয়ে শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। সুরভরা কণ্ঠে প্রথমেই এ শিল্পী গেয়ে ‘আর কতকাল বলো আর কতকাল সইবো নিঠুর অপমান’। এরপর শ্রোতাদের মুগ্ধ করে গেয়ে শোনান পাকিস্তানের গণসঙ্গীত ‘হাম দেখেঙ্গে’ ও ‘রাবেয়া কি রুকসানা একটু মনে পড়ে না’সহ বেশ কয়েকটি গান। বিজয় সরকারের গানসহ বাউল-বিচ্ছেদ ভক্তিগীতির অনবদ্য মিশ্রণে শ্রোতাদের মুগ্ধ করেন স্বপন কুমার হালদার। জীবনমুখী নানা গান, গণসঙ্গীত এবং রবীন্দ্রসঙ্গীতের সংমিশ্রণে অসাধারণ পরিবেশনা উপস্থাপন করেন শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার। আর বাবার সঙ্গে যোগ্য সঙ্গত দেন মেয়ে শবনম সুরিতা ডানা। সঙ্গীত সন্ধ্যার শুরুতেই স্বাগত বক্তব্য রাখেনÑ উদীচীর কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী। এ সময় তিনি মৌলবাদী, ধর্মান্ধ, সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর হামলায় ব্লগার ওয়াশিকুর রহমান বাবুর হত্যাকা-ের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান। ক্ষোভ জানিয়ে তিনি অবিলম্বে হত্যাকারীদের চিহ্নিত করে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য সরকারের প্রতি দাবি জানান। এরপর মঞ্চে আসেন তিন গুণী শিল্পী। তাদেরকে উদীচীর পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা জানান উদীচীর সহ-সভাপতি অধ্যাপক বদিউর রহমান, কাজী মোহাম্মদ শীশ এবং শিল্পী তানভীর আলম সজীব। তিন শিল্পীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করেন উদীচীর সহ-সভাপতি বেলায়েত হোসেন, সম্পাদকম-লীর সদস্য হালিমা নূর পাপন এবং কেন্দ্রীয় সংসদের সদস্য শিখা সেন গুপ্তা। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন উদীচীর সহ-সভাপতি শংকর সাওজাল। শিল্পকলায় আলমগীর কবির চলচ্চিত্র উৎসব ॥ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে সোমবার শুরু হলো আলমগীর কবির চলচ্চিত্র উৎসব। চলচ্চিত্রাচার্য্য আলমগীর কবির ফিল্ম সোসাইটি আয়োজিত দু’দিনের এ উৎসবের উদ্বোধন করেনÑ সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, চলচ্চিত্র নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের মহাপরিচালক ড. জাহাঙ্গীর হোসেন ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশনের ব্যবস্থাপনার পরিচালক এসএম হারুন-অর-রশীদ। আলমগীর কবিরের বোন বেগম মমতাজ হোসেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন নাট্যাভিনেতা আসলাম শিহির। প্রধান অতিথির বক্তব্যে আসাদুজ্জামান নূর বলেন, আমাদের দেশের সুষ্ঠু চলচ্চিত্র বলতে যা বুঝি তার সবটুকুই আলমগীর কবির শুরু করেছিলেন। চলচ্চিত্র নির্মাণ, চলচ্চিত্র বিষয়ে শিক্ষাদান ও চলচ্চিত্র সমালোচনার মতো কাজ একইসঙ্গে শুরু করেছিলেন।’ মোরশেদুল ইসলাম বলেন, আধুনিক চলচ্চিত্রকারদের নাম বলতে গেলে শুরুতেই অনিবার্যভাবে আসে চলচ্চিত্র নির্মাতা আলমগীর কবিরের নাম। বাংলাদেশ চলেচ্চিত্র বিষয়ে একাডেমিক শিক্ষাদানের বিষয়টি তিনিই প্রথম শুরু করেন। তিনি শুধু চলচ্চিত্রই নির্মাণ করেননি একটি প্রজন্মও গড়ে তুলেছেন। তাকে আমরা যতই ছড়িয়ে দিতে পারবো ততই আমরা উপকৃত হবো। উৎসবে আলমগীর কবির প্রদত্ত সিকোয়েন্স এ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হয়। সিকোয়েন্স প্রাপ্তরা হলেন- নায়করাজ রাজ্জাক, সিরাজউদ্দিন আহম্মেদ, খালেদা ফাহমি, লিয়াকত আলী লাকী, হানিফ সংকেত, লায়লা হক, তারিন ও মীর সাব্বির। তরুণ নির্মাতাদের নির্মিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতাদেরও পুরস্কার প্রদান করা হয় অনুষ্ঠানে। এবারের শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্রের পুরস্কার লাভ করেছে নাদের সালাম পরিচালিত ‘দংশন’। ‘আহ্বান (পোস্টার ৭১)’ নির্মাণের জন্য শ্রেষ্ঠ পরিচালকের পুরস্কার অর্জন করেন মাহবুবুল আলম সাঈফ। সেরা চিত্রনাট্যের জন্য পুরস্কৃত হয়েছেন আমিনুর লিটন। উদ্বোধনী পর্ব শেষে আলমগীর কবিরকে নিয়ে নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘প্রতিকূলের যাত্রী’ প্রদর্শনের পাশাপাশি একে একে নাদের সালামের ‘দংশন’, মাহবুবু আলম সাইফের ‘আহ্বান (পোস্টার ৭১), আমিনুর লিটনের ‘আরশি’, শরিফুল ইসলাম শামীমের ‘স্বপ্ন পাখি’, তন্ময় মীরের ‘জার্ক অব ডাক’, রবিউল ইসলাম রবির ‘ইশ’ ও রিফিউজির ‘লেট দেয়ার বি লাইট-২’ দেখানো হয়। আজ মঙ্গলবার উৎসবের সমাপনী আয়োজনেও আটটি চলচ্চিত্র ও প্রামাণ্যচিত্র দেখানো হবে। এর মধ্যে রয়েছে- অনিক কান্তি সরকারের ‘ফোর’, জয়জিৎ দত্তের ‘সেলুন সেল’, আল মামুন রূপান্তরের ‘সত্যিটাই স্বপ্ন হলো’, তানভীর হাসান সৈকতের ‘লাইন অব রেড ক্রিফ’, মনিরুজ্জামান শাহীনের ‘ডেথ’, সন্দীপ বিশ্বাসের ‘আবিরের ঘর’, ইয়াসিন শাফির ‘জীবনঢুলি’ও ইলিয়াস নওশাদের ‘চলচ্চিত্রের কথোপকথন’। বিনা দর্শনীতে প্রতিটি প্রদর্শনী সবার জন্য উন্মুক্ত।
×