ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবমুখর পরিবেশে মনোনয়নপত্র জমা ;###;ঢাকা উত্তরে ২১, দক্ষিণে ২৬ ও চট্টগ্রামে ১৩ মেয়র প্রার্থী

তিন সিটি নির্বাচন ॥ রেকর্ড প্রার্থী

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ৩০ মার্চ ২০১৫

তিন সিটি নির্বাচন ॥ রেকর্ড প্রার্থী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে শেষ দিনে উৎসবমুখর পরিবেশে ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে মনোনয়নপত্র জমা দিলেন সম্ভাব্য প্রার্থীরা। স্মরণকালের মধ্যে রেকর্ডসংখ্যক প্রার্থী এবারের নির্বাচনে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঢাকার উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে ৩০ প্রার্থী মনোনয়নপত্র তুললেও শেষদিনে জমা দিয়েছেন ২১ জন। অপরদিকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ৩১ জনের মধ্যে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন ২৬ প্রার্থী। অপরদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। উত্তরের রিটার্নিং অফিসের কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ২১ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া সাধারণ কাউন্সিল পদে ৪৯৪ এবং সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৩৫ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। অপরদিকে দক্ষিণের কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম জানান, এ সিটিতে মেয়র পদে ২৬, সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৬৩২, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১৫৩ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে ১৩ জন ছাড়াও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৮৮ এবং সংরক্ষিত কউন্সিলর পদে ৭১ প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তবে প্রার্থীদের মধ্যে স্বতঃস্ফূর্ততা থাকলেও আইনে নিষেধাজ্ঞার কারণে বিপুল কর্মী-সমর্থক নিয়ে কেউ রিটার্নিং কর্মকর্তার অফিসে প্রবেশ করতে পারেনি। শেষদিনে প্রার্থীরা নিজে হাজির হয়ে বা তার পক্ষে অন্য কেউ এসে রিটার্নিং কর্মকতার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে ঢাকা উত্তরে ঘোড়ারগাড়ি সাজিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার কারণে সম্ভাব্য এক মেয়র প্রার্থীকে ২০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। তার নাম মোঃ নাঈম হাসন। পরে জরিমানার টাকাসহ তিনি মনোনয়পত্র জমা দেন। ঢাকার উত্তরে বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর পাশাপাশি তার ছেলে তাবিথ আউয়াল মিন্টুও মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। সকাল থেকে ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সম্ভাব্য মেয়র, সাধারণ কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদের প্রার্থীদের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে ভিড় করতে দেখা যায়। তবে বেশি সংখ্যক নেতাকর্মী নিয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হওয়ায় দক্ষিণের আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকনের বিরুদ্ধে আচরণবিধি ভঙ্গের অভিযোগ তোলা হয়েছে। দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, সাঈদ খোকনের আচরণবিধি ভঙ্গের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ: নিয়ম না থাকলেও তিনি গাড়িতে করেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে হাজির হন। এছাড়া ৫ জনের বেশি কর্মী-সমর্থক নেয়া নিষেধ থাকলেও তার পক্ষে প্রায় ৫০ নেতাকর্মী রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রবেশ করেন। তবে চারজন চেয়ারে বসলেও সবাই দাঁড়িয়ে থাকেন। এ বিষয়ে সাঈদ খোকন বলেন, আমার সঙ্গে অন্য যারা কার্যালয়ে প্রবেশ করেন তারা অন্যান্য ওয়ার্ডেও কাউন্সিলর প্রার্থী। এদিকে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের জন্য মেয়র পদে প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীর প্রায় সবাই রবিবার শেষ দিনে তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঢাকার উত্তরে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক ও বিএনপির সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টু ছাড়াও আলোচিত প্রার্থীদের মধ্যে অভিনেত্রী সারাহ বেগম কবরী, ববি হাজ্জাজ মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অপরদিকে দক্ষিণে আওয়ামী লীগ সমর্থিক প্রার্থী ঢাকার সাবেক মেয়র মোঃ হানিফের ছেলে সাঈদ খোকন ছাড়া বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম, আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন, যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত বিএনপি নেতা নাসির উদ্দিন পিন্টু তাদের মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা নিজে উপস্থিত হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিলেও বিএনপি সমর্থিত প্রার্থীদের মধ্যে একমাত্র আসাদুজ্জামান রিপন ছাড়া আর কাউকে সশরীরে হাজির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিতে দেখা যায়নি। কেউ দিয়েছেন নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে আবার কেউ নিজের পুত্র ও স্ত্রীর মাধ্যমে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। ঢাকা উত্তর ॥ রবিবার বেলা তিনটার দিকে আগারগাঁওয়ে অবস্থিত উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে মেয়র পদে নিজের মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক। এ সময় তার সঙ্গে ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ, বিজেএমইএর সভাপতি আতিকুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর কবির নানক, ফারুক খান ও ড. আব্দুর রাজ্জাক উপস্থিত ছিলেন। এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মিন্টুর পক্ষে তার ছেলে তাফসির এম আউয়াল রিটার্নিং কর্মকর্তা কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তার অপর ছেলে তাজওয়ার এম আউয়াল উপস্থিত ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা শেষে তাফসির এম আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করা যাবে কিনা তা নিয়ে আমাদের উদ্বেগ রয়েছে। এ নিয়ে নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলব। এদিকে বেলা সোয়া তিনটার দিকে রিটার্নিং কর্মকতার কার্যালয়ে হাজির হয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী ও নারায়ণগঞ্জ-৪ এর সারাহ বেগম কবরী সারোয়ার। তিনি বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন একটি দলীয় নির্বাচন। এতে দলের সর্মথন প্রয়োজন হয় না। আমাকে ১৬ কোটি মানুষ চেনে। আমি বিজয়ী হলে মেয়েরা এগিয়ে যাবে উল্লেখ করেন। এছাড়া উত্তর সিটি কর্পোরেশনে মেয়র পদে নির্বাচনের জন্য যারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেনÑশামসুল আলম চৌধুরী, চৌধুরী ইরাজ আহমেদ সিদ্দিকী, আবদুল্লাহ আল ক্বাফি, ববি হাজ্জাজ, এওয়াইএম কামরুল ইসলাম, বাহাউদ্দিন আহমেদ, নাদের চৌধুরী, কাজী মোঃ শহীদুল্লাহ, মোয়াজ্জেম হোসেন খান মজলিস, মোঃ নাঈম হাসান, মোঃ আনিসুজ্জামান খোকন, তাবিথ আউয়াল, মোঃ জামান ভুইয়া, শেখ শহীদুজ্জামান, জুনায়েদ আবদুর রহিম সাকি, মাহি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, শেখ মোহাম্মদ ফজলে বারি মাসুদ, অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান, মোস্তফা কামাল আজাদী। মনোনয়ন জমার বিষয়ে উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা শাহ আলম সাংবাদিকদের বলেন, প্রার্থীদের মধ্যে ব্যাপক স্বতঃস্ফূর্ততা লক্ষ্য করা গেছে। আচরণবিধি বিষয়েও আমরা সচেতন রয়েছি। তবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, এখলাস উদ্দিন মোল্লাহ ও মিসেস হেলেন জাহাঙ্গীর মনোনয়নপত্র জম দেননি। মিন্টু ও তার ছেলে উত্তরের মেয়র প্রার্থী ॥ এদিকে ঢাকা উত্তরের মেয়র পদে ব্যবসায়ী নেতা ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। এ সিটিতে তার প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন মিন্টুর বড় ছেলে তাবিথ এম আউয়াল। তিনি রবিবার বেলা ১২টা দিকে তার আইনজীবী সাজ্জাদুল ইসলামের মাধ্যমে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন। পরে ফর্মপূরণ করে বেলা ৪টার দিকে তার পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া হয়। এর আগে বেলা আড়াইটার দিকে মিন্টুর পক্ষে তার ছেলে তাফসির এম আউয়াল মনোনয়পত্র জমা দেন। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জনা গেছে, কোনক্রমে মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল করা হলেও তার পক্ষে বড় ছেলে যাতে নির্বাচনে টিকে থাকতে পারে এ কারণেই মূলত তার বড় ছেলে তাবিথ এম আউয়াল প্রার্থী হয়েছেন। মিন্টুর নামে অনেক মামলা থানায় প্রার্থিতা বাতিলের আশঙ্কা থেকে বড় ছেলেকে প্রার্থী করিয়েছেন। উত্তরে মেয়র পদে বিএনপির আর কোন প্রার্থী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেনি। সেক্ষেত্রে মিন্টুর প্রার্থিতা বাতিল হলে বিএনপির পক্ষে আর কোন প্রার্থী থাকবে না। এ ধারণা থেকে মিন্টুর ছেলেকে প্রার্থী করা হয়েছে বলে জনা গেছে। ঢাকা দক্ষিণ ॥ এদিকে ঢাকার দক্ষিণে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী সাঈদ খোকন রবিবার বেলা ১২টার দিকে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এমএ আজিজ, সাংসদ ফজলে নূর তাপস, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন ও সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক তার সঙ্গে ছিলেন। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর খোকন বলেন, জয়ের ব্যাপারে আমি শতভাগ আশাবাদী। বিএনপি নির্বাচনে এলে এ নির্বাচনে আমার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে বিএনপির প্রার্থীর সঙ্গে। অপরদিকে এ সিটিতে বিএনপির পক্ষে এখন পর্যন্ত কাউকে সমর্থন না করায় রবিবার শেষ দিনে দলের চার প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এর মধ্যে দুপুরে মহানগর নাট্যমঞ্চে ঢাকা দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও মহানগর আহ্বায়ক মির্জা আব্বাসের পক্ষে মনোনয়নপত্র জমা দেন তার আইনজীবী ও যুবদলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম। তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। কিন্তু আমরা নির্বাচন করার পক্ষে। কিন্তু সরকারকে নির্বাচনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। তিনি জানান, দল সমর্থন না দিলে মির্জা আব্বাস নির্বাচন করবেন না। দলের কেন্দ্রীয় অর্থনীতিবিষয়ক সম্পাদক ও মহানগরের সাবেক সদস্য সচিব সালামের পক্ষে তার স্ত্রী ফাতেমা সালাম মনোনয়নপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, দল থেকে প্রস্তুতি নিতে বলায় সালামের পক্ষে মনোনয়নপত্র দাখিল করা হয়েছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এবং দলের সমর্থন পেলে আব্দুস সালাম এ নির্বাচনে জয়ী হবে বলে আশা প্রকাশ করেন। এছাড়া দলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সাংসদ নাসির উদ্দিন পিন্টুর পক্ষে তাঁর স্ত্রী নাসিমা আক্তার কল্পনা মনোনয়নপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, পিন্টু একজন জনপ্রিয় ও ত্যাগী নেতা। জনগণই তাঁকে নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছেন। আশাকরি দল তাঁর নির্বাচনের বিষয়ে সর্মথন দেবে। তবে দলের যেকোন সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে উল্লেখ করেন। অপরদিকে দলের কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক আসাদুজ্জামান রিপন নিজেই মনোনয়নপত্র জমা দেন। তিনি বলেন, এখনও পর্যন্ত নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং সৃষ্টি হয়নি। নিজের নির্বাচনের বিষয়ে বলেন, দলের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নেবেন। ঢাকা দক্ষিণের মনোনয়নপত্র জমাদানকারী প্রার্থীদের মধ্যে রয়েছেনÑ মোঃ আকতারুজ্জামান ওরফে আয়াতুল্লাহ, মোঃ আব্দুল খালেক, মোঃ জাহিদুর রহমান, আবু নাছের মুহাম্মদ মাসুদ হোসাইন, মোঃ বাহারানে সুলতান বাহার, এএসএম আকরাম, শাহীন খান, দিলীপ ভদ্র, মোঃ শহীদুল ইসলাম, মোহাম্মদ সাঈদ খোকন, মোঃ বাবুল সরদার চাখারী, মোহাম্মদ শফিউল্লাহ চৌধুরী, মোঃ নাসির উদ্দিন আহাম্মেদ পিন্টু, মোঃ আবদুর রহমান, মোঃ আব্দুস সালাম, মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন, বজলুর রশীদ ফিরোজ, মির্জা আব্বাস, মোহাম্মদ রিয়াজ উদ্দিন, মশিউর রহমান, এএম আসাদুজ্জামান রিপন, মোঃ ইমতিয়াজ আলম, মোঃ গোলাম মাওলা রনি, মোঃ রেজাউল করিম চৌধুরী, এ্যাডভোকেট মোহাম্মদ আয়ুব হুসেন ও কাজী আবুল বাশার। এছাড়া কাজী মোঃ সাইদুর রহমান মানিক, সৈয়দ শাহ আলম, হাজী মোঃ সেলিম, মোঃ সেলিম ভূঞা ও শাহীন মিয়া মনোনয়নপত্র তুললেও জমা দেননি। মনোনয়নপত্র জমা দিতে না পেরে ক্ষোভ ॥ এদিকে ঢাকা দক্ষিণের ২৫ জন সম্ভাব্য প্রার্থী শেষ সময়ে এসে বিভিন্ন জটিলতার কারণে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেননি। ফলে তাঁরা রিটার্রিং কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগ রয়েছেন বিভিন্ন ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী। এ বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারোয়ার মোর্শেদ বলেন, নিয়ম অনুযায়ী বিকেল ৫টার মধ্যে রিটার্নিং কর্মকর্তা ডেস্কে ফাইল সাবমিট না করায় তাদের মনোনয়নপত্র জমা নেয়া সম্ভব হয়নি। নিয়ম অনুযায়ী এটা আমরা করতে পারি না। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ॥ চট্টগ্রাম অফিস জানায়, চসিক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন রবিবার আঞ্চলিক নির্বাচন কার্যালয়কে ঘিরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ। মেয়র, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর এবং সমর্থকদের পদভারে নির্বাচনী কার্যালয় এলাকাসহ আশপাশ জায়গাজুড়ে প্রার্থীদের সমর্থকদের ভিড় জমে যায়। প্রার্থীরা তাঁদের সমর্থকদের নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেন রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে। আচরণবিধির কঠোরতার কারণে কোন ধরনের স্লোগান না হলেও পরিলক্ষিত হয় নির্বাচনী আমেজ। মেয়রপদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ও বিএনপি সমর্থিত চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী সাবেক মেয়র এম মনজুর আলমসহ ১৩ জন, সংরক্ষিত ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদে ৭১ এবং সাধারণ কাউন্সিলর পদে ২৮৮ জন প্রার্থী তাঁদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। শেষ দিনে মেয়র ও কাউন্সিলর মিলে মোট ৩৭২টি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। বিএনপির সমর্থনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থী এম মনজুর আলম তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন সবার আগে। সকাল ৯টার দিকে তিনি রিটার্নিং অফিসার মোঃ আবদুল বাতেনের কাছে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেনÑ বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের কেন্দ্রীয় সদস্য মাহাবুবুর রহমান শামীম এবং উত্তর জেলা বিএনপির সহসভাপতি ও বিজিএমএর সাবেক সভাপতি এসএম ফজলুল হক। এ সময় কার্যালয়ের বাইরে অপেক্ষমাণ ছিলেন বিএনপি এবং অঙ্গ-সংগঠনগুলোর নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। আওয়ামী লীগ সমর্থিত চট্টগ্রাম নাগরিক কমিটির প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন তাঁর মনোনয়নপত্র জমা দেন দুপুর ১২টার দিকে। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও নির্বাচন পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান মোঃ ইসহাক মিয়া, ডাঃ আফছারুল আমিন এমপি, এমএ লতিফ এমপি, সাবেক সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম। এছাড়া আরও বেশ কয়েকজন নেতা উপস্থিত ছিলেন। রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে প্রার্থীর সঙ্গে পাঁচের অধিক প্রবেশে বাঁধা থাকলেও বাইরে ঠিকই পরিলক্ষিত হয় একধরনের শোডাউনের আমেজ। মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান বলেন, সন্ত্রাস ও জলাবদ্ধতামুক্ত চট্টগ্রাম নগরী গড়ে তোলাই আমাদের প্রতিশ্রুতি। মনোনয়নপত্র দাখিলের মধ্য দিয়ে নির্বাচনী কাজ শুরু হলো। নগরবাসী আবারও ভোট দিয়ে এম মনজুর আলমকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আন্দোলনের অংশ হিসেবে বিএনপি এ নির্বাচনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছে। এ নির্বাচনকে আমরা চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়েছি। তিনি সকল প্রার্থীর জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানান। মেয়র প্রার্থী এম মনজুর আলম বলেন, আচরণবিধি মেনে মেয়রের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করে আমি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছি। নগরবাসী আবারও তাঁকে ভোট দিয়ে সেবা করার সুযোগ দেবেন বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আওয়ামী লীগে মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে চট্টগ্রামে শীর্ষপর্যায়ে নেতাদের মধ্যে প্রথমদিকে বিভক্তি থাকলেও রবিবার প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে ছিলেন আলোচনায় থাকা সকল নেতাই। নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী, সাবেক গণপরিষদ সদস্য প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইসহাক মিয়া, সাবেক মন্ত্রী আফছারুল আমিন এমপি, এমএ লতিফ এমপি, সাবেক এমপি নুরুল ইসলাম বিএসসি ও চউক চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামকে সঙ্গে নিয়েই মনোনয়নপত্র জমা দেন আ জ ম নাছির। সাংবাদিকদের কাছে প্রতিক্রিয়ায় নেতারা বলেন, দলের কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তে নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে বিজয়ী করতে সকলেই ঐক্যবদ্ধ। এ নিয়ে দলে কোন বিভেদ নেই। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আচরণবিধি লঙ্ঘনের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ এনেছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি। আ জ ম নাছির উদ্দিনের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়Ñ উন্নয়ন আন্দোলন প্রার্থী এম মনজুর আলম আগেভাগে নির্বাচনী প্রচার চালিয়ে আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছেন। এ অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিএনপির আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগ আচরণবিধি আরও অনেক বেশি লঙ্ঘন করলেও কেউ কিছু বলছে না। এ ব্যাপারে তাঁদের পক্ষ থেকে লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে বলে তিনি জানান। বিশেষ করে গৃহায়ন ও গণপূর্তমন্ত্রী আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন ও সাবেক মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ এমপি নির্বাচনকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছেন বলে তিনি অভিযোগ আনেন। রিটার্নিং অফিসারের বক্তব্য ॥ চসিক নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোঃ আবদুল বাতেন এ প্রসঙ্গে বলেন, উভয়পক্ষের অভিযোগ আমরা পেয়েছি। যাচাইবাছাই শেষে যদি কোন অনিয়ম বা আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ প্রমাণিত হয় তাহলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। তিনি আচরণবিধি পুরোপুরি মেনে একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন উপহার দেয়ার জন্য সহযোগিতা দিতে সকলের প্রতি আহ্বান জানান। নির্বাচনের সামগ্রিক প্রস্তুতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ১৪ জন সহকারী রিটার্নিং অফিসার ও ২ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে টিম সকল প্রার্থীকে এখন থেকে মনিটরিং করবেন। মেজবান অথবা এ ধরনের কোন সামাজিক আয়োজনের নামে কোন প্রার্থী আচরণবিধি লঙ্ঘন করলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সংরক্ষিত প্রতীকের বিপরীতে অধিক প্রার্থীর মনোনয়ন জমা পড়ার ব্যাপারে তিনি জানান, প্রার্থিতা প্রত্যাহার ও যাচাইবাছাইয়ের পর যদি প্রয়োজন হয় নির্বাচন কমিশন আরও প্রতীক বরাদ্দ দেবে। মেয়রপদে মনোনয়নপত্র ১৩টি ॥ চসিক নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন রবিবার মেয়রপদে ১৩ জন মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তাঁরা হলেনÑ আওয়ামী লীগ সমির্থত আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিএনপি সমর্থিত এম মনজুর আলম, জাতীয় পার্টি সমর্থিত সোলায়মান আলম শেঠ, বিএনএফ সমর্থিত নাগরিক ফ্রন্টের অধ্যাপক আরিফ মঈনুদ্দীন, ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাজ্জাদ জোহা, ফোরকান চৌধুরী, মোঃ আবুল কালাম আজাদ, মোঃ শফিউল আলম, আলাউদ্দিন চৌধুরী, সাইফুদ্দীন আহমেদ রবি ও ওয়ায়েজ উদ্দিন ভূঁইয়া। মেয়রপদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেও জমা দেননি পাঁচজন। তাঁরা হলেনÑ মোঃ ইলিয়াছ, আবুল মনজুর, গোলাম ইয়াজদানী, মোঃ শাহজাহান ও বিএনপির এ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার। কাউন্সিলর পদে একজন প্রতিবন্ধীর মনোনয়নপত্র জমা ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে প্রার্থী হয়েছেন একজন শারীরিক প্রতিবন্ধী। তাঁর নাম তসলিম হোসেন। তিনি কর্পোরেশনের ৪ নম্বর চান্দগাঁও ওয়ার্ডের কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন রবিবার। চট্টগ্রাম প্রতিবন্ধী উন্নয়ন সংস্থার (সিডিডিএস) সংগঠকদের সঙ্গে নিয়ে তিনি রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ে হাজির হয়ে তাঁর মনোনয়নপত্র দাখিল করেন। তসলিম হোসেনের বয়স ৩৬ বছর। তিনি চান্দগাঁও শহীদপাড়া এলাকার মরহুম ফিরোজ আহমেদের পুত্র। তিনি জানান, দ্বিতীয় শ্রেণীতে পড়াকালীন বাড়ির ছাদ থেকে পড়ে বাম হাতে ব্যথা পান। পরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে ভুল চিকিৎসা হয়। যে কারণে তার ওই হাত কেটে ফেলতে হয়েছে। বর্তমানে তিনি ব্যবসা করেন আসবাবপত্রের। উল্লেখ্য, গত ১৮ মার্চ প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তফসিল ঘোষণা করেন। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী রবিবার ছিল মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিন। আগামী বুধ ও বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষদিন ধরা হয়েছে ৯ এপ্রিল বৃহস্পতিবার। এই তিন সিটিতে ভোটগ্রহণ করা হবে ২৮ এপ্রিল মঙ্গলবার।
×