ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সোনারগাঁয়ে বাস চাপায় শ্রমিক নিহত হওয়ার জের

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, বাসে আগুন ভাংচুর, সংঘর্ষ

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৯ মার্চ ২০১৫

ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ, বাসে আগুন ভাংচুর, সংঘর্ষ

স্টাফ রিপোর্টার, নারায়ণগঞ্জ ॥ শনিবার সকালে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে বাস চাপায় এক গার্মেন্টস শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনাকে কেন্দ্র করে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উপজেলার ত্রিবর্দী এলাকা। বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঘাতক বাস ও একটি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যানের মোটরসাইকেল আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। পরে তারা আড়াইঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে ১০টি যানবাহন ভাংচুর করে। এ সময় পুলিশের সঙ্গে গার্মেন্টস শ্রমিকদের দফায় দফায় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। শ্রমিকদের ইট-পাটকেলের জবাবে পুলিশ লাঠিচার্জ ও ২ শতাধিক রাউন্ড রাবার বুলেট ছোঁড়ে। সংঘর্ষে পুলিশ, সাংবাদিক, শ্রমিকসহ ২০ জন আহত হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যানচলাচল বন্ধ হয়ে গেলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। দুর্ভোগে পড়ে শত শত যাত্রী। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে এক শ্রমিককে আটক করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ঘটনাস্থলের আশপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। নিহত শ্রমিকের নাম আমান উল্লা (৩০)। সে স্থানীয় চৈতী গার্মেন্টের প্রিন্টিং বিভাগের শ্রমিক। সে ঝালকাঠি জেলার নলছিটি থানার কামদেবপুর গ্রামের মৃত কেরামত আলীর ছেলে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সকাল সাড়ে সাতটায় সোনারগাঁও থেকে ঢাকাগামী স্বদেশ পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস (ঢাকা মেট্রো ব-১৪-৪৭৭১) টিপরদী এলাকায় পৌঁছলে পেছন থেকে অজ্ঞাত একটি ট্রাক ধাক্কা দেয়। বাসটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকা চৈতী গার্মেন্টসের শ্রমিক আমানকে চাপা দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই আমান মারা যায়। এ খবর গার্মেন্টসে ছড়িয়ে পড়লে সহকর্মীরা কাজ বন্ধ করে রাস্তায় নেমে আসে। সকাল সাড়ে আটটায় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা ঘাতক বাসটিতে আগুন ধরিয়ে মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে শ্রমিকদের শান্ত করার চেষ্টা করে। কিন্তু শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে মহাসড়কে ১০টি যানবাহন ভাংচুর করে। এক পর্যায়ে শ্রমিকরা বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির স্থানীয় ক্যামেরাপারসন আশিকের মোটরসাইকেলটিতে (ঢাকা মেট্রো-এ ৪২৩৭) আগুন ধরিয়ে দেয়। পুলিশ তাদের বাধা দিলে শুরু হয় ধাওয়া পাল্টাধাওয়া। শ্রমিকরা দু’দিক থেকে ইট-পাটকেল নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। পুলিশও পাল্টা লাঠিচার্জ ও বৃষ্টির মত রাবার বুলেট ছোঁড়ে। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো এলাকা। ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক। সকাল ১১টার পর পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। সংঘর্ষে সহকারী পুলিশ সুপার সরফদ্দিন, সোনারগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুল ইসলাম, এএসআই মামুন, কনস্টেবল রবিন, ফাহিম, শেখ নাইম, আল-আমিন, কবিরুল, সাংবাদিক আশিক, শ্রমিক পারভিন, জিয়াসমিন, আলেয়া ও গোলাপসহ কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে। আহত সাংবাদিক, পুলিশ ও শ্রমিকদের চিকিৎসার জন্য স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়েছে। ডেমরা ফায়ার সার্ভিসের দু’টি ইউনিট বাস ও মোটরসাইকেলের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। চৈতী গার্মেন্টসের শ্রমিকরা জানায়, এই স্থানে কয়েকদিন পরপরই শ্রমিকরা দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তারা নিহত শ্রমিকের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও একটি ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণের দাবি জানালেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। শনিবার শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিপূরণের দাবি জানালে গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ কোন আশ্বাস দেয় নি।। তাই শ্রমিকরা ক্ষিপ্ত হয়ে রাস্তায় নেমে আসে। চৈতি গার্মেন্টেসের সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক মিজানুর রহমান জানায়, ওই জায়গায় একটি ফুট ওভার ব্রিজ নির্মাণের জন্য আমরা সরকারের কাছে লিখিত আবেদন করেছি। চৈতি গার্মেন্টস কর্তৃপক্ষ নিহত শ্রমিকের পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা করবে। এই ঘটনার সঙ্গে সঙ্গে চৈতী গার্মেন্টসে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। সোনারগাঁও থানার ওসি কামরুল ইসলাম জানান, পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ ১৫০ রাউন্ড রাবার বুলেট ব্যবহার করেছে। ঘটনাস্থলের আশেপাশে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। একজনকে আটক করা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।
×