ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

পর্যটক আগমনে স্থানীয় লোকজন বেশ খুশি

৮১ দিন পর কক্সবাজার সৈকতে নারী-পুরুষের মিলনমেলা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৯ মার্চ ২০১৫

৮১ দিন পর কক্সবাজার সৈকতে নারী-পুরুষের মিলনমেলা

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ টানা হরতাল-অবরোধে স্থবির হয়ে পড়া বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে পর্যটন শিল্পে কিছুটা হলেও প্রাণচাঞ্চল্য ফিরে এসেছে। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের রবিবার থেকে হরতালের ঘোষণা না আসায় শনিবার সৈকত শহর কক্সবাজারে বসেছে পর্যটকদের মিলনমেলা। ঢালাওভাবে না হলেও দীর্ঘদিন পর পর্যটকের আগমনে সৈকত রানী কক্সবাজারে হোটেল, রেস্টুরেন্ট ও পর্যটন মৌসুমনির্ভর ব্যবসায়ীদের মুখে হাসি ফুটেছে। শনিবার পর্যটকের কোলাহলে মুখরিত হয়ে উঠেছে হিমছড়ি, দরিয়ানগর, রামুর বৌদ্ধ বিহার, সেন্টমার্টিন, ইনানী, বার্মিজ মার্কেটসহ জেলার আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলোতে। গত ৬ জানুয়ারির পর থেকে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের ডাকা টানা ৮১ দিনের অবরোধ আর হরতালে পেট্রোলবোমা আতঙ্কে পর্যটন মৌসুমে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত। এ কারণে কক্সবাজারে পর্যটন শিল্প ও ব্যবসায় ধস নেমেছিল। এতে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা লাখ লাখ টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ২৫ মার্চ থেকে হরতাল না থাকায় এবং রবিবারও হরতালের নতুন কর্মসূচী ঘোষণা দেয়া হয়নি দেখে কক্সবাজারে শত শত পর্যটক আগমন করার ফলে দীর্ঘদিন পর হলেও ফের মুখরিত হয়ে উঠেছে কক্সবাজার সৈকত। এতে কিছুটা হলেও পর্যটন শিল্পে হতাশা কমেছে। বেজায় খুশি হয়েছে স্থানীয়রা। সকাল থেকে পর্যটকদের বহনকারী গাড়ি হিমছড়ি, পাথুরে বীচ ইনানী, দরিয়ানগর, সোনাদিয়া, বৌদ্ধ বিহার, টেকনাফ, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার বিভিন্ন আকর্ষণীয় ও দর্শনীয় স্পটগুলোতে ভিড় করতে দেখা গেছে। পর্যটন শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যবসায়ীরা জানান, রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে পর্যটক ব্যবসায় ঘটে যাওয়া ক্ষতি কিছুটা হলেও পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে। কক্সবাজারের স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, আশানুরূপের চেয়ে কম হলেও দীর্ঘদিন পর সমুদ্রের বালিয়াড়িতে পর্যটকদের আগমন ঘটেছে দেখে খুবই আনন্দ লাগছে। আশা করি যদি সব রাজনৈতিক দলের নেতারা সহনশীল হয়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখেন, তাহলে সৈকত শহরের উজ্জ্বলতা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে আনন্দ আরও বেড়ে যাবে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির নেতারা বলেন, কোটি কোটি টাকার লোকসানের পর অবশেষে পর্যটকের আনাগোনায় ঈদের খুশির মতো আনন্দ লাগছে। পর্যটক আহমেদ রাজি বলেন, বর্তমানে রাজনৈতিক পরিস্থিতিসহ দেশের অবস্থা স্বাভাবিক মনে হওয়ায় স্ত্রী ও ছেলে মেয়েদের নিয়ে বেড়াতে এসে আনন্দ পাচ্ছি। ঢাকা যাত্রাবাড়ী থেকে আসা লুৎফর-রেজিয়া নামে এক দম্পতি জানান, বিয়ের পর থেকে কক্সবাজারে বেড়াতে আসতে ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও অবরোধ-হরতালে আসা হয়নি। বর্তমানে দেশের অবস্থা ভাল এবং সৈকত নগরী কক্সবাজারে আসতে পেরে নিজেদের অনেক ভাগ্যবান মনে করছি। হোটেল মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শুক্র ও শনিবার দুই দিনের জন্য আবার অনেকে রবিবারও হোটেলের কক্ষ বুকিং রেখেছেন। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার বলেন, সব মিলিয়ে অন্তত ২০ থেকে ৩০ হাজার পর্যটক এসেছে কক্সবাজারে। এদিকে দীর্ঘদিন পর কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ পর্যটন স্পটগুলোতে দেশী-বিদেশী পর্যটকদের আগমনকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার শ্যামল কুমার নাথ। তিনি বলেন, পর্যটকরা যাতে কোন হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রেখেই কাজ করছে পুলিশ। পুরুষ পুলিশের পাশাপাশি মহিলা পুলিশও পর্যটকদের সেবা দিতে প্রস্তুত আছে।
×