ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বৃহত্তর সংঘাতে ইয়েমেন

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ২৮ মার্চ ২০১৫

বৃহত্তর সংঘাতে ইয়েমেন

ইয়েমেনের গৃহযুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যে এক বৃহত্তর সাম্প্রদায়িক সংঘাতের পথ খুলে দিতে পারে বলে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশটিতে বাইরের শক্তিগুলোর স্থল অভিযানের সম্ভাবনা লক্ষণীয়ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেশটির শিয়া হুতি বিদ্রোহীদের ওপর সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলা অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে সুন্নি দেশ সৌদি আরব প্রতিবেশী ইয়েমেনে স্থল সৈন্য পাঠানোরও হুমকি দিচ্ছে। মিসরও প্রয়োজন হলে ইয়েমেনে সৈন্য পাঠানোর জন্য প্রস্তুত বলে ঘোষণা দিয়েছে। খবর সিএনএন, গার্ডিয়ান, আলজাজিরা ও বিবিসির। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের বিমান হামলা শুরুর পর মিসর সংঘাতক্লিষ্ট ইয়েমেনে সৈন্য প্রেরণে প্রস্তুত আছে বলে ঘোষণা দেয়ায় দেশটিতে স্থল অভিযানের সম্ভাবনা উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। আরব কর্মকর্তারা এখনও আশা করেন যে, গত বুধবার শুরু করা এবং যুক্তরাষ্ট্র, উপসাগরীয় রাষ্ট্রসমূহ, মিসর ও তুরস্ক সমর্থিত বিমান অভিযান ইরান সমর্থিত হুতি বিদ্রোহীদের দুর্বল করে দেবে এবং স্থল অভিযান চালানোর প্রয়োজন হবে না। হুতিরা প্রেসিডেন্ট আব্দরাব্বু মনসুর হাদিকে উৎখাতের চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে বিদ্রোহীদের নেতা আবদুল মালিক আল হুতি ঘোষণা করেছে যে, জোট স্থল অভিযান শুরু করলে ইয়েমেন আক্রমণকারীদের ‘কবরস্থানে’ পরিণত হবে। তিনি ‘বেআইনী ও বিনা উস্কানি’র আগ্রাসন বন্ধের আহ্বান জানান। এ মাসের প্রথমদিকে এডেনে পালিয়ে যাওয়া হাদি বৃহস্পতিবার রিয়াদ পৌঁছেছেন বলে সৌদি টেলিভিশন জানিয়েছে। সেখান থেকে তিনি দু’দিনব্যাপী আরব লীগ শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিতে মিসর যাবেন। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের যুদ্ধবিমানগুলোর বৃহস্পতিবার দ্বিতীয় দিনের মতো শিয়া বিদ্রোহী গোষ্ঠীর শক্ত ঘাঁটি সায়াদাসহ সানা, এডেন ও তায়েজে হুতি লক্ষ্যবস্তুগুলোর ওপর বোমাবর্ষণ করেছে। সৌদি আরব বলেছে, উপসাগরীয় সহযোগিতা পরিষদের (জিসিসি) দেশসহ জোটের ১০টি দেশ অভিযানে অংশ নেয়। এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার রাজধানী সানায় বিমান হামলায় ৬টি শিশুসহ অন্তত ২৫ জন নিহত হয়েছে। সানার পশ্চিমে হুতিদের সমর্থনদানকারী ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট আলী আবদুল্লাহ সালেহর অনুগত বাহিনীতে যোগদানকারী নতুন রিক্রুটদের অভ্যর্থনা শিবির লক্ষ্য করে বোমা হামলা চালানো হয়। বাসিন্দা ও নিরাপত্তা কর্মকর্তারা জানান, ইয়েমেনজুড়ে হামলার দ্বিতীয় রাতে সালেহর অনুগত বিমান ও স্থল বাহিনীর ঘাঁটিগুলোকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়। সালেহর বাহিনী হুতিদের অগ্রাভিযানকে শক্তি যোগাচ্ছে। সৌদি নেতৃত্বাধীন জোটের এক মুখপাত্র বলেন, যতদিন প্রয়োজন পড়বে ততদিন হুতিদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান চলবে। ব্রিগেডিয়ার আহমদ আল আসিরি আরও বলেন, এই মুহূর্তে’ স্থলবাহিনী মোতায়েনের কোন পরিকল্পনা নেই। তবে, সেনাবাহিনী সব রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত আছে। ‘অপারেশন ডিসাইশিভ স্টর্ম’ নামে পরিচালিত এই অভিযান ইরান ও তার আরব প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে আঞ্চলিক সংঘর্ষের হুমকি সৃষ্টি করেছে। আরব দেশগুলো ইয়েমেন, ইরাক, সিরিযা ও লেবাননে ইরানের ক্রমবর্ধমান প্রভাবে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে। মিসরের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সামেহ শুকরি বৃহস্পতিবার শার্ম আল শেখ-এ আরব পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের এক বৈঠকে বলেন, মিসর আরব ও উপসাগরীয় দেশগুলোর জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি মিসরের ঐতিহাসিক ও অবিচল দায়িত্বের আলোকে তার রাজনৈতিক ও সামরিক সমর্থন এবং সেই সঙ্গে বিমান ও নৌশক্তি দিয়ে এবং প্রয়োজন হলে স্থলবাহিনী দিয়ে জোটের সঙ্গে অংশগ্রহণ করবে। সৌদি নেতৃত্বাধীন সামরিক হস্তক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্র জোরালো সমর্থন দিচ্ছে এবং সঙ্কট ঘনীভূত হলে অন্যান্য বিশ্বশক্তিও এতে জড়িয়ে পড়তে পারে। ইয়েমেনের বিরুদ্ধে এই দ্রুত ও আকস্মিক অভিযানে ১০০ সৌদি জঙ্গী বিমান, ইউএই’র ৩০টি, কুয়েত ও বাহরাইনের ১৫টি করে, কাতারের ১০টি এবং জর্দান, মরক্কো ও সুদানের কিছু বিমান এবং সেই সঙ্গে পাকিস্তান ও মিসরের নৌবাহিনীর সহায়তা নেয়া হচ্ছে বলে একজন সৌদি উপদেষ্টা জানান। এসব দেশের সকলেই সুন্নি মুসলিম অধ্যুষিত। অপরদিকে হুতি বিদ্রোহীরা শিয়া মুসলিম, যারা আগেই ইয়েমেনের রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে ও বুধবার দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী এডেনের অংশবিশেষ দখল করেছে। সৌদিরা হুতিদের ইরানের শিয়া সরকারের অনুচর বলে বিবেচনা করে এবং ওই অঞ্চলে আরেকটি শিয়া নিয়ন্ত্রিত রাষ্ট্্র প্রতিষ্ঠার সম্ভাবনাকে ভয়ের চোখে দেখে। সিএনএনের সামরিক বিশ্লেষক লে. কর্নেল রিক ফ্রাংকোনা সৌদিদের প্রসঙ্গে বলেন, তারা তাদের দক্ষিণাঞ্চলীয় সীমান্তে একটি ইরান পরিচালিত রাষ্ট্র দেখতে চায় না।
×