ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অল-ওশেনিয়া ফাইনালে শিরোপা কার?

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ২৮ মার্চ ২০১৫

অল-ওশেনিয়া ফাইনালে  শিরোপা কার?

জাহিদুল আলম জয় ॥ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। এশিয়ার এই চারটি দেশই চলমান একাদশ বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনাল অর্থাৎ শেষ আটে উঠে আসে। তখন এশিয়াবাসীর প্রত্যাশার পারদটাও বেড়ে গিয়েছিল। তাহলে কি দ্বিতীয়বারের মতো অল-এশিয়ান ফাইনাল হবে এবারও? কিন্তু না, সেটা তো হচ্ছেই না। শুধু কি তাই, এবারের বিশ্বকাপে ফাইনাল মঞ্চে ঠাঁই হয়নি এশিয়ার কোন দেশের। কোয়ার্টার ফাইনালের আট দলের চারটিই ছিল এশিয়ার। কিন্তু নকআউট পর্বের প্রথম ধাক্কা থেকেই বিদায় নেয় বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তান। সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয় শুধু বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ভারত। কিন্তু শেষ চারের বাধা পেরোতে পারেনি দু’বারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরাও। অস্ট্রেলিয়ার কাছে হেরে ফাইনালের আগেই বিদায় নিতে হয়েছে মহেন্দ্র সিং ধোনির দলকে। ফলশ্রুতিতে দীর্ঘ ২৮ বছর পর আবারও এশিয়ার কোন দলবিহীন ক্রিকেট বিশ্বকাপের ফাইনাল হতে যাচ্ছে। রবিবারের ফাইনালে মহারণে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে ওশেনিয়া অঞ্চলের দুই দেশ অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। উল্লেখ্য, অস্ট্রেলিয়া একটি দ্বীপ-মহাদেশ, যা এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্বে ওশেনিয়া অঞ্চলে অবস্থিত। আর নিউজিল্যান্ড ওশেনিয়ার একটি দ্বীপরাষ্ট্র, যা অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব দিকে অবস্থিত। সর্বশেষ ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালও হয়েছিল এশিয়ার কোন দেশবিহীন। প্রায় তিন দশক আগে এশিয়ার ওই বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। কলকাতার ইডেন গার্ডেনে সেবার ক্রিকেটের জনকদের মাত্র ৭ রানে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বসেরার খেতাব জিতেছিল অজেয় অসিরা। বিখ্যাত ইডেনে টসজয়ী অসি অধিনায়ক এ্যালান বোর্ডার ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। ওপেনার ডেভিড বুনের ৭৫ ও মাইক ভেলেট্টার হার না মানা ৪৫ রানে ভর করে অসিরা সংগ্রহ করেছিল ৫০ ওভারে ৫ উইকেটে ২৫৩ রান। ২৫৪ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে মাইক গ্যাটিংয়ের ইংল্যান্ড নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেটে জড়ো করে ২৪৬ রান। অথচ এই বিশ্বকাপের দুই আয়োজক ভারত ও পাকিস্তান সেমিফাইনালে উঠে প্রথমবারের মতো অল-এশিয়ান ফাইনালের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল। কিন্তু ফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হয় দু’দেশই। ফলে নিজ মহাদেশে এশিয়ার দেশ বাদেই ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। তবে ১৯৮৭ সালের বিশ্বকাপই শেষ। এরপর আর কোন বিশ্বকাপের ফাইনালই এশিয়ার দেশ ছাড়া হয়নি। আয়োজনটা যেখানেই হোক না কেন, এশিয়ার যে কোন একটি দেশ ফাইনালে নাম লিখিয়েছে প্রতিটি আসরেই। ’৮৭ সালে না পারলেও ১৯৯২ বিশ্বকাপের ফাইনালে ওঠে পাকিস্তান। সেবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপে ইমরান খানের পাকিস্তান ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরবে ভাসে। ১৯৯৬ সালে উপমহাদেশের তিন দেশ ভারত, শ্রীলঙ্কা ও পাকিস্তানে বসে বিশ্বকাপযজ্ঞ। এবার ফাইনালে উঠে আসে শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়া। অসিদের হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ জেতে দ্বীপদেশ লঙ্কা। ১৯৯৯ সালে চার দেশকে সঙ্গে নিয়ে ইংল্যান্ড আয়োজন করে পরবর্তী বিশ্বকাপ। এবার ফাইনালে এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে পাকিস্তান। প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া। এই আসর থেকেই অসিদের অজেয় পথচলা শুরু হয়। ২০০৩ সালের ফাইনালেও উঠে আসে অসিরা। এবার তাদের প্রতিপক্ষ ভারত। সৌরভ গাঙ্গুলীর দলকে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন হয় অস্ট্রেলিয়া। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ফাইনালে এশিয়ার প্রতিনিধিত্ব করে শ্রীলঙ্কা। প্রতিপক্ষ সেই অস্ট্রেলিয়া। এবারও এশিয়ার দেশকে উড়িয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিক শিরোপা জয় করে রিকি পন্টিংয়ের দল। ২০১১ সালে ফের উপমহাদেশে ফেরে বিশ্বকাপ। এবার ভারত ও শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি স্বাগতিকের মর্যাদা পায় বাংলাদেশ। এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো অল-এশিয়ান ফাইনাল দেখে ক্রিকেটবিশ্ব। টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠে আসে শ্রীলঙ্কা। প্রতিপক্ষ ভারত। লঙ্কানদের আরেকবার কাঁদিয়ে ২৮ বছর পর ভারতকে বিশ্বসেরা করান মহেন্দ্র সিং ধোনি। এবার কী হচ্ছে, তা সবারই জানা। আরেকবার এশিয়ার কোন দেশ ছাড়াই মেলবোর্নে হতে যাচ্ছে ফাইনাল ম্যাচ। অল-ওশেনিয়া অঞ্চলের এই লড়াইয়ে কে বাজিমাত করে সেটাই এখন দেখার।
×