ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পথে পথে মিছিলের প্রতিরোধ, জনতার ঐক্যকে গড়েছি...

প্রকাশিত: ০৬:০৭, ২৮ মার্চ ২০১৫

পথে পথে মিছিলের প্রতিরোধ, জনতার ঐক্যকে গড়েছি...

মোরসালিন মিজান ॥ শিল্পকলা একাডেমির খোলা প্রান্তর। বেশ বড়সড়ো জায়গা। পুরোটাই নিয়ে নিয়েছেন উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর কর্মীরা! বিশাল প্যান্ডেল গড়েছেন এখানে। দুই দু’টি মঞ্চ। মাঝখানে বসার জায়গা। তবে কাউকে তেমন বসতে দেখা গেল না। বসার ফুরসৎ কই? উৎসব যে! সকলেই হাসি আনন্দে মেতেছিলেন। এভাবে প্রথম দিনেই জমে ওঠেছিল সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ২০১৫। সঙ্গীতের উৎসবে যোগ হয়েছিল নাচও। ছেলে-বুড়ো নেই, সবাই মিলে নেচেছেন। বর্ণাঢ্য শুরুর পাশাপাশি বাংলাদেশের আজকের বাস্তবতায় উদীচীর করণীয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে উৎসব থেকে। বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে গণসঙ্গীত যেভাবে ছিল, ভবিষ্যতেও তেমনি ভূমিকা রাখবে বলে আশা নবীন-প্রবীণ গণসঙ্গীত শিল্পী ও কর্মীদের। দেশের সর্বস্তরের মানুষের মাঝে গণসঙ্গীত ছড়িয়ে দেয়া, প্রচার প্রসার, গণসঙ্গীতকে সঙ্গীতের একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এ উৎসবের আয়োজন। উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সত্যেন সেনের জন্মদিবস উপলক্ষে প্রতিবছর উৎসবটি আয়োজন করে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। উৎসবের এবারের সেøাগানÑপথে পথে মিছিলের প্রতিরোধ, জনতার ঐক্য গড়েছি। এই সেøাগানে শুক্রবার বিকেলে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন বিশিষ্ট লোকসঙ্গীত সাধক ও শিল্পী স্বপন কুমার হালদার। উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার ও তাঁর মেয়ে শবনম সুরিতা ডানা। আয়োজনের শুরুতে সকলে মিলে জাতীয়সঙ্গীত পরিবেশন করেন। সেইসঙ্গে জাতীয় পতাকা ও উদীচীর নিজস্ব পতাকা উত্তোলন করা হয়। এর পরপরই সরব হয় মূল মঞ্চের বিপরীতে তৈরি করা উদ্বোধনী মঞ্চ। উৎসবের মঞ্চ হলেও, সমকালীন ভাবনা এর চরিত্র বদলে দেয়। পর্দা সরাতেই দৃশ্যমান হয় রাজনীতির নামে মানুষ পুড়িয়ে মারার বহ্নিউৎসব। পেট্রোলবোমায় খুন হওয়া নিরীহ নির্দোষ মানুষ, ঝলসে যাওয়া শরীর, ব্যান্ডেজ, গাড়ির ভগ্নাংশ এখানে বিশেষ উপস্থাপনা পায়। সেইসঙ্গে যোগ হয় কৃত্রিম ধোঁয়া। সব মিলে দুখিনী বাংলাদেশ যেন! কিন্তু না, এই বাংলাদেশ কারও কাম্য হতে পারে না। তাই প্রতিবাদ প্রতিরোধের ওপর জোর দিলেন শিল্পীরা। সমবেত কণ্ঠে গাইলেন জাগরণের গান। ভাষা আন্দোলনের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গাইলেনÑ সইমু না আর সইমু না অন্য কথা কইমু না/ যায় যদি ভাই দিমু সাধের জান...। একাত্তরের প্রতিরোধের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে গাইলেনÑ জনতার সংগ্রাম চলবেই/ আমাদের সংগ্রাম চলবেই...। এভাবে বেশ কিছু গানের যে মালা গাঁথাটি হয় তা থেকে উদীচীর গতকাল এবং আগামীর স্বপ্ন সম্পর্কে একটি সুন্দর ধারণা পাওয়া যায়। উদ্বোধনী পর্বের উল্লেখযোগ্য দিক ছিল, প্রবীণ সদস্যদের অংশগ্রহণ। শুধু অংশগ্রহণ নয়, হাসান ইমাম কামাল লোহানীর মতো প্রবীণরা এদিন নবীনদের সঙ্গে নেচেছেন। গেয়েছেন তো বটেই। সব মিলিয়ে মিশ্র অনুভূতির একটি বিকেল। সন্ধ্যার কিছু আগে মূল মঞ্চে শুরু হয় আলোচনা অনুষ্ঠান। উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানীর সভাপতিত্বে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক শংকর সাওজাল। বক্তব্য রাখেন উদীচীর সাধারণ সম্পাদক প্রবীর সরদার। আলোচনা শেষে সদ্য সমাপ্ত জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্যায়ের বিজয়ীদের হাতে সনদপত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেয়া হয়। একই উৎসবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের সম্মাননা জানানো হয়। সম্মাননা প্রাপ্তদের মধ্যে ছিলেনÑ সৈয়দ হাসান ইমাম, আশফাকুর রহমান খান, তিমির নন্দী, জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, মনোয়ার হোসেন খান, নমিতা ঘোষ, গোলাম রাব্বানী, কাজী তামান্না, ফকির আলমগীর, রুপা ফরহাদ, মালা খুররম, তরুণ মহলানবীশ, বুলবুল মহলানবীশ, মঞ্জুশ্রী দাশগুপ্তা, মোতাহার হোসেন, কামালউদ্দিন আহমেদ, শরফুজ্জামান, আবু নওশের, শফিউর রহমান দুলু, শিপ্রা ভদ্র, মুক্তি মহলানবীশ, শিল্পী মহলানবীশ, মঞ্জুলা দাশগুপ্তা প্রমুখ। সন্ধ্যায় উৎসবে গণসঙ্গীত পরিবেশন করেন গণসঙ্গীতের চূড়ান্ত প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিল্পীরা। দেশের প্রতিষ্ঠিত গণসঙ্গীত শিল্পী ও দলের পরিবেশনা এদিন বিশেষ উপভোগ করেন শ্রোতারা। দুই দিনব্যাপী উৎসব আজ শনিবার শেষ হবে।
×