ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানির প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:০৬, ২৮ মার্চ ২০১৫

ত্রিপুরা থেকে বিদ্যুত আমদানির প্রস্তুতি শুরু হচ্ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ ভারতের ত্রিপুরা থেকে সাড়ে ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করবে সরকার। প্রথম ধাপে ১০০ মেগাওয়াট এবং পরবর্তীতে আরও ২৫০ মেগাওয়াট আমদানি করা হবে। ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুতকেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুত আনা হবে বাংলাদেশে। এ লক্ষ্যে ৪৩ কিলোমিটার নতুন বিদ্যুত লাইন নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়নে ত্রিপুরা (ভারত)-কুমিল্লা (দঃ) উপকেন্দ্র (বাংলাদেশ)গ্রিড আন্তঃসংযোগ শীর্ষক একটি প্রকল্প প্রস্তাব করা হয়েছে পরিকল্পনা কমিশনে। প্রকল্পটির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১৭৯ কোটি ৪৫ লাখ ৪ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১৬২ কোটি ৭ লাখ ৪০ হাজার এবং বাস্তবায়নকারী সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ লিমিটেডের (পিজিসিবি) নিজস্ব তহবিল থেকে ১৭ কোটি ৩৭ লাখ ৬৪ হাজার টাকা ব্যয় করা হবে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়ন কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এ বিষয়ে পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য এম এম গোলাম ফারুক পরিকল্পনা কমিশনের মতামত দিতে গিয়ে জানান, বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাওয়ার পর গত ১৮ জানুয়ারি পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভার সুপারিশ অনুযায়ী বিদ্যুত বিভাগ উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) পুনর্গঠন করে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠিয়েছে। প্রকল্পটি জিওবি এবং পিজিসিবির নিজস্ব অর্থায়নে বাস্তবায়িত হবে। বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুতের চাহিদা পূরণের জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পটির মাধ্যমে ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লা (দঃ) পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার ৪০০ কেভি ডবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন এবং ১৬ কিলোমিটার ১৩২ কেভি ডবল সার্কিট সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। এ পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা কমিশন থেকে প্রকল্পটি অনুমোদনের সুপারিশ করা হয়েছে। বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বাংলাদেশের অন্যান্য অংশের মতো পূর্বাঞ্চলেও বিদ্যুতের চাহিদা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বর্ধনশীল এই চাহিদা পূরণের জন্য ২০১৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় ত্রিপুরার পালাটানায় উৎপাদিত বিদ্যুত থেকে প্রাথমিকভাবে ১০০ মেগাওয়াট এবং পরবর্তীতে ২৫০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। এ কারণে ত্রিপুরা (ভারত)-কুমিল্লা (দঃ উপকেন্দ্র) (বাংলাদেশ) গ্রিড আন্তঃসংযোগ প্রকল্পটি গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। বিদ্যুত খাতে যৌথ সহযোগিতার জন্য বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ২০১৪ সালের ৩ এপ্রিল সপ্তম জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ (জে ডব্লিউজি), জয়েন্ট স্টিয়ারিং কমিটি (জেএসসি) সভা ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। পালাটানা হতে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলে রেডিয়েল মোডে ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত আমদানি করার জন্য সীমানার উভয়পাশে সিস্টেমের কারিগরি প্রয়োজনীয়তা যাচাইয়ের জন্য যৌথ কারিগরি কমিটি (জেটিসি) গঠন করা হয়। কমিটিকে তিন মাসের মধ্যে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। পরবর্তীতে ২০১৪ সালের ১০ অক্টোবর অষ্টম জেডব্লিউজি বা জেএসসি সভা নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় জেটিসি চূড়ান্ত প্রতিবেদন জেএসসির কাছে দাখিল করে। সভায় উভয় দেশের মধ্যে বিদ্যুত সঞ্চালনের বিষয়ে বাণিজ্যিক চুক্তি চূড়ান্ত করা হয়। জরুরী ভিত্তিতে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পটি সম্পন্ন করার জন্য প্রস্তাব করা হয়। এ পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের ভৌত কাজ এবং ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করা হবে। প্রকল্পের আওতায় প্রধান কার্যক্রম হচ্ছে, ভারতের ত্রিপুরা থেকে বাংলাদেশের কুমিল্লা (দঃ) পর্যন্ত মোট ৪৩ কিলোমিটার (৪০০ কেভি ২৭ কিলোমিটার এবং ১৩২ কেভি ১৬ কিলোমিটার) নতুন লাইন নির্মাণ করা হবে। এছাড়া কুমল্লা (দঃ) উপকেদ্রে বিদ্যমান দুটি ১৩২ কেভি বে সম্প্রসারণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, চলমান ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় ২০১৫ সালের মধ্যে এক হাজার ৫৩২ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করার বিষয় উল্লেখ রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় ৪৩ কিলোমিটার নতুন সঞ্চালন লাইন নির্মাণ করা হবে। তাই প্রকল্পটি ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বছরভিত্তিক অর্থ বরাদ্দ চাহিদা ধরা হয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ৮৭ কোটি ৩৫ লাখ ৬৮ হাজার টাকা এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ৯২ কোটি ৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা।
×