ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাজধানীতে বোমা ও গ্রেনেডসহ চারজেএমবি গ্রেফতার

রাজনৈতিক অস্থিরতায় বড় নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ২৮ মার্চ ২০১৫

রাজনৈতিক অস্থিরতায় বড় নাশকতার প্রস্তুতি নিচ্ছিল

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তরার একটি বাড়ি থেকে আরজেস গ্রেনেড, হাতবোমা ও পেট্রোলবোমাসহ নিষিদ্ধ জঙ্গী সংগঠন জেএমবির চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। উদ্ধার হয়েছে ১২টি পেট্রোলবোমা, ৩০টি হাতবোমা, একটি আরজেস গ্রেনেড ও শক্তিশালী বোমায় ব্যবহৃত ৬০টি ডেটোনেটর। গ্রেফতারকৃতরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে ঢাকায় বড় ধরনের নাশকতা চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিল। বৃহস্পতিবার রাত দেড়টার দিকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে উত্তরার কসাইবাড়ির পূর্ব মোল্লারটেকের প্রেমবাগান এলাকায় একটি বাড়িতে অভিযান চালায় র‌্যাব-১০-এর একটি দল। অভিযানে জেএমবির চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা আমীর এবং এহসার সদস্য আঃ রাজ্জাক হায়দার ওরফে মামুন (৩৫), পিতা-সাইফুদ্দিন ভুট্টো, গ্রাম-মাহাজেরপুর, থানা-নবাবগঞ্জ, জেলা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ জেলার আমীর এবং গায়েরে এহসার সদস্য জিয়াউল বারী ওরফে ডালিম (৩২), পিতা-আব্দুর রহমান ম-ল, গ্রাম-পরাণপুর, থানা-নিয়ামতপুর, জেলা-নওগাঁ, জেএমবির দিনাজপুর জেলার আমীর ও এহসার সদস্য মোঃ কোরবান আলী ওরফে মোহাম্মদ আলী ওরফে হাঞ্জালা (৫৫), পিতা-মৃত আব্দুল বাকী সরকার, গ্রাম-ধর্মজাইন, থানা-বিরল, জেলা-দিনাজপুর ও জেএমবির গায়েরে এহসার সদস্য ও জেএমবির রংপুর জেলার অর্থ-সম্পাদক মোঃ মোফাজ্জল হোসেন (২২), পিতা- মাহতাব আলী, গ্রাম-বড় হাসেমপুর, থানা-চিরিরবন্দর, জেলা-দিনাজপুর গ্রেফতার হয়। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয় একটি আরজেস গ্রেনেড, ৩৪টি নন-ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ১৪টি ইলেকট্রিক ডেটোনেটর, ৩০ মিটার করডেক্স, আড়াই কেজি বোমায় ব্যবহারের স্পিøন্টার, আধা-কেজি গান পাউডার, এক কেজি পটাশিয়াম এক্সপ্লোসিভ, ৬টি বড় ককটেল, ২৪টি ছোট ককটেল, ১২টি পেট্রোলবোমা, আনুমানিক দুই কেজি কাঁচের মার্বেল, আধা কেজি সালফিউরিক এসিড, একটি ডেটোনেটর বক্স, এক বা-িল ইলেক্ট্রনিক তারসহ অস্ত্র প্রশিক্ষণের প্রেসি ও নাম সম্বলিত বিপুল পরিমাণ জিহাদি বই। র‌্যাব সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, বাসাটির মালিক বাংলাদেশ বিমানের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা আব্দুর রউফ। তবে ওই কর্মকর্তা স্ত্রী হোসনে আরা বেগম ও তিন ছেলে-মেয়ে নিয়ে পাশেই একই ধরনের একটি আধাপাকা বাসায় থাকেন। হোসনে আরা বেগম জানান, মাসখানেক আগে গ্রেফতারকৃতদের একজন নিজেকে মামুন নামে গার্মেন্ট ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে বাসাটি সাত হাজার টাকায় ভাড়া নেয়। দুই কক্ষের বাসায় তেমন কোন আসবাবপত্র ছিল না। বাসা ভাড়া নেয়ার সময় মামুন বলেছিল, স্ত্রী সন্তানসম্ভবা থাকায় এপ্রিলে বাসায় আসবে। কোন প্রকার যাচাই-বাছাই ছাড়াই বাসা ভাড়া দেয়ায় নিজের ভুল স্বীকার করেন তিনি। মামুনের আগে র‌্যাব সদর দফতরে কর্মরত সাইফুল ইসলাম মামুন নামের এক কর্মকর্তা গত জানুয়ারি থেকে ওই বাসায় থাকতেন। দুই মাস পরিবার নিয়ে থাকার পর তিনি বাসা বদলে অন্যত্র চলে যান। মামুন জানিয়েছেন, তিনি ওই বাসায় ভাড়া ছিলেন। তিনি ছাড়ার পর জঙ্গীরা হয়তো ভাড়া নেয়। যারা বাসা ভাড়া নিয়েছে, তাদের তিনি চেনেন না। বাসার টিনের ছাদের একতলা বাড়ির দুটি কক্ষে থাকত জেএমবি সদস্যরা। একটি কক্ষে শুধু একটি কাঠের চৌকি রয়েছে। উদ্ধারকৃত বিস্ফোরকগুলো চৌকির নিচে রাখা ছিল। র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড মিডিয়া বিভাগের পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, জেএমবি সক্রিয় রয়েছে। তারা সাথীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। তাদের কাছ থেকে চাঁদা সংগ্রহ করে দলকে সংগঠিত করতে কাজ করছে জেএমবি। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার সুযোগে রাজধানীতে বড় ধরনের নাশকতা চালানোর পরিকল্পনা করছিল গ্রেফতারকৃতদের। ব্যাপক ধবংসাত্মক কার্যক্রম চালিয়ে জেএমবি তাদের শক্তিশালী অস্তিত্ব জানান দেয়ার চেষ্টা করছিল। জেএমবি ঢাকার বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে থেকে কার্যক্রম চালানোর চেষ্টা করছে। গত ১ মার্চ থেকে বিস্ফোরক মজুদ শুরু করে। বিস্ফোরকগুলো চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে আনা হয়। গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
×