ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের কেউ ভোট দিতে পারে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৮ মার্চ ২০১৫

যারা মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, তাদের কেউ ভোট দিতে পারে না ॥ প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একাত্তরের পাক-হানাদারদের মতোই জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া দেশে গণহত্যা চালিয়ে যাচ্ছেন। কিন্তু উনি ৮১ দিন আন্দোলন করেও ব্যর্থ হয়েছেন, সেই ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে তিনি আর বের হয়ে আসতে পারবেন না। গত ৮১ দিনেও (হরতাল-অবরোধ) উনার আক্কেলে পানি পড়েনি, আর পড়বেও না। আর উনি (খালেদা জিয়া) কী আশায়, কার আশায় বসে আছেন? উনাকে সবাই ছেড়ে চলে গেছেন। উনার পাশে এখন তো আর কেউ নেই, উনি এখন একা। তবে আমরা কাউকে দেশের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। বাংলাদেশে জঙ্গীবাদ সৃষ্টি হবে না, হতে দেব না। দেশের জ্ঞানী-গুণী, সমাজের বিশিষ্টজনদের উদ্দেশে করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যাঁদের মধ্যে সামান্য বিবেক ও মনুষ্যত্ব আছে তাঁরা কখনই বীভৎস কায়দায় মানুষ পুড়িয়ে হত্যার সঙ্গে জড়িত, যারা নাশকতা ও ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে তাদের সমর্থন দিতে পারে না। ভোট দিতে পারে না। যাঁরা সমাজে জ্ঞানী-গুণী ও বিবেকবান বলে দাবি করেন তাঁরা কী করে এ অপশক্তির পাশে দাঁড়াবেন, সমর্থন দেবেন? বরং বিবেক ও মনুষ্যত্ব থাকলে মানবতাবিরোধী ও গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের প্রত্যাখ্যান করে সঙ্গ ছেড়ে দেবেনÑ এটাই দেশের মানুষ প্রত্যাশা করে। শুক্রবার মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে রাজধানীর খামারবাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। আলোচনায় অংশ নেন শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বীরবিক্রম, মাহবুব উল আলম হানিফ, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, ফজিলাতুন্নেছা ইন্দিরা ও এসএম কামাল হোসেন। কবি নির্মলেন্দু গুণের বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ নিয়ে লেখা ‘একটি কবিতা লেখা হবে’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আলোচনা সভা পরিচালনা করেন ড. হাছান মাহমুদ ও অসীম কুমার উকিল। সভাপতির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের নাশকতামূলক কর্মকা-ের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, উনি কীসের আশায় বাড়ি ছেড়ে দলীয় কার্যালয়ে গিয়ে বসে আছেন? মনে হচ্ছে আমাকে হত্যা না করে বোধহয় উনি ঘরে ফিরে যাবে না! কিন্তু আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়ে রাখলে উনি কী করে তা করবেন? আমার মৃত্যু নিয়ে কোন ভয় নেই। আমার যতক্ষণ নিঃশ্বাস আছে, ততদিন দেশের জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাব। খালেদা জিয়ার সাধ্য নেই তা থেকে আমাকে বিরত রাখতে পারেন। প্রধানমন্ত্রী কিছু সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, দেশে একটি শ্রেণী আছে যারা সবসময়ই যারা দেশের উন্নয়ন করে তাদের পেছনে লাগে, ষড়যন্ত্র করে। কীভাবে পেছনের দরজা দিয়ে ক্ষমতায় গিয়ে কিছু পাওয়া যায় সেই ফাঁক-ফোকর খুঁজেন। যিনি এতিমের টাকা পর্যন্ত মেরে খেয়েছেন তাঁর (খালেদা জিয়া) পক্ষ নিয়ে আবার দুর্নীতির বিরুদ্ধে কথা বলেন! তাঁরা কী কখনও হাসপাতালে গিয়ে পোড়া মানুষের যন্ত্রণার আত্মচিৎকার শুনেছেন? নিহত পরিবারগুলোর কী অবস্থা তার কী কখনও খোঁজ নিয়েছেন? তিনি বলেন, এঁদের মানবতাবোধের পক্ষে বিবেক জাগ্রত হয় না, হত্যাকারীর মানবতাবোধের বিষয়ে তাদের কণ্ঠ সোচ্চার! এরা আক্রান্তদের পক্ষে নন, আক্রমণকারী খুনী-হত্যাকারীর মানবাধিকার রক্ষা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েন। এটা কোন ধরনের মানসিকতা বা রাজনীতিÑ প্রশ্ন রাখেন প্রধানমন্ত্রী। ‘বিএনপি নেত্রী স্বাধীনতায় বিশ্বাস করেন না’ এমন মন্তব্য করে শেখ হাসিনা বলেন, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বে বিশ্বাস করেন না বলেই বিএনপি নেত্রী জাতীয় স্মৃতিসৌধে একাত্তরের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে যাননি। ২১ ফেব্রুয়ারি মহান একুশে ফেব্রুয়ারিতেও ভাষা শহীদদের শ্রদ্ধা জানতে উনি কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে যাননি। তিনি বলেন, বাঙালী জাতি এক সাগর রক্তের বিনিময়ে যুদ্ধ করে দেশকে স্বাধীন করেছে। তাই দেশের স্বাধীনতা নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেব না। তাই কারা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানতে স্মৃতিসৌধে যায়নি, তাদের একটি তালিকা করার হয়তো সময় এসে গেছে। তিনি বলেন, বিএনপির নেতারা বলেন বিএনপি নেত্রীকে নাকি অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে! বাস্তবে উনি মোটেই অবরুদ্ধ নন, বরং নিজেই গেটে তালা লাগিয়ে দলীয় কার্যালয়ে বসে আছেন। ওই কার্যালয়ে বসে তিনি দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন-সফলতার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের জন্য রাজনীতি করি বলেই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে দেশের উন্নয়ন হয়। আজ বাংলাদেশ সবদিক থেকে এগিয়ে যাচ্ছে। যারা সৃষ্টি করে তারাই সৃষ্টির মর্যাদা বুঝে। আর যারা সৃষ্টি নয় ধ্বংস করতে জানে, তারাই আজ বোমা মরে জীবন্ত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করছে, দেশের অর্থ-সম্পদ বিনষ্ট করছে। মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে। একাত্তর সালে যেভাবে হানাদাররা গণহত্যা চালিয়েছিল, ঠিক একই কায়দায় জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নেত্রী দেশে জ্বালাও-পোড়াও ও গণহত্যা চালাচ্ছেন। কারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারা গণহত্যারই সামিল। তিনি বলেন, নির্বাচন বানচালের নামে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের আগেও জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে বিএনপি নেত্রী দেশে শত শত মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। কিন্তু শত প্রতিকূলতার মধ্যেও নির্বাচন হয়েছে। নির্বাচনের পর একটি বছর দেশের মানুষ শান্তিতে ছিল। কিন্তু গত ৫ জানুয়ারি থেকে আবারও বিএনপি নেত্রী আন্দোলনের নামে নাশকতা শুরু করেছেন। ৮১ দিন ধরে হরতাল-অবরোধের নামে কত মানুষ উনি পুড়িয়ে অঙ্গার করে দিয়েছেন। ছাত্র-শিক্ষক, এমনকি অন্তঃসত্ত্বা মাকে পর্যন্ত পুড়িয়ে হত্যা করেছেন। কেউ তাঁর হাত থেকে রেহাই পাচ্ছেন না। ‘স্বাধিকার-থেকে স্বাধীনতা’- জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে দীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ইতিহাস তুলে ধরে বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর স্বাধীনতার ইতিহাস ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলেছে। একটি প্রজন্মকে স্বাধীনতার ইতিহাস জানতেই দেয়া হয়নি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর দেশে শুরু হয় হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি। অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারী জেনারেল জিয়া শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ধ্বংস নয়, বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত করা, নিষিদ্ধ সাম্প্রদায়িক রাজনীতি পুনরায় চালু, স্বাধীনতাবিরোধী ও যুদ্ধাপরাধীদের জেল থেকে মুক্তি দিয়ে রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেন। আর তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও বঙ্গবন্ধুর খুনীদের পুরস্কৃত এবং ১৫ ফেব্রুয়ারির প্রহসনের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর দুই খুনীকে জিতিয়ে এনে সংসদে পর্যন্ত বসিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা বলেন, জিয়াউর রহমানকে বিএনপির নেতারা বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রবর্তক বলার চেষ্টা করেন। উনি কীভাবে গণতন্ত্রের পক্ষের লোক হন? উনি তো প্রতি রাতে কার্ফুও দিয়ে দেশ চালিয়েছেন। ‘৭৫Ñ৮৬ পর্যন্ত ১০টি বছরই প্রতি রাতে কার্ফু দিয়ে দেশ চালানো হয়। তাই বহুদলীয় গণতন্ত্র নয়, জিয়াউর রহমান কার্ফু গণতন্ত্র দিয়েছিলেন। তিনি দেশবাসীকে সব অপশক্তির বিরুদ্ধে রূখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এ অগ্রযাত্রা কেউ-ই বাধাগ্রস্ত করতে পারবে না। লাখো শহীদের আত্মত্যাগ কখনই বৃথা যাবে না।
×