ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

সব ফসলেরই ফলনে রেকর্ড ॥ কৃষিতে বিপ্লব

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ২৮ মার্চ ২০১৫

সব ফসলেরই ফলনে রেকর্ড ॥ কৃষিতে বিপ্লব

এমদাদুল হক তুহিন ॥ কয়েক বছর ধরে ফসল উৎপাদনে যোগ হচ্ছে নতুন নতুন মাইলফলক। রেকর্ডের পর রেকর্ড ভেঙ্গে উৎপাদন ক্ষেত্রে যোগ হচ্ছে নতুন রেকর্ড। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে সামনের দিকে এগিয়ে চলছে দেশের কৃষি খাত; নীরবে চলছে কৃষি বিপ্লব। সংশ্লিষ্ট প্রতিটি খাতেই এখন উন্নয়নের জোয়ার। মাত্র ৫ বছরে ব্যবধানে খাদ্যশস্যের ( চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৮.৭২ লাখ মেট্রিক টন। অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানে চাল, গম ও ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে যথাক্রমে ৩০.৪, ৪.৫৩ ও ১৩.৭৯ লাখ মেট্রিক টন। চাল, গম ও ভুট্টা নয়; উৎপাদন বাড়ছে প্রতিটি কৃষি পণ্যের। বিগত ৫ বছরে দেশে আলুর উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। তবে আলু মজুদের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখনও শুরু হয়নি। পিছিয়ে নেই ভিটামিনখ্যাত শাকসবজির উৎপাদনও, বেড়েছে ৩২.৯৭ লাখ মেট্রিক টন। সারাদেশে তেল, ডাল ও মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বেড়েছে ১.২৫, ২.৪ ও ১১. ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। ২০০৮ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কতৃক ফসলের উৎপাদন সম্পর্কিত একাধিক পরিসংখ্যান থেকে এসব তথ্য পাওয়া যায়। দেশে নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে ফসলের উৎপাদন প্রতিবছরই বৃৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ, সারের দাম হ্রাসে একাধিক রেকর্ডসহ সরকারের নানামুখী কৃষিবান্ধব পদক্ষেপের কারণে মাঠ পর্যায়ে কৃষি পণ্যের উৎপাদন বাড়ছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। জানা যায়, চলতি অর্থবছরে অগ্রগতি পুরোদমে এগিয়ে চলছে। গত ৮ মাসে উৎপাদন পর্যায়ের সকল খবরই ইতিবাচক। শুধুমাত্র উৎপাদন বৃদ্ধি নয়, কৃষি পণ্যের রফতানিতেও মনোযোগ দিয়েছে বাংলাদেশ। গত বছরের ডিসেম্বরে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো ১২ হাজার টন চাল রফতানি হয়। এর মাধ্যমে চাল রফতানিকারক দেশের তালিকায় উঠে আসে বাংলাদেশের নাম। শ্রীলঙ্কায় মোট ৫০ হাজার টন চাল রফতানির চুক্তি রয়েছে। বর্তমানে দেশ থেকে সুগন্ধী জাতীয় চাল রফতানি হচ্ছে। চাল রফতানির বিষয়টিকে কৃষিতে দেশের স্বয়ংসম্পূণর্তা হিসাবেই দেখা হচ্ছে। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের নানামুখী পদক্ষেপের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবেই কৃষি ক্ষেত্রে এসব সফলতা আসছে বলে মনে করেন কৃষি বিশেষজ্ঞরা। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে খাদ্যশস্যের ( চাল, গম ও ভুট্টা) উৎপাদন ৩৩৩.০৩ লাখ মেট্রিক টন। মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে ৪৮.৭২ লাখ মেট্রিক টন উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে এসে তা দাঁড়ায় ৩৮১.৭৫ লাখ মেট্রিক টন। চলতি অর্থবছর শেষ না হওয়ায় এখনও ২০০১৪-১৫ অর্থবছরের পুরো হিসাব প্রকাশিত হয়নি। এছাড়াও চলতি অর্থবছরের অনেক ফসল এখনও মাঠ পর্যায়ে। জানা যায়, চলতি অর্থবছরে অগ্রগতি পুরোদমে এগিয়ে চলছে। গত ৮ মাসে উৎপাদন পর্যায়ে তেমন কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এ বছর সারাদেশে রোপা আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল ১৩৪.৫৩ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদিত হয়েছে ১৩১.৯০২ লাখ মেট্রিক টন, যা পূর্বের বছরে তুলনায় অনেক বেশি। অন্যদিকে আউশের উৎপাদনও গত কয়েক বছরের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে। এ বছর আউশ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ২৪.২৮ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদিত হয়েছে ২৩.২৮ লাখ মেট্রিক টন। এর প্রকৃত উৎপাদনও গত অর্থবছরের তুলনায় বৃদ্ধি পায়। মাঠে এখন বোরো ধানের মৌসুম। জানা গেছে, পুরোদমে এগিয়ে চলছে মৌসুমের কাজকর্ম। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্যমতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সারাদেশে চাল উৎপাদিত হয় ৩১৩.১৭ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরে চাল উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৩৪৩.৫৭ লাখ মেট্রিক টন। দেশে নানা ধরনের কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের কারণেই মাত্র ৫ বছরে চালের উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৩০.৪ লাখ মেট্রিক টন। একইভাবে গমের উৎপাদনও দিন দিন বৃদ্ধি পেয়ে চলছে। সারাদেশে ২০০৮-০৯ অর্থবছরে গম উৎপাদিত হয় ৮.৪৯ লাখ মেট্রিক টন। ৫ বছরে ৪.৫৩ লাখ মেট্রিক টন গম উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ অর্থবছরে দাঁড়ায় ১৩.০২ লাখ মেট্রিক টন। সরকার কর্তৃক নানা ধরনের প্রণোদনা দেয়ায় চালের মতো গমের উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়। তথ্যমতে, ২০০৮-০৯ বছরে ভুট্টার উৎপাদন ছিল ১১.৩৭ লাখ মেট্রিক টন। ৫ বছরের ব্যবধানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৩-১৪ তে দাঁড়ায় ২৫.১৬ লাখ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ১৩.৭৯ লাখ মেট্রিক টন। জানা যায়, ভুট্টার উৎপাদন বৃদ্ধিতে সরকার ‘ভুট্টা প্রণোদনা’ নামে একটি প্রকল্প পরিচালনা করে। গত ২০০১১-১২ রবি মৌসুমে ভুট্টা উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে ৬.৫০ কোটি টাকার প্রণোদনা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করে। যার প্রভাব মাঠ পর্যায়ে পড়েছে বলে অনেকের ধারণা। অন্যদিকে খাদ্যশস্যের মতো বিগত বছরগুলোতে আলুর উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সারাদেশে আলু উৎপাদিত হয় ৬৭.৪৭ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯৬.৯২ লাখ মেট্রিক টন। মাত্র ৫ বছরে প্রায় ৩০ লাখ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। চলতি অর্থবছরে আলুর উৎপাদন অতীতের রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আলু উৎপাদন বৃদ্ধি পেলেও দেশে আলুর সংরক্ষণের পর্যাপ্ত উপকরণের অভাব রয়েছে। নামমাত্র কয়েকটি হিমাগার থাকার কারণে কৃষক পর্যায়ে প্রতিবছরই কৃষকরা আলুর ন্যায্যমূল্য পায় না। নষ্ট হয়ে যায় বস্তা ভর্তি কয়েক হাজার টন আলু। আলু সংরক্ষণে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এখন সময়ের দাবি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের সূত্র মতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে সারাদেশে বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি উৎপাদিত হয় ১০৬.২২ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১৩৯.১৯ লাখ মেট্রিক টন। ৫ বছরের ব্যবধানে শাকসবজির উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ৩২.৯৭ লাখ মেট্রিক টন। তবে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে আগের তুলনায় কম, যা ১৩৭.৬০ লাখ মেট্রিক টন। জানা যায় ধান, চাল, গম, ভুট্টার ও শাকসবজির মতো সারাদেশে তেল জাতীয় ফসলের উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে তেল জাতীয় ফসলের মোট উৎপাদন হয় ৮.৪ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৯.৬৫। আর চলতি অর্থবছরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০.২৩ লাখ মেট্রিক টন। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্যমতে, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে দেশে ডাল জাতীয় ফসলের উৎপাদন হয় ৫.৮৪ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ডালের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৮.২৪ লাখ মেট্রিক টন। এক্ষেত্রে ৫ বছরে উৎপাদন বৃদ্ধি পায় ২.৪ লাখ মেট্রিক টন। চাল, ডাল, শাকসবজির মতো মসলা জাতীয় ফসলেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশে। ২০০৮-০৯ অর্থবছরে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন ছিল ১৬.৬৬ লাখ মেট্রিক টন। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৮.০২ লাখ মেট্রিক টন। ৫ বছরের ব্যবধানে মসলা জাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে ১১. ৩৬ লাখ মেট্রিক টন। শুধুমাত্র একটি ফসল নয়, প্রায় প্রতিটি ফসলের উৎপাদনই দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানা ধরনের ফসল উৎপাদনের তথ্য সঙ্গত কারণে অন্ধকারেই থেকে যায়। গণমাধ্যমে খুব কম সময়েই প্রকাশ্যে আসে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলার হরশী গ্রামের কৃষক হিমেল জনকণ্ঠকে বলেন, আগের তুলনায় এখন বেশি ফসল উৎপাদন হয়। কৃষি সম্প্রসারণের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় সাহায্য করে যাচ্ছেন। সারের দাম কম থাকায় আমরা সহজেই সার কিনতে পাচ্ছি। সরকার নানা ধরনের সহায়তা করছে। সারের দাম হ্রাসে বিপ্লব, সুষম ও জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধি ॥ কৃষিবান্ধব বর্তমান সরকারের নেয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে সারের দাম হ্রাস উল্লেখযোগ্য। বলা হয়ে থাকে সারের দাম হ্রাসে দেশে বিপ্লব ঘটেছে। কয়েক দফায় সারের দাম হ্রাসের ক্ষেত্রে ইউরিয়ার তুলনায় নন ইউরিয়াকেই প্রাধান্য দেয়া হয়। ধারণা করা হয়ে থাকে, সুষম সারের ব্যবহারের কারণে সব রকমের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণের সূত্র মতে, নন ইউরিয়া সারের ব্যবহার কৃষক পর্যায়ে দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা মাটির উর্বরতা ও স্বাস্থ্য সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলছে। আর এসব কারণে ফসল উৎপাদন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে দাবি করা হয়। শুধুমাত্র সুষম সার নয়, জৈব সারের ব্যবহার বৃদ্ধিতেও কৃষি সম্প্রসারণ একটি কর্মসূচী হাতে নেয়। জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধির লক্ষ্যে ‘মাটির স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জৈব সার উৎপাদন ও ব্যবহার কর্মসূচী’ শীর্ষক একটি কর্মসূচী ২০০৯-২০১২ সাল পর্যন্ত ৬০টি জেলার ৩০০টি উপজেলায় মোট ১৮০০টি ব্লকে বাস্তবায়িত হয়, যা ফসল উৎপাদন বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে বলে দাবি করা হয়ে থাকে। মানসম্মত বীজ সরবরাহ ॥ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে মাধ্যমে বীজ সরবরাহে কৃষককে প্রণোদনা সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। এছাড়াও বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় প্রদর্শনীভুক্ত কৃষকদেরকে বিনামূল্যে মানসম্পন্ন বীজ প্রদান করা হয়। উন্নতমানের বীজ সরবরাহের কারণে মাঠ পর্যায়ে ফসল বাড়ছে বলে প্রচলিত অভিব্যক্তি রয়েছে। সেচ ব্যবস্থাপনা ॥ সেচ ব্যবস্থাপনা উৎপাদন বৃদ্ধির একটি প্রধান কৌশল। কৃষি সম্প্রসারণের সূত্র মতে, দেশে সেচের আওতা এলাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। ২০০৮-০৯ সালে সেচের আওতাধীন জমির পরিমাণ ৫১. ২৬ লাখ হেক্টর হলেও ২০১১-১২ তে এসে তা দাঁড়ায় ৫৩.৪২ লাখ হেক্টর। চলতি মৌসুমে এই বৃদ্ধির হার আরও বাড়বে। জানা যায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুত সরবরাহ ছাড়াও সরকার বিদ্যুতচালিত সেচ যন্ত্রেও ক্ষেত্রে বিদ্যুত বিলে ২০ শতাংশ রিবেট প্রদান করে। এছাড়াও সেচ কাজে রাত ১১টা থেকে ভোর ৬টা পর্যন্ত বিদ্যুত সরবারহে অগ্রাধিকার প্রদান করা হয়ে থাকে। কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ॥ দেশে কৃষি খাতে দিনদিন শ্রমিকের সংখ্যা হ্রাস পাচ্ছে। বাংলাদেশের আদি পেশা কৃষি হলেও কৃষকের সন্তান হয়েও কেউ আর ওই পেশায় ফিরে যেতে চায় না। ফলে সরকার ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ২০১০ সাল থেকে কৃষিকে যান্ত্রিকীকরণ করতে ব্যাপক কর্মসূচী হাতে নেয়। ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি-১ম পর্যায়’ প্রকল্প গ্রহণ করে। ওই প্রকল্পের অধীনে ২০১০ সাল থেকে ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কৃষককে কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে নির্দিষ্ট কিছু জেলায় ২৫ শতাংশ ভর্তুকি দেয়া হয়। প্রকল্পের ব্যাপক সফলতার কারণে নতুন করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ‘খামার যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি-২য় পর্যায়’ প্রকল্প গ্রহণ করে। আর এই প্রকল্পের অধীনে দেশের প্রতিটি জেলার সব উপজেলায় কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয়ে ৩০ শতাংশ উন্নয়ন সহায়তা দিচ্ছে। ধারণা করা হয়ে থাকে, কৃষি খাতের যান্ত্রিকীকরণের কারণে দিন দিন সব ধরনের ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ প্রসঙ্গে কৃষি যন্ত্রপাতি বিশেষজ্ঞ ও প্রকৌশলী সুরজিৎ সরকার জনকণ্ঠকে বলেন, সরকারের নানামুখী কৃষিবান্ধব পদক্ষেপের প্রভাব মাঠ পর্যায়ে পড়ছে বলেই দেশে দিন দিন কষি পণ্যের উৎপাদন বাড়ছে। কৃষিতে তথ্যপ্রযুক্তির প্রসার ॥ বর্তমানে বাংলাদেশের প্রতিটি সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠান অন লাইনে তাদের সেবা ও কার্যক্রমের বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করে আসছে। প্রাত্যহিক কার্যক্রম থেকে মাসিক কার্যক্রমের খুঁটিনাটির অধিকাংশই জনগণ ইন্টারনেট ব্যবহার করে জানতে পারছেন। সরকারের ডিজিটাল কর্মসূচীর আওতায় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বিভিন্ন ধরনের আইসিটি কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে। অধিদফতরের ১৫০টি কম্পিউটারকে সংযুক্ত করে উচ্চগতির লোকাল এরিয়া নেটওয়ার্ক (ল্যান) স্থাপন করা হয়েছে, এমনকি সম্প্রসারণের প্রধান কার্যালয়কে ওয়াইফাই নেটওয়ার্কের আওয়াতায় আনা হয়েছে। অধিদফতরের মাঠ পর্যায়ের অফিসসমূহে ১০৪৩টি কম্পিউটার, ৩০০টি ল্যাপটপ, ১০৪৩টি প্রিন্টার, ৩০০টি মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ও ৪৫০টি মডেম সরবরাহ করা হয়েছে। ফলে দেশের যে কোন স্থান থেকে কৃষক চাইলেই কৃষি সম্পর্কিত কোন তথ্য অতি সহজে জানতে পারছে। ধারণা করা হয় সঠিক তথ্য ও কর্মকর্তাদের দিকনির্দেশনার কারণে মাঠ পর্যায়ে ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষক তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র (ফিয়াক) ॥ দেশে প্রায় ৭২৭টি কৃষি তথ্য ও পরামর্শ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। এই কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে সার্বক্ষণিক কৃষি সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ফসল, মৎস্য ও পশুপালন সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্য এই সেবা কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে পাওয়া যায়। ডিজিটাল প্রযুক্তির বর্তমান দুনিয়ায় ঘরে বসেই কৃষক তার কৃষি সম্পর্কিত সকল তথ্য জানতে পারছেন। কৃষি অর্থনীতিবিদ সমিতির সভাপতি ও সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য ড. শামসুল আলম কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জনকণ্ঠকে বলেন, বিগত ৬ বছরে কৃষি ক্ষেত্রে চমৎকার সাফল্য এসেছে। কৃষি পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি অত্যন্ত সাফল্যের পরিচায়ক। দেশে উৎপাদন বৃদ্ধির কারণে কৃষি পণ্যের মূল্য যথেষ্ট কমে এসেছে।
×