ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিধ্বংসী অসিতোপে ভারত খানখান হারল ৯৫ রানে

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৭ মার্চ ২০১৫

বিধ্বংসী অসিতোপে ভারত খানখান হারল ৯৫ রানে

মিথুন আশরাফ ॥ ভারতকে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়া ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করতেই কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকর জানিয়ে দিলেন, ‘দুর্দান্ত খেলেই জিতেছে অস্ট্রেলিয়া ভারত হেরেছে ৯৫ রানে। স্টিভেন স্মিথের শতক (১০৫)। তার সঙ্গে এ্যারন ফিঞ্চের (৮১) দুর্দান্ত ব্যাটিং। আর জনসনের ম্যাচ শেষ করে দেয়ার শক্তিশালী ক্ষমতাই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে।’ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম টুইটারে টেন্ডুলকরের এ তাৎক্ষণিক বার্তাই বুঝিয়ে দিচ্ছে ম্যাচ হয়েছে একপেশে। যেখানে ভারতের বিশেষ কিছুর দেখা মিলেইনি। না হলে টেন্ডুলকর কী আর শুধু অস্ট্রেলিয়া নিয়েই বলতেন। ভারত যে বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার সামনে এমনভাবে নড়বড়ে হয়ে বড় ব্যবধানে হারবে, তাতে আসলে টেন্ডুলকরও আর সবার মতো হতবাক! অস্ট্রেলিয়ার ৩২৮ রান অতিক্রম করতে গিয়ে ২৩৩ রানেই অলআউট হয়ে যায় ভারত। ভাবাই যায় না। কী শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপ। রোহিত শর্মা, শিখর ধাওয়ান, বিরাট কোহলি, অজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রবীন্দ্র জাদেজা আছেন। অথচ এমন ব্যাটিং ধস নেমে গেল। টেন্ডুলকর স্মিথ নিয়ে কথা বললেন, ঠিক আছে। স্মিথ ৯৩ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলেছেন। আবার আউট হওয়ার আগে ফিঞ্চের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে যে ১৮২ রানের জুটি গড়েছেন, তা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে এ উইকেটে করা সর্বোচ্চ রানের জুটি। টেস্ট (৫১ শতক) ও ওয়ানডেতে (৪৯ শতক) মিলিয়ে শতকের শতক করা বিশ্বের সেরা ব্যাটসম্যান টেন্ডুলকর ফিঞ্চের কথাও বললেন, তাও ঠিক আছে। যখন দলের উইকেট স্কোরবোর্ডে থাকা জরুরী, তখন একদিকে স্মিথ মারমুখী হয়ে খেলেছেন, আরেকদিক আগলে রেখেছেন ফিঞ্চ। ১১৬ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় ৮১ রানও করেছেন। দুইজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়া তো ৭ উইকেটে ৫০ ওভারে ৩২৮ রান করেছে, যা বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে সর্বোচ্চ স্কোর করার রেকর্ড! এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে কোন দল ৩০০ রানই করতে পারেনি। সেখানে অস্ট্রেলিয়া আরও ২৮ রান বেশি করেছে। টেন্ডুলকর বললেন জনসনের কথা। কিন্তু কেন? জনসন পেস বোলার। স্কোরবোর্ড দেখলে খুব যে ভাল বল করেছেন তাও বোঝা যাচ্ছে না। ১০ ওভার বল করে ২ উইকেট নিয়েছেন ঠিক, তবে রান দিয়েছেন ৫০। তাহলে জনসনে মুগ্ধ কেন টেন্ডুলকর? কারণ তো অবশ্যই আছে। তা ব্যাখ্যা না করলেও খানিক বোঝা যায় কি ইঙ্গিত করতে চেয়েছেন টেন্ডুলকর। অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে যখন ৪৭.৫ ওভারে ২৯৮ রান যুক্ত হয়, তখন এত রান হবে ভাবাই যায়নি। অথচ এ সময় ওয়াটসন আউট হতেই জনসন ব্যাট হাতে নেমে কি যে ব্যাটিং শুরু করেন। ৯ বল খেলার সুযোগ পান। চারটি চার ও ১ ছক্কায় ২৭ রান করে ফেলেন। শামির ৪ বলে তিন বাউন্ডারিসহ ১৩ রান নেন। আর মোহিত শর্মার ৫ বল এক চার ও এক ছক্কাসহ ১৪ রান নিয়ে নেন! ব্যাটিংয়ে যেমন স্কোরকে দ্রুত বাড়িয়ে দিয়ে অস্ট্রেলিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেন ম্যাচ, ঠিক তেমনি স্কোরবোর্ডে যতই মাত্র ২ উইকেট নিয়েছেন জনসন লেখা থাক, রোহিত শর্মা ও বিরাট কোহলিকে আউট করে দিয়েই সব শেষ করে দেন। ম্যাচের ৭৬ রানে ধাওয়ান (৪৫) আউটের পর ৭৮ রানে কোহলি (১) ও ৯১ রানে রোহিতকে (৩৪) আউট করেন জনসন। ৩ গুরুত্বপূর্ণ উইকেট পড়ে যাওয়ার পরই ভারতের ব্যাটিং পঙ্গু হয়ে পড়ে। সেখান থেকে সুরেশ রায়না, ধোনিরা আর কতদূর দলকে নিতে পারবেন। তখন যেন ধোনির মাথায় একটি বিষয়ই কাজ করে, উইকেটে থেকে যত বেশি রান করা যায়। ব্যবধান যত কম করা যায়। তাই তো ধোনি উইকেট আঁকড়ে থাকলেন। করলেন সর্বোচ্চ ৬৫ রানও। কিন্তু অন্যরা যেন হাল ছেড়ে দেন। ব্যাট হাতে আসেন। একটু পর পরই সাজঘরে ফেরেন। ১০৮ রানে রায়না (৭), ১৭৮ রানে কিছুটা প্রতিরোধ গড়া রেহানে (৪৪), ২০৮ রানে জাদেজা (১৬) ২৩১ রানে স্বয়ং ধোনি, ২৩২ রানে অশ্বিন (৫), মোহিত শর্মা (০), ২৩৩ রান যাদব (০) আউট হয়ে যান। ৪৬.৫ ওভারে খেলাও শেষ হয়ে যায়। মাইকেল ক্লার্কের দল অস্ট্রেলিয়া জিতে ফাইনালে উঠে যায়। ম্যাচে ধোনিদের খুঁজেই পাওয়া যায়নি। তাই তো যারা ম্যাচে আধিপত্য বিস্তার করেছেন তাদেরই নিজের টুইটার বার্তায় স্থান দিয়েছেন টেন্ডুলকরও। তবে বাংলাদেশী ক্রিকেটপ্রেমীদের সেই সব বিষয় নিয়ে কিছু আসে যায় না। রবিবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলা হবে। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড শিরোপা লড়াইয়ে মুখোমুখি হবে। সেই ম্যাচ খেলতে ভারতকে হারিয়ে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়ে ফাইনালে উঠেছে অস্ট্রেলিয়া। এসব নিয়ে বাংলাদেশের কারও মাথাব্যথাই নেই। সবার মাথাব্যথা একটা বিষয় নিয়েই। এক বৃহস্পতিবারে (১৯ মার্চ) আম্পায়ারের সুবিধা নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে দিয়েছিল ভারত। বিশ্বকাপ থেকে বিদায় করে দিয়েছিল। প্রকৃতির কী নিয়ম। পরের বৃহস্পতিবারেই এবার মাঠের খেলায় ভারতকে খুঁজেই পাওয়া গেল না। যেন বাংলাদেশকে অমনভাবে বিদায় করে দেয়ার শোধই নিল অস্ট্রেলিয়া। ফাইনালে খেলাও নিশ্চিত করে নিল।
×