ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গণজাগরণ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৭ মার্চ ২০১৫

গণজাগরণ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ স্বাধীন বাংলাদেশ তার বয়স চুয়াল্লিশ পূর্ণ করে পঁয়তাল্লিশে পা রাখল। তাই দেশের জন্মদিনে বৃহস্পতিবার এক অন্যরকম শপথে জেগে উঠেছিল বাঙালী। সারাদেশেই নতুন প্রজন্মের অভূতপূর্ব গণজাগরণ এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে এবারের স্বাধীনতা দিবসে। রাস্তায় বের হওয়া মানুষের হাতে বা কপালে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই লেখা সংবলিত কাপড় বাঁধা, শিশু-কিশোরদের হাতে, কারও গালে বা কপালে আঁকা ছিল রক্তস্নাত জাতীয় পতাকা, প্রিয় মাতৃভূমির মানচিত্র। তরুণ প্রজন্মের ছেলেদের গায়ে জাতীয় পতাকাসদৃশ শর্ট পাঞ্জাবি বা গেঞ্জি এবং মেয়েরা লাল-সবুজের মিশ্রণে জাতীয় পতাকার মতো শাড়ি পরে অংশ নিয়েছিল এবারের স্বাধীনতার আনন্দ-উৎসবে। তবে এবারের স্বাধীনতা দিবসে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ নির্মূল, স্বাধীনতাবিরোধী রাজনৈতিক দল জামায়াত নিষিদ্ধ, যুদ্ধাপরাধীদের চলমান বিচার দ্রুত শেষ করে সব রায় কার্যকর এবং রাষ্ট্রদ্রোহী অশুভ শক্তির সকল নাশকতা-ষড়যন্ত্র ঐক্যবদ্ধভাবে মোকাবেলার দাবি উচ্চারিত হয়েছে সর্বত্র। এই দাবি এখন লাখো-কোটি প্রাণের দাবি। দেশের জন্মদিনের উৎসবে এদেশের কোটি কোটি মানুষের শ্রদ্ধা, উন্মাদনা আর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখার দীপ্ত শপথে বলিয়ান হতে দেখেছে দেশবাসী। রাজধানী থেকে শুরু করে শহর-বন্দর-গ্রামে স্বাধীনতা দিবসের প্রতিটি কর্মসূচীতে নতুন প্রজন্মের ঢল, তাদের চোখে-মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখার দীপ্ত শপথ আর স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণার প্রচ-তাও প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানম-ির ৩২ নম্বর জাতির জনকের বাসভবন, টুঙ্গিপাড়া বঙ্গবন্ধুর মাজার প্রাঙ্গণসহ স্বাধীনতা দিবসের প্রতিটি অনুষ্ঠানে হাজারও মানুষের বলিষ্ঠ কণ্ঠের ‘জামায়াত-শিবির-আইএসআই’র আস্তানা, জ্বালিয়ে দাও গুঁড়িয়ে দাও’, ফাঁসি ফাঁসি ফাঁসি চাই, সব যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি চাই’, ‘জামায়াত-শিবির-রাজাকার, এই মুহূর্তে বাংলা ছাড়’, ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, রাজাকারের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি সেøাগানে প্রকম্পিত ছিল। লাল-সবুজ পতাকা হাতে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সকল মানুষের কণ্ঠেই ধ্বনিত হয়েছে এ সকল সেøাগান। শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, পথে-প্রান্তরে দিনভর বেজেছে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণা সংবলিত বর্জ্রকঠিন সেই ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ। স্বাধীনতার জন্মদিন পালনে নতুন প্রজন্মের এমন গণজাগরণ আশাবাদী ও সাহসী করে তুলেছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষকে। প্রায় দু’মাস ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের ভয়াল নাশকতা-সহিংসতা, পুড়িয়ে পুড়িয়ে মানুষ হত্যা আর দেশবিরোধী কর্মকা-ের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা দিবসে নতুন প্রজন্মসহ গণতন্ত্র ও স্বাধীনতায় বিশ্বাসী মানুষকে যেন নতুন শপথে বলিয়ান করেছে। রাজনীতিক থেকে সাধারণ একজন মানুষ পর্যন্ত সবাই দৃঢ় আশাবাদী- ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের নতুন প্রজন্মের এমন বিস্ফোরণ জানান দিচ্ছে, জঙ্গীবাদ-সাম্প্রদায়িক গণতন্ত্রবিরোধী অন্ধকারের শক্তির দিন শেষ। যুদ্ধাপরাধী রাজাকার-আলবদর-আলশামসদের নির্মূল করে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় নতুন এক জন্মভূমির যাত্রা শুরু হবেই। স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতাবিরোধী শত্রুরা ভয়ে গর্তে মুখ লুকিয়েছিল। কোথাও তাদের প্রকাশ্য দেখা যায়নি। মহান একুশে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের পর বৃহস্পতিবার শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে সাভার স্মৃতিসৌধেও যায়নি বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া। স্মৃতিসৌধে পা রাখার দুঃসাহসও দেখাতে পারেনি বিএনপি নেত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত জামায়াত-শিবির ও স্বাধীনতাবিরোধী অন্যান্য দলের নেতাকর্মীরা। খালেদা জিয়া স্মৃতিসৌধে না আসায় অন্যান্যবারের তুলনায় বিএনপির নেতাকর্মীদের উপস্থিতিও ছিল নগণ্য। এমনকি বিকেলে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও যাননি খালেদা জিয়া। তাই এবার অন্যরকম স্বস্তি ও উৎসবের আমেজে গোটা জাতি পালন করেছে স্বাধীনতার ৪৪তম বার্ষিকী। আনন্দ, বেদনা ও বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধা এবং লাখো শহীদকে। দেশের জন্মদিনে এবার গোটা বাংলাদেশই যেন জেগে উঠেছিল স্বাধীনতাবিরোধীদের বিরুদ্ধে। সর্বত্রই স্বাধীনতার সক্রিয় বিরোধিতাকারী, যুদ্ধাপরাধী, তাদের অনুসারী জামায়াত-শিবির ও বিএনপির প্রতি ঘৃণা-ধিক্কারের পাশাপাশি দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকরের মাধ্যমে দেশকে কলঙ্কমুক্ত করার দাবি ছিল প্রচ-। স্বাধীনতা দিবসে পরাজিত অপশক্তির সকল ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত রুখে দিয়ে জঙ্গী-মৌলবাদ, ক্ষুধা-দারিদ্র্য ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত সুখী-সমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক নতুন এক জন্মভূমির স্বপ্নের কথাও ধ্বনিত হয়েছে দেশের প্রতিটি স্থানে। বাঙালীর জাতীয় জীবনে আনন্দ-বেদনার এমন দ্বৈরথের ঘটনা খুব বেশি নেই। বাঙালী জাতি আনন্দ আর বেদনার মহাকাব্য স্বাধীনতা সংগ্রামে একদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের অসম সাহসিকতা আর হাজারও নারীর আত্মত্যাগের বীরত্বগাঁথা। অন্যদিকে বর্বর পাকসেনা আর রাজাকার-আলবদরদের নীচতা, শঠতা ও হিংস্রতার কলঙ্কময় ইতিহাস। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বাধীনতার ঘোষণায় ৪৪ বছর আগের এ দিনে পাকিস্তানী বাহিনীর দমন অভিযানের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল এ ভূখ-ের মানুষ। তার পরের ৯ মাস পাকিস্তানী বাহিনী আর তাদের এ দেশীয় দোসর রাজাকার-আলবদর চক্র চালিয়েছে ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ। তাই স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে দেশবাসী শ্রদ্ধা আর বেদনায় স্মরণ করে যুদ্ধে নিহত স্বজনদের আর অসম লড়াইয়ে বিজয়ী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে আনন্দমুখর এ উৎসবে বরাবরের মতো এবারও অন্তঃস্রোতে বয়ে গেছে স্বজন হারানোর বেদনা। তবে এমন এক নতুন জন্মভূমির স্বপ্ন নিয়েই সোমবার স্বাধীনতার ৪৪ তম বার্ষিকীতে বাঙালী জাতি আনন্দ, বেদনা আর বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করেছে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান একাত্তরের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও লাখো শহীদকে, স্বাধীন রাষ্ট্রের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। শপথ নিয়েছে জঙ্গী-সাম্প্রদায়িকতামুক্ত, সুখী-সমৃদ্ধ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বাংলাদেশ গড়ার। শ্রদ্ধাবনত জাতি ফুলে ফুলে ভরে দিয়েছে জাতীয় স্মৃতিসৌধ, ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি এবং টুঙ্গিপাড়ার বঙ্গবন্ধুর মাজারের বেদিমূল। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পূর্তির দিনে নতুন প্রজন্মের কণ্ঠে ছিল শাণিত সেøাগান ও দাবি- আর সময়ক্ষেপণ নয়, দ্রুত যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের রায় কার্যকর চাই, জামায়াত-শিবিরের রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে হবে। সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদী কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতদের নির্মূল করতে হবে। স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে বিএনপির কাঁধে চড়ে কেন এখনও স্বাধীনতাবিরোধী ও পরাজিত শত্রুরা দেশের মানুষের ওপর ছোবল মারার চেষ্টা করছে? কবে ফাঁসির দড়িতে ঝুলবে একাত্তরের ঘৃণিত এসব ঘাতক? প্রশ্নগুলোও ছিল নতুন প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের। তবে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে তীব্র ঘৃণা-ধিক্কারের পাশাপাশি প্রতিটি অনুষ্ঠানে আনন্দ-উচ্ছ্বাস রীতিমত বাঁধভাঙ্গা জোয়ারে রূপ নিয়েছিল এবারের স্বাধীনতা দিবসে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সমুন্নত রাখা এবং রাজাকার-আলবদর-যুদ্ধাপরাধী ও স্বাধীনতাবিরোধী সকল অপশক্তিকে নির্মূল করার অঙ্গীকারের মধ্য দিয়ে বৃহস্পতিবার প্রত্যুষে ৩১ বার তোপধ্বনির মাধ্যমে সূচনা হয় স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানমালার। প্রতিবছরের মতো প্রত্যয়ে দীপ্ত রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে উপস্থিত হন জাতীয় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে। এর ৪ মিনিট আগে আসা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অভ্যর্থনা জানান রাষ্ট্রপতিকে। এরপর তাঁরা দেশ ও জাতির পক্ষে জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিমূলে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা জানান মুক্তি সংগ্রামে আত্মোৎসর্গকারী অগনিত শহীদস্মৃতির প্রতি। এরপর আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে নিয়ে শেখ হাসিনা পুষ্পমাল্য অর্পণ করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় তিন বাহিনীর একটি সুসজ্জিত চৌকস দল শহীদদের প্রতি ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করে। এ সময় বিউগলে বেজে ওঠে শহীদ স্মরণে করুণ সুর। এ সময় অভ্যাগতরা নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর রাষ্ট্রপতি পরিদর্শক বইয়ে স্বাক্ষর করেন। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পীকার, ডেপুটি স্পীকার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা এবং সাত বীরশ্রেষ্ঠ পরিবারের সদস্যরা শহীদ বেদিতে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। শ্রদ্ধা নিবেদনের সময় মন্ত্রিপরিষদের সদস্যবর্গ, সংসদ সদস্যগণ, কূটনীতিক, তিন বাহিনীর প্রধান, মুক্তিযোদ্ধা এবং পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি লাখো মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ফুলে ফুলে ছেয়ে যায় জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদিমূল। সকাল সোয়া ৬টায় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সংসদের বিরোধীদলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। প্রধানমন্ত্রীসহ লাখো কৃতজ্ঞ বাঙালী ধানম-ি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হয় শিশু-কিশোর সমাবেশ। প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের কুচকাওয়াজে সালাম গ্রহণ করেন। মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে আগ্রহী হওয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী আহ্বান জানান শিশু-কিশোরদের। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী, শিক্ষক, পেশাজীবী, সরকারী-বেসরকারী ও সামরিক কর্মকর্তাদের সংবর্ধনা দেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার ছিল সরকারী ছুটি। বেতার-টেলিভিশনে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার এবং সংবাদপত্রে ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে স্বাধীনতা দিবসের মাহাত্ম তুলে ধরা হয়েছে। সরকারী ও বেসরকারী বিভিন্ন ভবন শীর্ষে এবং সাধারণ বাড়িঘর, যানবাহন ও দোকানে উড়েছে রক্তস্নাত লাল-সবুজের জাতীয় পতাকা। সন্ধ্যায় সরকারী গুরুত্বপূর্ণ ভবনগুলোতে বর্ণাঢ্য আলোকসজ্জা করা হয়। মসজিদে মসজিদে বিশেষ মোনাজাতে শহীদদের আত্মার মাগফিরাত এবং দেশের সমৃদ্ধ কামনা করা হয়। মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাতেও অনুষ্ঠিত হয় বিশেষ প্রার্থনা সভা। বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠন-প্রতিষ্ঠান আনন্দ শোভাযাত্রা, আলোচনা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক আলোকচিত্র প্রদর্শনী, চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে মহান স্বাধীনতা দিবস পালন করেছে। টুঙ্গিপাড়ায় আওয়ামী লীগের একটি কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদল গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পণ শেষে মোনাজাত করেন। টুঙ্গিপাড়াতেও নেমেছিল স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের ঢল। অজস্র মানুষের শ্রদ্ধাঞ্জলিতে ফুলে ফুলে ভরে ওঠে স্বাধীনতার মহান স্থপতির মাজারের বেদিমূল। দেশবাসীর সঙ্গে সশস্ত্র বাহিনীও যথাযোগ্য মর্যাদায় দিবসটি পালন করে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সকল মসজিদে বিশেষ মোনাজাত, সশস্ত্র বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ ভবনসমূহে আলোকসজ্জা, ঢাকার বিভিন্নস্থানে যন্ত্রসঙ্গীত পরিবেশন, নৌবাহিনীর জাহাজ জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। সাভার স্মৃতিসৌধে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা ॥ সাভার থেকে আমাদের প্রতিনিধি সৌমিত্র মানব জানান, মহান স্বাধীনতার ৪৪ বছর পূর্তির দিনে বাঙালীর শ্রদ্ধা ও ভালবাসার ফুলে ফুলে ভরে উঠেছিল জাতীয় স্মৃতিসৌধের বেদি। একই সঙ্গে দেশাত্মবোধক গান ও মুহুর্মুহু সেøাগানে মুখরিত হয়ে উঠছিল স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ। শ্রদ্ধায় অবনত জাতি এদিন আবারও স্মরণ করল মুক্তিযোদ্ধা ও স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদ অমর সূর্যসন্তানদের। ভোর ৫টা ৫৫ মিনিটে দেশ ও জনগণের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় স্মৃতিসৌধের মূল শহীদ বেদিতে পুষ্পার্র্ঘ অর্পণ করেন। এ সময় শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা হয়। এরপর জাতীয় সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকার শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের কূটনীতিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। এ সময় দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সোয়া ৬টার দিকে জাতীয় সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ শহীদ বেদিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন । রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে নিয়ে স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম। রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এলাকা ত্যাগ করার পর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, বিদেশী কূটনীতিক, বিভিন্ন স্তরের রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের জনগণের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। সকাল আটটার দিকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে বীর শহীদদের স্মরণে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, আবদুল মঈন খান, আলতাফ হোসেন চৌধুরী, শাহজাহান ওমর, জিয়াউর রহমান খান, আবদুল মান্নান, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল প্রমুখ। এছাড়া স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করে কমিউনিস্ট পার্টি, জাতীয় পার্টি (জেপি), জেএসডি, প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল, বাংলাদেশের সাম্যবাদী দল (এমএল), গণফোরাম, বিকল্পধারা বাংলাদেশ, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ, ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট, লিবারেল ডেমোক্র্যাটিক পার্টি, সমাজতান্ত্রিক ফ্রন্ট, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টি, বাংলাদেশ গণআজাদী লীগ, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি, জাতীয় জনতা পার্টি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টি, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি, বাংলাদেশ কংগ্রেস, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, বাংলাদেশ সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদ, শিল্পকলা একাডেমি, দুর্নীতি দমন কমিশন, বাংলা একাডেমি, সাভার প্রেসক্লাব, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, ঢাকা চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি, সম্মিলিত প্রাক্তন সেনাকল্যাণ সংস্থা, ছাত্রঐক্য ফোরাম, কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর, ঢাকা বিশ^বিদ্যালয় ও এর হলসমূহ, জগন্নাথ বিশ^বিদ্যালয়, নজরুল ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা কৃষি বিশ^বিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি বিজ্ঞানী সংঘ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, বাংলাদেশ খ্রীস্টান এ্যাসোসিয়েশন, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়, বিসিএস (কৃষি) এ্যাসোসিয়েশন, মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়, জাতীয় মহিলা সংস্থা, হলি ফ্যামিলি রেড ক্রিসেন্ট, মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ, গণসংহতি আন্দোলন, ৯১ এফএম, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বাংলাদেশের ইউনাইটেড কমিউনিস্ট, এডাব, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, ডিপ্লোমা কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন, রাজউক, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন, বাউবি ছাত্রঐক্য পরিষদ, প্রজন্ম ’৭১, উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী, বাংলাদেশ মেডিক্যাল এ্যাসোসিয়েশন, ঢাকা জেলা অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মচারী কল্যাণ সমিতি, স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ, ড্যাব, বাংলাদেশ প্রাইভেট মেডিক্যাল প্র্যাক্টিশনার্স এ্যাসোসিয়েশন (বিপিএমপিএ), মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন মঞ্চ (সাভার), বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স, প্রশিকা মানব উন্নয়ন কেন্দ্র, ইসলামী আরবী বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাকা), মুক্তিযুদ্ধের শহীদ স্মৃতি পাঠাগার (মিরপুর), মুক্তিযুদ্ধের চিকিৎসক পরিষদ, এনজিও ফেডারেশন, নর্থসাউথ ইউনিভার্সিটি, ইউনিভার্সিটি অব এশিয়া প্যাসিফিক, অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ফোরাম, ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি (ঢাকা), বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়, বাঁধন, বাংলাদেশ আওয়ামী স্বাধীনতা লীগ, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ, জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন বোর্ড কর্মচারী সংসদ, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা সমিতি (ঢাকা), এপেক্স বাংলাদেশ, তর্জনী, বাংলাদেশ রেডক্রিসেন্ট সোসাইটি, বাপেক্স সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া পরিষদ, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সেস, বাংলাদেশ আওয়ামী কর আইনজীবী লীগ ও বঙ্গবন্ধু পরিষদ, বাংলাদেশ আইন সমিতি, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর, প্রতœতত্ত্ব অধিদফতর, সমবায় অধিদফতর, সাভার ওষুধ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতি, সাভার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড, মুজিব সেনা ঐক্য লীগ (সাভার), বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগ (সাভার), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সাভার), সজাগ (ধামরাই), বাংলাদেশ আর্তমানবতা ফাউন্ডেশন (ধামরাই), শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরাম, গার্মেন্টস শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র, বাংলাদেশ পোশাক শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন, স্বাধীন বাংলা গার্মেন্টস শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন, জাতীয় গার্মেন্টস শ্রমিক ফেডারেশন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশন, গার্মেন্টস শ্রমিক ফ্রন্ট, বাংলাদেশ গার্মেন্টস এ্যান্ড শিল্প শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ ছাত্র পরিষদ, অগ্রণী ব্যাংক অফিসার সমিতি বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম সমিতি (ঢাকা), স্বাধীনতা মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট পরিষদ, বাংলাদেশ আওয়ামী নবীন লীগ, বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ (ঢাকা বার), বাংলাদেশ আওয়ামী যুব আইনজীবী পরিষদ, আরপিডিও (বাইপাইল), সাভার ডিআইস, নদী ও পরিবেশ উন্নয়ন পরিষদ (সাভার), উপজেলা শিশু সুরক্ষা মনিটরিং কমিটি (সাভার), সাভার উপজেলা এনজিও সমন্বয় পরিষদ, সাভার পৌরসভা, মাশরুম উন্নয়ন ইনস্টিটিউট (সাভার), মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড (সাভার), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব বায়োটেকনোলজি (সাভার), ঢাকা আইনজীবী সমিতি, ঢাকা মেট্রোপলিটন বার এ্যাসোসিয়েশন, গ্রীণ লাইফ ক্লোথিং লিঃ শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়ন, জাহান আরা নিশি বাংলা সংস্কৃতি বিদ্যাপীঠ (মিরপুর), ইনভেস্টমেন্ট কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ, বিসিআইসি অফিসার্স ওয়েলফেয়ার, বাংলাদেশ গ্রামপুলিশ কর্মচারী ইউনিয়ন, সড়ক ও জনপথ প্রকৌশলী সমিতি, বঙ্গবন্ধু ডিপ্লোমা প্রকৌশলী পরিষদ, ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ, বাংলাদেশ নারীমুক্তি কেন্দ্র, বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স কর্পোরেশন, জনতা ব্যাংক লিমিটেড, পূবালী ব্যাংক এমপ্লয়ীজ ইউনিয়ন (সিবিএ), পাবনা সমিতি (ঢাকা), বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড, কর্মসংস্থান ব্যাংকের কর্মকর্তা ও কর্মচারীবৃন্দ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন, বাংলাদেশ আন্তঃজেলা ট্রাকচালক ইউনিয়ন, সনাক ও টিআইবি (সাভার), সাস (সাভার), ভালুম আতাউর রহমান কলেজ (ধামরাই), সৃষ্টি সেন্ট্রাল কলেজ (আশুলিয়া), বিসিআইসি কর্মচারী লীগ প্রমুখ। ধানম-ির ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনেও মানুষের ঢল ॥ মহান স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীন বাংলাদেশের মহান স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে শ্রদ্ধা জানাতে বৃহস্পতিবার সকালে ধানম-ির ৩২ নম্বরেও নেমেছিল কৃতজ্ঞ বাঙালীর ঢল। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও পেশাজীবী সংগঠনের হাজার হাজার মানুষ বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। সকালে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে সকালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পুষ্পস্তবক অর্পণের পর প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানাতে সেখানে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন। এরপর দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা জানান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর পর জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীও ধানম-িতে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করেন। এ সময় আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, এ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, বেগম মতিয়া চৌধুরী, এ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন, সতীশ চন্দ্র রায়, ডাঃ দীপু মনি, শাজাহান খান, এ্যাডভোকেট আবদুল মতিন খসরু, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, ড. হাছান মাহমুদ, আফজাল হোসেন, এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে স্থান ত্যাগের পর শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। এরপর ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, আওয়ামী যুবলীগ, ছাত্রলীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ, কৃষক লীগ, যুব মহিলা লীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা এবং অজস্র সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পরে প্রধানমন্ত্রী মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে একটি স্মারক ডাকটিকেট, একটি উদ্বোধনী খাম ও একটি ডাটা কার্ড অবমুক্ত করেন। অনুষ্ঠানে একটি বিশেষ সিলমোহরও ব্যবহার করা হয়। বাংলাদেশ ডাকঘর ৪৫তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে ওই স্মারক ডাকটিকেট, ১০ টাকা মূল্যের একটি উদ্বোধনী খাম ও ৫ টাকা মূল্যের ডাটা কার্ড ইস্যু করেছে। রাষ্ট্রপতির সমরাস্ত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন ॥ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে আয়োজিত সমরাস্ত্র প্রদর্শনী পরিদর্শন করেছেন রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার সকালে রাষ্ট্রপতি জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছলে সেনাপ্রধান জেনারেল ইকবাল করিম ভূঁইয়া, নৌপ্রধান ভাইস এ্যাডমিরাল এম ফরিদ হাবিব, বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারী স্বাগত জানান। এ সময় লাল-সবুজ ধোঁয়া উড়িয়ে বিমানবাহিনীর একটি ফ্লাইপাস্ট রাষ্ট্রপতিকে অভ্যর্থনা জানায়। ঢাকার লজিস্টিক এরিয়া কমান্ডার মেজর জেনারেল মিজানুর রহমান খান রাষ্ট্রপতিকে সমরাস্ত্র প্রদর্শনীর বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অবহিত করেন। রাষ্ট্রপতি পরে তিন বাহিনীর সমরাস্ত্র সজ্জিত বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। সাম্প্রতিক সময়ে সশস্ত্র বাহিনীর আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন, দেশ গঠনে তিন বাহিনীর ভূমিকা, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা কার্যক্রমের তথ্য এবং বিভিন্ন যুদ্ধাস্ত্র নিয়ে সজ্জিত এসব স্টল পরিদর্শনের সময় তিন বাহিনীর প্রধানরাও রাষ্ট্রপতির সঙ্গে ছিলেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি যুদ্ধবিমান ‘মিগ-২৯’-এর এ্যারেবেটিক শো এবং ছত্রীসেনাদের প্যারা ট্রুপিং দেখেন। উল্লেখ্য, নয় দিনব্যাপী এই সমরাস্ত্র প্রদর্শনী গত ২২ মার্চ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। স্বাধীনতা দিবস সামনে রেখে বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর গৌরবময় ইতিহাস সাধারণ মানুষকে জানাতে এবং ‘চ্যালেঞ্জিং’ এ পেশায় তরুণদের আকৃষ্ট করতে ৩৪টি স্টল নিয়ে এই প্রদর্শনী শুরু হয়। বঙ্গভবন ছিল মুখরিত, যাননি খালেদা জিয়া ॥ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা, কূটনীতিক ও রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের পদচারণায় মুখরিত ছিল বঙ্গভবন প্রাঙ্গণ। বৃহস্পতিবার বিকেলে বঙ্গভবনের মাঠে আয়োজিত স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস-২০১৫ উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মোঃ আবদুল হামিদের দেয়া সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়। রাষ্ট্রপতির সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াসহ বিএনপির ২১ নেতাকে দাওয়াত দেয়া হলেও তাঁদের কাউকেই অনুষ্ঠানে দেখা যায়নি। সংবর্ধনার এই আয়োজনে ভিন্নমাত্রা আনে বরেণ্য শিল্পীদের দেশাত্মবোধক ও লোকগান আর শিশুশিল্পী ও সশস্ত্র বাহিনীর বাদক দলের সঙ্গীতের মূর্ছনা। স্বাধীনতার ৪৪তম বার্ষিকীতে বিকেলে আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বিকেল পৌনে ৫টায় স্ত্রী রাশিদা খানমকে সঙ্গে নিয়ে বঙ্গভবনের মাঠে আসেন রাষ্ট্রপতি। তার খানিক আগে বঙ্গভবনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রাষ্ট্রপতি সস্ত্রীক মঞ্চে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় জাতীয় সঙ্গীত। পরস্পর কুশল বিনিময়ের পর রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীরশ্রেষ্ঠদের পরিবারের সদস্যসহ আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। এ সময় রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাঁদের সার্বিক সহায়তার আশ্বাস দেন। এরপর অনুষ্ঠান মাঠে ভিভিআইপিদের জন্য সংরক্ষিত এলাকায় স্বাধীনতা দিবসের কেক কাটেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী। এরপর তাঁরা মন্ত্রিপরিষদের সদস্য, বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, বিদেশী অতিথি, সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতি, সংসদ সদস্য, গণমাধ্যমের সম্পাদক, তিন বাহিনীর প্রধানসহ সমারিক-বেসামরিক কর্মকর্তা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, ব্যবসায়িক নেতৃবৃন্দ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধি ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন। অন্যদের মধ্যে বঙ্গভবনের এই সংবর্ধনায় অংশ নেনÑ স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা, বিরোধীদলীয় নেতা বেগম রওশন এরশাদ, ডেপুটি স্পীকার এ্যাডভোকেট ফজলে রাব্বি মিয়া, শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটনমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, রেলপথমন্ত্রী মুজিবুল হক, প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী প্রমুখ। ভারতের হাইকমিশনার পঙ্কজ শরণ, যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন, ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূত ও ডিপ্লোম্যাটিক কোরের ডিন শায়ের মোহাম্মদসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। ভিভিআইপি এনক্লোজারে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশে বসেন স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। তাঁর পাসে ছিলেন বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন থেকে মেয়র প্রার্থী ব্যবসায়ী নেতা আনিসুল হক ও সাবেক সংসদ সদস্য সারাহ বেগম কবরী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে শিল্পী ফাতেমা-তুজ-জোহরা, ফকির আলমগীর, কিরণ চন্দ্র রায়, মমতাজ বেগম ও আবু বকর সিদ্দিক সঙ্গীত পরিবেশন করেন। দ্রুত ছাত্রলীগের সম্মেলন দিতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ ॥ দেশের ৪৪তম স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকালে ধানম-ির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলমকে ডেকে নিয়ে ছাত্রলীগের সম্মেলন দ্রুত সম্পন্ন করার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিকদের কাছে এ তথ্য নিশ্চিত করেন। উপস্থিত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগ নেতারা জানান, শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আসন্ন ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সাবেক ছাত্রলীগ নেতাদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী হওয়ার খবর জানাতে যান। এ সময় প্রধানমন্ত্রী নাজমুলকে বলেন, ‘তোমরা কবে সাবেক হবে? তাড়াতাড়ি সম্মেলন দাও, কমিটি দিয়ে তোমরা সাবেক হও।’ জবাবে নাজমুল বলেন, ‘আপনি যখন বলবেন, তখনই সম্মেলন হবে।’ ছাত্রলীগের সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেহেদী হাসান মোল্লা ও সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
×