ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

স্বাধীনতা পুরস্কার নিলেন না ন্যাপ সভাপতি মোজাফফর

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ২৬ মার্চ ২০১৫

স্বাধীনতা পুরস্কার নিলেন না ন্যাপ সভাপতি মোজাফফর

বিডিনিউজ ॥ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর মন্ত্রিত্ব নিতে অস্বীকার করেছিলেন, আর এবার বাংলাদেশ সরকারের সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা স্বাধীনতা পুরস্কারও নিলেন না ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ। ৯৩ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের একমাত্র জীবিত সদস্য। চলতি বছরের স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য অধ্যাপক মোজাফফরসহ আটজনের নাম ঘোষণা করেছিল সরকার। তবে ন্যাপ সভাপতি যে এ সম্মাননা নেবেন না, তা আগেই দলের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছিল। তিনি নিজেও এ বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছেন। বুধবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে এক অনুষ্ঠানে সাতজনের হাতে স্বাধীনতা পদক তুলে দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তবে অধ্যাপক মোজাফফরের ‘অনাগ্রহের’ কারণে শেষ পর্যন্ত তার নাম তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়। এ পর্যন্ত স্বাধীনতা পদকপ্রাপ্তদের পরিচিতিমূলক গ্রন্থেও তার নাম রাখা হয়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, ‘উনি নিতে আগ্রহী নন। এজন্য উনার নাম ড্রপ করা হয়েছে।’ এ পর্যন্ত ২১২ ব্যক্তি ও ২৫ প্রতিষ্ঠানকে দেশের সর্বোচ্চ এ পুরস্কার দেয়া হয়েছে। তবে কারও প্রত্যাখ্যানের ঘটনা এই প্রথম। মোজাফফর আহমেদ বলেন, ‘রাজনীতির অর্থ দেশ সেবা, মানুষের সেবা। পদ বা পদবীর জন্য কখনও রাজনীতি করি নাই। শেখ মুজিব আমাকে অনেক কিছু বানানোর চেষ্টা করেছিলেন আমি হই নাই। আমি মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা ভাসানীর অনুসারী।’ তিনি বলেন, ‘পদক দিলে বা নিলেই সম্মানিত হয়, এই দৃষ্টিভঙ্গিতে আমি বিশ্বাসী নই। দেশপ্রেম ও মানবতাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে আমি রাজনীতিতে এসেছিলাম, কোন পদক বা পদ-পদবী আমাকে উদ্বুদ্ধ করেনি। সত্যিকার অর্থে যাঁরা মুক্তিযুদ্ধ করেছিলেন, জীবন উৎসর্গ করেছিলেন, তাঁরা কেউই কোন প্রাপ্তির আশায় করেননি।’ অধ্যাপক মোজাফফর পদ-পদবীর বিষয়ে অনীহা দেখালেও স্ত্রী আমিনা আহমেদ আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংরক্ষিত আসন থেকে সাংসদের দায়িত্ব পালন করছেন। গত নবম সংসদেরও সংরক্ষিত আসনের সাংসদ ছিলেন ন্যাপের এই প্রেসিডিয়াম সদস্য। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার কাকরাইলে মোজাফফর আহমেদের বাবার বাড়ি লক্ষ্য করে গোলাগুলি শুরু হলে তিনি বাসা থেকে বেরিয়ে যান। এরপর সীমান্ত পেরিয়ে চলে যান ভারতের আগরতলায়। তাজউদ্দীন আহমদকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলী গঠন করা হলে তাতে অধ্যাপক মোজাফফর আহমেদকেও সদস্য করা হয়। মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম প্রধান সংগঠক হিসেবে একাত্তরে ন্যাপ ও কমিউনিস্ট পার্টি-ছাত্র ইউনিয়নের কর্মীদের নিয়ে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে বিশেষ গেরিলা বাহিনী গড়েন মোজাফফর আহমেদ। প্রশিক্ষণ শেষে ওই বাহিনী ঢাকা, নরসিংদী, কুমিল্লা, নোয়াখালী, চট্টগ্রাম, রংপুরসহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেয়। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে যোগ দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে বিশ্বজনমত গঠনেও ভূমিকা পালন করেন মোজাফফর আহমেদ। বর্ষীয়ান এই রাজনীতিবিদ বর্তমানে বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতায় ভুগছেন। আগামী ১৪ এপ্রিল তার ৯৪তম জন্মদিন।
×