ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

এমএলএম ব্যবসা কার্যত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৫ মার্চ ২০১৫

এমএলএম ব্যবসা কার্যত পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল

এম শাহজাহান ॥ আপাতত দেশে আর কোন প্রতিষ্ঠান এমএলএম ব্যবসা করতে পারবে না। লাইসেন্সপ্রাপ্ত চারটি কোম্পানি নতুন করে অনুমোদন না পাওয়ায় দেশে আর কোন বৈধ এমএলএম (মাল্টিলেভেল মার্কেটিং) বা বহুস্তর বিপণন কোম্পানি অবশিষ্ট রইল না। এর ফলে কার্যত দেশে এমএলএম ব্যবসা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল। চালু থাকা চারটি কোম্পানির লাইসেন্সের মেয়াদ গত ৪ মার্চ শেষ হয়। আবেদন করা হলেও অবৈধ ব্যবসার দায়ে নতুন করে এ কোম্পানিগুলোকে আর অনুমোদন দেয়নি যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের নিবন্ধকের কার্যালয় (আরজেএসসি)। ফলে এখন আর বৈধভাবে ব্যবসা করার সুযোগ নেই কোন এমএলএম কোম্পানির। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে এ তথ্য। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এমএলএম ব্যবসা-বাণিজ্য চালাতে হলে লাইসেন্স নিতেই হবে। এ লাইসেন্সের বাইরে কেউ ব্যবসা করলে তা অবৈধ গণ্য হবে। শুধু তাই নয়, এমএলএম আইনে শাস্তি নিশ্চিত করবে সরকার। যদিও বাতিল হওয়া চারটি কোম্পানির এখনও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে আবেদন (আপীল) করার সুযোগ রয়েছে। আপীলের পরে শুনানির ৩০ কর্মদিবস পর আবেদনকারীকে সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেবে মন্ত্রণালয়। তবে এই চার কোম্পানির পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আপীল করা হয়নি। এদিকে, কোম্পানিগুলোর লাইসেন্স নবায়ন না করতে পারার কারণ জানিয়ে দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি এ সিদ্ধান্ত বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। লাইসেন্স বাতিল হওয়া এ চার কোম্পানি হচ্ছেÑ এমএক্সএন মডার্ন হারবাল ফুড, ওয়ার্ল্ড মিশন-২১, স্বাধীন অনলাইন পাবলিক লিমিটেড ও রিচ বিজনেস সিস্টেম। আরজেএসসি ২০১৪ সালের ৫ মার্চ এক বছরের জন্য এই চার কোম্পানিকে এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা করার লাইসেন্স দিয়েছিল। তখন আরজেএসসির কাছে মোট আবেদন ছিল তেইশটি। আরজেএসসির অনুমোদন না পেয়ে বাকি ১৯ প্রস্তাবিত এমএলএম কোম্পানি পরে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে আবেদন করে। মন্ত্রণালয়ও এগুলোকে লাইসেন্স দেয়নি। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি কোম্পানি লাইসেন্সের জন্য আদালতের শরণাপন্ন হয়েছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, নিয়ম না মেনে ব্যবসা করার কারণে অবশিষ্ট চার কোম্পানিকে আর নতুন করে নবায়ন দেয়নি সরকার। তবে সরকারের এ রায়ের বিরুদ্ধে তাদের আপীল করার সুযোগ রয়েছে। তিনি বলেন, এমএলএমের নামে অবৈধ ব্যবসা বন্ধে সরকার আইন করেছে। ওই আইনের বাইরে গিয়ে কেউ ব্যবসা করতে চাইলে তা আর সম্ভব নয়। ভবিষ্যতে এ ব্যবসায় করতে চাইলে আইন মেনে করতে হবে। ডেসটিনি ও যুবকের সমাধান এখনও করা যায়নি। এ দুই প্রতিষ্ঠানের লাখ লাখ গ্রাহক এখন হয়রানির শিকার হচ্ছেন। তাই এমএলএমের নামে সাধারণ মানুষ যাতে আর ভবিষ্যতে প্রতারিত না হয় সে ব্যাপারে কঠোর অবস্থানে রয়েছে সরকার। এদিকে, গত ডিসেম্বরে এক সরকারী তথ্য বিবরণীতে জানানো হয়, লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যবসা করা জামিন অযোগ্য অপরাধ। লাইসেন্স ছাড়া কেউ এ ব্যবসা করলে ও প্রতারণা করে থাকলে কাছাকাছি থানা বা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে অবহিত করতে সর্বস্তরের জনগণের প্রতি আহ্বান জানায় সরকার। একই সঙ্গে এমএলএম পদ্ধতির ব্যবসায়ের লাইসেন্স দিতে সরকার মাল্টিলেভেল মার্কেটিং কার্যক্রম (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০১৩ প্রণয়ন করে। এ আইন অনুযায়ী লাইসেন্স ছাড়া এমএলএম ব্যবসা করা যায় না। সরকারের অনুমোদন ছাড়া লাইসেন্স হস্তান্তর করা যায় না। এতে আরও বলা হয়, পিরামিডসদৃশ বিপণন কার্যক্রম চালানো, সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ মোড়কজাত না করে পণ্য বিক্রি, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পণ্য বা সেবা বিক্রি না করা, পণ্য বা সেবার অযৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ, নিম্নমানের পণ্য বা সেবা বিক্রি করা এবং অসত্য, কাল্পনিক ও বিভ্রান্তিকর তথ্য দিয়ে বিজ্ঞাপন প্রচার করা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। কমিশন গঠন করা হয়নি ॥ এমএলএম আইন বাস্তবায়নে কমিশন গঠন করার কথা জানানো হয়েছিল। ওই সময় বলা হয়েছিল দশ সদস্যবিশিষ্ট এ কমিশনের প্রধান হিসেবে একজন যুগ্ম-সচিবকে নিয়োগ দেয়া হবে। বাণিজ্য সচিবের অধীনে কাজ করবে এ কমিশন। এছাড়া কমিশনকে গতিশীল ও অর্থবহ করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি পৃথক সেলও গঠন করা হবে। কিন্তু এখনও কমিশন গঠন করা যায়নি। কমিশন গঠিত না হওয়ায় ডেসটিনি ও যুবকের সঙ্কট সমাধান করা যাচ্ছে না। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক উর্ধতন কর্মকর্তা জনকণ্ঠকে বলেন, এমএলএম আইন বাস্তবায়নে শীঘ্রই কমিশন গঠনের কাজ শুরু হবে। কমিশন গঠন হলেই আইনটি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া শুরু হবে। তিনি বলেন, মন্ত্রিসভায় অনুমোদন হওয়ার পর অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছে। কমিশন গঠনের পর চেয়ারম্যান নিয়োগ দেয়া হবে। মূলত চেয়ারম্যান নিয়োগ হওয়ার পর এর সাচিবিক কার্যক্রম শুরু হবে।
×