ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ট্রাইব্যুনালের পাঁচ বছর আজ, ১৭ মামলায় ১৪ জনের ফাঁসি

প্রকাশিত: ০৫:৩৭, ২৫ মার্চ ২০১৫

ট্রাইব্যুনালের পাঁচ বছর আজ, ১৭ মামলায় ১৪ জনের ফাঁসি

বিকাশ দত্ত ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতা-বিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের পাঁচ বছর পূর্তি আজ। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর পাঁচ বছরে দুটি ট্রাইব্যুনালে ১৭ মামলার রায়ে ১৪ জনকে মৃত্যুদ-সহ অন্যান্য দ- দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ মোট ৯টি মামলায় ২৭ জনের বিরুদ্ধে বিচার কাজ চলছে। তদন্ত চলছে প্রায় ২২টি মামলার। তদন্ত সংস্থা আশা করছে চলতি বছরে বেশ কিছু নতুন মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হবে। বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় পার্টি, আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত তারকাখচিত আসামিদের বিচার হয়েছে। এখন ট্রাইব্যুনালে জেলা-উপজেলা থেকে মামলা আসছে। ২০১০ সালের ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গঠনের পর মামলার সংখ্যা বাড়ায় এবং দ্রুত তা নিষ্পত্তির জন্য ২০১২ সালের ২২ মার্চ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ নামে আরও একটি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়। ট্রাইব্যুনাল গঠনের মাত্র ৫ বছরে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে তা বিশ্বে মডেল হিসেবে দেখা দিয়েছে। কম্বোডিয়াতে ট্রাইব্যুনাল গঠন হবার পর প্রথম মামলা শুরু হয়েছিল ৫ বছর পর। আর বাংলাদেশে ৫ বছরে ১৭টি মামলার রায় ঘোষণা করেছে। শ্রীলঙ্কায় যে যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু করার চিন্তা চলছে সেখানেও বাংলাদেশের মডেলটি গ্রহণ করার কথা ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল ক্রিমিনাল জাস্টিস বিষয়ক এ্যাম্বাসেডর -এ্যাট- লার্জ স্টিফেন জে র‌্যাপ মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার নিয়ে সমালোচনা করলেও পরবর্তীতে তিনি এ বিচারকে ভূয়সী প্রশংসা করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বলেছেন, মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারকাজ সব ধরনের চাপের মধ্যেও চাপমুক্ত ও নিরপেক্ষ থেকে বিচারকরা কাজ করে যাচ্ছেন। আমি স্যালুট করি বিচারপতিদের সেবা ও সম্মানকে। এছাড়া ইউরোপীয় পার্লামেন্ট, সুইডিশ পার্লামেন্টসহ ইমন্যাস্টি ইন্টারন্যাশনাল, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও প্রশংসা করেছেন, তবে তারা মৃত্যুদ- প্রদানে বিরোধী । মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারে ভুক্তভোগী নির্যাতিত নারী ও বধ্যভূমির বিষয়টিও উঠে এসেছে। দীর্ঘ ৪৩ বছর পর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ভুক্তভোগী নারীগণ জবানবন্দী দিয়েছেন। তাদের ক্যামেরা ট্রায়ালে ট্রাইব্যুনাল জবানবন্দী গ্রহণ করেছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধে এই প্রথম সৈয়দ মুহাম্মদ কায়সারকে অন্য অপরাধের পাশাপাশি ধর্ষণের দায়ে ফাঁসির দ-াদেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। সাঁওতাল নারী হীরামনি ও মাজেদা নামের অপর নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ দু’টি প্রমাণিত হয়েছে রায়ে। ওই দুই বীরাঙ্গনা নারী ও ধর্ষণের ফলে বীরাঙ্গনা মায়ের গর্ভে জন্ম নেয়া যুদ্ধশিশু শামসুন্নাহার ট্রাইব্যুনালে এসে সাক্ষ্যও দেন কায়সারের বিরুদ্ধে। রায়ে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত বীরাঙ্গনা নারী ও যুদ্ধশিশুদের ক্ষতিপূরণ স্কিম চালুর পাশাপাশি তালিকা করে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার জন্য রাষ্ট্রকে উদ্যোগ নিতে বলেছেন ট্রাইব্যুনাল। শামসুন্নাহার নামের ওই যুদ্ধশিশু দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাষ্ট্রপক্ষের দশম সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন কায়সারের যুদ্ধাপরাধ মামলায়। ৪২ বছর বয়সী নারী সাক্ষী শামসুন্নাহার কায়সারের ধর্ষণের শিকার হওয়া একজন বীরাঙ্গনা মায়ের গর্ভে জন্ম নিয়েছেন। ট্রাইব্যুনালের ৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক জনকণ্ঠকে বলেছেন, ৫ বছরে আমরা যে কাজ করেছি তাতে আমরা খুশি। স্বাধীনতার স্বপক্ষের শক্তি, সাংবাদিকসহ যারা সহযোগিতা করেছে তাদের কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। আমাদের যে সমস্যা ছিল, তা কেটে গেছে। তদন্ত সংস্থায় যে ৬ শতাধিক অভিযোগ আছে তা দ্রুত গতিতে তদন্ত কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর রানাদাশ গুপ্ত জনকণ্ঠকে বলেছেন, আমিসহ সমস্ত প্রসিকিউটরবৃন্দ নিষ্ঠা সততা ও আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করছি। সেখানে কোন কার্পণ্যতা ছিল না। এখনও নেই। ৫ বছরে এ কথাই বলতে চাই আমরা সবটাই জানি সে স্পর্ধা করার অধিকার আমার নেই। তবে এটুকু বলতে চাই “আমরা এগিয়েছি এবং দাঁড়িয়েছি”। আমাদের বিচারটা পৃথিবীতে একটি মডেল হিসেবে দেখা দিয়েছে। শ্রীলঙ্কায় যে যুদ্ধাপরাধ বিচার শুরু করার চিন্তা চলছে সেখানেও বাংলাদেশের মডেলটি গ্রহণ করার কথা ভাবছে। বিশ্বের অনেক দেশেই মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার হচ্ছে। যার মধ্যে রয়েছে রুয়ান্ডা, সাবেক যুগোশ্লাভিয়া, কম্বোডিয়া, সিরিয়েলিয়ন, বসনিয়া, জার্মানী, ইসরাইল, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য, ভেনিজুয়েলা, আর্জেন্টিনা, পেরু, উরুগুয়ে, চিলি, প্যারাগুয়ে, মেক্সিকো, কানাডা, লিবিয়া, ফ্রান্স, ইথিওপিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা। এ সমস্ত ট্রাইব্যুনাল বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের মতো কোনভাবেই স্বাধীন নয়। এমনকি ন্যুরেমবার্গ ট্রাইব্যুনালেও আসামি পক্ষের কোন আপীল করার সুযোগ ছিল না। সে দিকে থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষ আপিলের সমান সুযোগ পাচ্ছেন। ইতোমধ্যে আসামি পক্ষ আপীল বিভাগ থেকে জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর বিচারে সুফল পেয়েছেন। মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের ১৮টি মামলার বিচার শুরু হলেও রায় হয়েছে ১৭টি মামলার। এর মধ্যে রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা একেএম ইউসুফের বিচার শুরু হবার পর তিনি অসুস্থ হয়ে মারা যান। পরে ট্রাইব্যুনাল তার বিচারকাজ না চালানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। এই ১৭টি মামলার মধ্যে ট্রাইব্যুনাল মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ১৩ জনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান, ২ জনকে আমৃত্যু কারাদণ্ড, ১ জনকে ৯০ বছরের কারাদণ্ড ও ১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করেন। এর মধ্যে ৫ জন আসামি পলাতক রয়েছেন। যাদের মধ্যে ৪ মৃত্যুদণ্ড ও এক জনের আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। পলাতক থাকার কারণে এই ৫ আসামি আপীল করতে না পারায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া দ-ই বহাল রয়েছে। এদিকে ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করেছেন ১৪ জন। এর মধ্যে কাদের মোল্লার আপীল নিষ্পত্তি হয়ে রায় কার্যকর হয়েছে। দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদ- কমিয়ে আপীল বিভাগ আমৃত্যু কারাদ- প্রদান করেছেন। মোঃ কামারুজ্জামানের আপিলের বিরুদ্ধে রিভিউ শুনানির জন্য ৮ এপ্রিল দিন ধার্য করা আছে। আমৃত্যু কারাদ-প্রাপ্ত আসামি আব্দুল আলীম ও ৯০ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত গোলাম আযম মৃত্যুবরণ করায় তাদের আপীল নিষ্পত্তি করে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে ১০টি মামলা আপীল নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল এই ৫ বছরের মধ্যে ২০১৩ সালে দিয়েছে ৮টি মামলার রায়। ২০১৪ সালে ৫টি আর চলতি বছরে দুইটি মামলার রায় প্রদান করেছেন। এর মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ রায় দিয়েছে ৮টি আর ট্রাইব্যুনাল- ২ দিয়েছে ৯টি। এটিএম ইউসুফের মামলাটিও ট্রাইব্যুনাল-২-এ বিচারকাজ শুরু হয়েছিল। যাদের দ- হয়েছে ॥ সর্ব প্রথম ২০১৩ সালের ২১ জানুয়ারি জমায়াতে ইসলামীর সাবেক রুকন বাচ্চু রাজাকারের ফাঁসির আদেশ দেয়া হয়। এর পর ২০১৩ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয় রায়ে জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লাকে যাবজ্জীবন কারাদ-। ১৭ সেপ্টেম্বর আপীল বিভাগ এ মামলার চূড়ান্ত রায়ে কাদের মোল্লাকে মৃত্যুদ-ে দ-িত করে রায় প্রদান করা হয়। ওই বছরের ১২ ডিসেম্বর তার মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়েছে। তৃতীয় রায়ে ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতের নায়েবে আমির দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ-ের রায় প্রদান করেছেন। আপীল বিভাগ ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর দণ্ড কমিয়ে আমৃত্যু করাদণ্ড প্রদান করা হয়। চতুর্থ রায়ে ২০১৩ সালের ৯ মে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল কামারুজ্জামানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। আপীল বিভাগেও তার মৃত্যুদ- বহাল রাখা হয়। ওই রায়ের বিরুদ্ধে রিভিউয়ের শুনানির জন্য চলতি বছরের ৮ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। পঞ্চম রায়ে ২০১৩ সালের ১৫ জুলাই জামায়াতের সাবেক আমীর গোলাম আযমকে ৯০ বছরের কারাদ- প্রদান করা হয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে আপীল করা হয়। ২০১৪ সালের ২৩ অক্টোবর তিনি মারা যান। মারা যাওয়ার কারণে আপীল বিভাগ মামলাটি অকার্যকর ঘোষণা করেন। ষষ্ঠ রায়ে ২০১৩ সালের ১৭ জুলাই জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদকেও মানবতা-বিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালের সপ্তম রায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও চট্টগ্রামের সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ প্রদান করা হয়। অষ্টম রায়ে ২০১৩ সালের ৯ অক্টোবর বিএনপি নেতা আব্দুল আলীমকে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। ২০১৪ সালের ৩০ আগস্ট অসুস্থ অবস্থায় মারা যাওয়ায় তার মামলাটিও আপীল বিভাগ অকার্যকর ঘোষণা করেন। ২০১৩ সালের ৩ নবেম্বর নবম রায়ে বুদ্ধিজীবী হত্যার দায়ে আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীনকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে রায় ঘোষণা করা হয়েছে। এ ছাড়া ২০১৪ ২৯ অক্টোবর জামায়াতের বর্তমান আমির মতিউর রহমান নিজামীকে মৃত্যুদ- প্রাদান করা হয়। এগারতম রায়ে জামায়াতের নির্বাহী কমিটির সদস্য মীর কাশেম আলীকে ২০১৪ সালের ২ নবেম্বর মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। দ্বাদশ রায়ে বিএনপির নেতা নগরকান্দা পৌর মেয়র জাহিদ হোসেন ওরফে খোকন রাজাকারকে মৃত্যুদ- প্রদান করা হয়। ১৩তম রায়ে আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত মোঃ মোবারক হোসেনকে ২০১৪ সালের ২৪ নবেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করে ট্রাইব্যুনাল। ১৫তম রায়ে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজারুল ইসলামকে ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদ- প্রদান করেন। ১৬তম রায়ে জাতীয় পার্টির সাবেক সাংসদ পলাতক আব্দুল জব্বারকে ২০১৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করেন। একই বছরের ১৮ ফেব্রুয়ারি জামায়াতে নায়েবে আমির আব্দুস সুবহানকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করা হয়। যেগুলি নিষ্পত্তির অপেক্ষায় ॥ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ বর্তমানে ৯টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে বাগেরহাটের কসাই সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ, আকরাম হোসেন খাঁন ও চাঁইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের দুই রাজাকার মাহিদুর রহমান, মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তার জেরা চলছে। কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তার জবাবন্দীর জন্য ৩০ মার্চ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলার মহেশখালীর তিন রাজাকার সালামত উল্লাহ খান, মৌলভী জাকারিয়া সিকদার ও মোহাম্মদ রশিদ মিয়ার বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৯ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের করিমগঞ্জ উপজেলার রাজাকার কমান্ডার গাজী আব্দুল মান্নান, মোঃ হাফিজ উদ্দিন ও মোঃ আজাহারুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন নাসির উদ্দিন আহম্মেদ ও আইনজীবী শামসুদ্দিন আহম্মেদের মামলার পরবর্তী দিন রয়েছে ৩০ মার্চ। হবিগঞ্জের দুই সহোদর রাজাকার কমান্ডার মহিবুর রহমান ওরফে বড় মিয়া ও মজিবুর রহমান ওরফে আঙ্গুর মিয়ার বিরুদ্ধে অগ্রগতি প্রতিবেদন দেয়ার জন্য প্রসিকিউশন পক্ষকে ১৬ এপ্রিল দিন দেয়া হয়েছে। জামালপুর জেলার বদর বাহিনীর কমান্ডারসহ ৮ জন রাজাকার আলবদর কমান্ডার আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ আব্দুল বারী, হারুন, মোঃ আবুল হাশেম, এ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হক ও এসএম ইউসুফ আলীর বিরুদ্ধে ৩০ মার্চ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। ২৪ মার্চ তাদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রকাশ করেছে তদন্ত সংস্থা। পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণ চলছে। এ পর্যন্ত ১২ জন সাক্ষী সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। নেত্রকোনার মুসলিম লীগ নেতা আতাউর রহমান ননি ও নেজামে ইসলামের ওবায়দুল হক তাহেরের বিরুদ্ধে হত্যা, গণহত্যা, অপহরণ, বাড়িঘরে আগুন ও লুটপাটসহ ৬ ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। সূচনা বক্তব্য ও সাক্ষ্য প্রদানের জন্য ৫ এপ্রিল দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে ॥ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে। তদন্ত সংস্থায় ৩২২৯ জনের বিরুদ্ধে ৫৮৫টি অভিযোগ রয়েছে। তা থেকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে মামলার তদন্ত করা হচ্ছে। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছে ১১২টি অভিযোগ, চট্টগ্রামে ৮৫, রাজশাহীতে ৬৬টি, খুলনায় ১৮৩টি, সিলেট ৫১টি, বরিশালে ৫৮টি, রংপুরে ৩০টি অভিযোগ রয়েছে। তদন্ত সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, এ সমস্ত অভিযোগ থেকে তদন্ত করা হচ্ছে। কাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করা হচ্ছে তা আগে ভাগে বললে আসামিরা পালিয়ে যেতে পারে। এক নজরে ট্রাইব্যুনালের রায় ॥ বাচ্চু রাজাকার (পলাতক)-মৃত্যুদণ্ড আব্দুল কাদের মোল্লা -যাবজ্জীবন কারাদণ্ড (আপিলে মৃত্যুদণ্ড প্রদান) দেলোয়ার হোসাইন সাঈদী-মৃত্যুদণ্ড (আপিলে আমৃত্যু কারাদ-) মো: কামারুজ্জামান -মৃত্যুদণ্ড, (আপিলে মৃত্যুদণ্ড বহাল, রিভিউ শুনানি ৮ এপ্রিল) গোলাম আযম -৯০ বছরের কারাদ-, (মারা যাবার কারণে আপীল অকার্যকর) আলী আহাসান মুহাম্মদ মুজাহিদ-মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) সাকা চৌধুরী -মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) আব্দুল আলীম-আমৃত্যু কারাদণ্ড (মারা যাবার কারণে আপীল অকার্যকর) আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মুঈনুদ্দীন (পলাতক)- মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) মতিউর রহমান নিজামী -মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) মীর কাশেম আলী-মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) জাহিদ হোসেন খোকন (পলাতক) -মৃত্যুদণ্ড মোঃ মোবারক হোসেন-মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) সৈয়দ মোঃ কায়সার -মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) এটিএম আজারুল ইসলাম-মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের) আব্দুল জব্বার (পলাতক)-আমৃত্যু করাদণ্ড আব্দুস সুবহান -মৃত্যুদণ্ড (আপীল দায়ের)
×