ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান আর নেই

প্রকাশিত: ০৬:২০, ২৪ মার্চ ২০১৫

আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক লি কুয়ান আর নেই

দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার ছোট একটি বন্দর শহর থেকে সিঙ্গাপুরকে বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য কেন্দ্রে পরিণত করার রূপকার লি কুয়ান ইউ আর নেই। সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার ভোরে মৃত্যু হয় তার। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত ৫ ফেব্রুয়ারি ওই হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক প্রকাশ করেছেন। খবর বিবিসি ও বাসসর। সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। তার বড় ছেলে লি সিয়েন লং সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী। সোমবার তার কার্যালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রী গভীর দুঃখের সঙ্গে জানাচ্ছেন, সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ মারা গেছেন। ৭১৬ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের নগররাষ্ট্র সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লি কুয়ান দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছেন ৩১ বছর। তার পূর্বপুরুষ চীন থেকে এই দ্বীপে এসেছিলেন তিন পুরুষ আগে। তার নেতৃত্বেই ব্রিটিশ সামরিক ঘাঁটি থেকে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ মাথাপিছু আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে ৫৫ লাখ মানুষের দেশ সিঙ্গাপুর। এ কারণে তাকে বলা হয় আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক। এই সাফল্যের জন্য বিশ্বে তিনি যেমন প্রশংসিত হয়েছেন, তেমনি কঠোর নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকা এবং বিরোধী মতের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে হয়েছেন সমালোচিত। ১৯৫৪ সালে পিপলস এ্যাকশন পার্টির (পিএপি) গোড়াপত্তন করে ৪০ বছর সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন লি কুয়ান। তার মৃত্যুতে এক সপ্তাহের শোক ঘোষণা করেছে সিঙ্গাপুর। ২৯ মার্চ রাষ্ট্রীয়ভাবে তার শেষকৃত্যের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। লি কুয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে টেলিভিশনে এক ভাষণে তার ছেলে ও সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লং বলেন, তিনি আমাদের স্বাধীনতার জন্য লড়েছেন। একটি জাতিকে গড়ে তুলেছেন, যেখানে কিছুই ছিল না। সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসাবে গর্ব করার সুযোগ তিনি করে দিয়েছেন। তার মতো আর কাউকে আমরা পাব না। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এক শোকবার্তায় সিঙ্গাপুরের প্রয়াত এই নেতাকে অভিহিত করেছেন ‘ইতিহাসের একজন সত্যিকারের মহাজন’ হিসাবে, যার শাসন ও অর্থনীতি ভাবনার প্রশংসা বিশ্ব নেতৃবৃন্দ করে আসছে বহু বছর ধরে। ‘হ্যারি’ লি নামে পরিচিত লি কুয়ান জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর। ১৯৫৯ সালে তিনি তৎকালীন স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেন। রাষ্ট্রপতির শোক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ সিঙ্গাপুরের জনক ও আধুনিক সিঙ্গাপুরের স্থপতি লী কুয়ান ইউ-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। সোমবার সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট টনি তান কেং ইয়ামের কাছে পাঠানো এক শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘সিঙ্গাপুরের জনক ও আধুনিক সিঙ্গাপুরের স্থপতি লী কুয়ান ইউ-এর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে দুঃখিত। আমি আপনাকে ও সিঙ্গাপুরের জনগণকে আমার গভীর শোক এবং শোক সন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি।’ প্রধানমন্ত্রীর শোক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আধুনিক সিঙ্গাপুরের জনক ও স্থপতি লী কুয়ান ইউ-এর মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। প্রধানমন্ত্রী সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লী হেসিয়েন লং এর কাছে সোমবার প্রেরিত এক শোক বার্তায় বলেন, লী কুয়ান তার নেতৃত্ব ও কর্মকা-ের জন্য কেবল সিঙ্গাপুরের নাগরিকদের কাছে নয়, সারাবিশ্বেও স্মরণীয় হয়ে থাকবেন। লী সিঙ্গাপুরকে এশীয়ান টাইগারে পরিণত করতে উন্নয়নের যে পথ নিদের্শনা দিয়েছেন, তা আমাদের ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে। নিজ দেশের স্বাতন্ত্র্যের রূপকার ও গোটা বিশ্বের জন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী লী কুয়ানকে আগামী দিনগুলোতে একজন বীর, একজন নেতা ও সর্বোপরি একজন অসামান্য নাগরিক হিসেবে স্মরণ করা হবে।
×