ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চট্টগ্রাম ঘিরে ইসলামিক স্টেট গঠনের পরিকল্পনা

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৪ মার্চ ২০১৫

চট্টগ্রাম ঘিরে ইসলামিক স্টেট গঠনের পরিকল্পনা

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার বাগানবাড়ি এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামা’আতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) জেলা পর্যায়ের এক নেতাকে। সোমবার সকালে পরিচালিত একই অভিযানে উদ্ধার করা হয় গ্রেনেডজাতীয় তিনটি বোমা, একটি সাইকেল ও বোমা তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম এবং বেশকিছু জিহাদী পুস্তক। গ্রেফতার জঙ্গী এরশাদ হোসেন ওরফে বিজয় ওরফে মামুন (২০) দিনাজপুর জেলার বিরল উপজেলার বালান্দর গ্রামের রিয়াজুল ইসলামের পুত্র। জিজ্ঞাসাবাদে তার কাছ থেকে বেরিয়ে আসে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারকে নিয়ে জঙ্গীদের একটি ইসলামিক স্টেট গড়ে তোলার স্বপ্ন ও পরিকল্পনা। তার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ওই চক্রের বাকিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ। আকবর শাহ থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ জানান, গোপন তথ্যের ভিত্তিতে সকাল সাড়ে ৭টার দিকে আকবর শাহ থানার নিউমনসুরাবাদ বাগানবাড়ি আবাসিক এলাকার একটি বাসা থেকে গ্রেফতার করা হয় জেএমবি জঙ্গী এরশাদ হোসেনকে। সে ওই এলাকায় একটি স্টেশনারি এ্যান্ড ফটোস্ট্যাট এ্যান্ড কসমেটিক্স নামের দোকানে চাকরি করত। তবে এ চাকরির আড়ালে মূলত সে কাজ করে আসছিল জঙ্গী সংগঠন জেএমবি চট্টগ্রামের দায়িত্বশীল এক নেতা হিসেবে। ওই বাসা থেকে উদ্ধার করা হয় গ্রেনেডজাতীয় শক্তিশালী তিনটি বোমা, একটি সাইকেল, শক্তিশালী ডেটোনেটর, গানপাউডার, বিপুল পরিমাণ জেলবোমা ও গ্রেনেড তৈরির উপকরণ এবং বেশকিছু জিহাদী পুস্তক ও কাগজপত্র। জেএমবি জঙ্গী এরশাদ হোসেনকে গ্রেফতারের পর আকবর শাহ থানায় উপস্থিত হন সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল। এর আগে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেন অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) বনজ কুমার মজুমদার। জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে চট্টগ্রামকে ঘিরে জেএমবির পরিকল্পনার চাঞ্চল্যকর তথ্য। জঙ্গী এ সংগঠনটির পরিকল্পনায় রয়েছে বাংলাদেশ এবং ভারত ও মিয়ানমারের অংশবিশেষ নিয়ে একটি ইসলামিক স্টেট গঠনের স্বপ্ন। এর জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামে শক্তিশালী একটি অবস্থান তৈরি করার পরিকল্পনায় রয়েছে তারা। জেএমবি জঙ্গী এরশাদ হোসেন জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করে যে, পরিকল্পনা বাস্তবায়নে চট্টগ্রামে রয়েছে তাদের একটি নেটওয়ার্ক। নেতা, এহছার সদস্য, আনসারসহ বিভিন্ন স্তরে অন্তত ৭ থেকে ৮শ’ সদস্য রয়েছে তাদের। বিভিন্ন ধরনের খাদ্যদ্রব্য, স্টেশনারি, ফটোস্ট্যাট, ফেব্রিক ফ্যাশন হাউস, ফুটপাতের ভাসমান দোকান, কসমেটিক্সসহ শতাধিক দোকান রয়েছে তাদের। কেউবা এসব দোকানের মালিক হিসেবে আবার কেউবা কর্মচারী হিসেবে নিয়োজিত থেকে তাদের জঙ্গী কার্যক্রম চালিয়ে আসছে। পুলিশী জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে যে, জেএমবি জঙ্গী এরশাদ হোসেন দিনাজপুরের বিরল উপজেলার বালান্দর উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করে ২০১১ সালে। প্রথমে সে ছিল ছাত্রশিবিরের সাথী পর্যায়ের একজন নেতা। সাংগঠনিক এক কর্মসূচীতে সে পরিচিত হয় গাইবান্ধা জেলা ছাত্রশিবিরের সাথী পর্যায়ের এক নেতার সঙ্গে। তার নাম ছিল আল ফুয়াদ ওরফে রকি ওরফে আপেল। ফুয়াদ নামের ছাত্রশিবিরের এই সাথী পরবর্তী সময়ে যোগদান করে বগুড়া জেলার জেএমবিতে। পরে সে দায়িত্ব নেয় জঙ্গী সংগঠনটির চট্টগ্রাম বিভাগের। আর এরশাদ হোসেনও ফুয়াদের হাত ধরেই যোগ দেয় জেএমবিতে। একপর্যায়ে তার ওপরই অর্পিত হয় চট্টগ্রামের দায়িত্ব। জিজ্ঞাসাবাদে এরশাদ জানায়, ২০১৪ সালের ২ জানুয়ারি থেকে সে চট্টগ্রামের দায়িত্ব পালন করছে। এদিকে, দীর্ঘদিন পর আরেক জঙ্গী নেতা গ্রেফতার হওয়ায় নড়েচড়ে উঠেছে পুলিশ প্রশাসন। জঙ্গী এরশাদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট অন্যদের গ্রেফতারেও তৎপর হয়েছে পুলিশ। সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল এ প্রসঙ্গে জানান, ছাত্রশিবির, হরকতউল জিহাদ, জেএমবি ও এ ধরনের বিভিন্ন সংগঠন একই সূত্রে গাঁথা। তাদের মূল উদ্দেশ্য এক। তারা ক্ষেত্রবিশেষে কখনও শিবির, কখনও জেএমবি আবার কখনও বা হুজি। সন্ত্রাস দমন ও জঙ্গী তৎপরতা বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সব সময় সচেষ্ট রয়েছে বলে জানান সিএমপি কমিশনার।
×