ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আস্থার প্রতিদান

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৩ মার্চ ২০১৫

আস্থার প্রতিদান

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ২০১৩ থেকে গত ফেব্রুয়ারি- ঠিক দুই বছরে একটি মাত্র সেঞ্চুরি, হাফসেঞ্চুরি সংখ্যা সাকল্যে তিন, এরপরও ‘হাইপ্রোফাইল’ নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে মার্টিন গাপটিলের টিকে যাওয়াটা বিস্ময়করই! তার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে মূলত ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের জন্য। কঠোর সমালোচনার মুখে কিউই নির্বাচক, এমন কি খোদ কোচ মাইক হেসন পর্যন্ত দ্বিধায় ছিলেন। ম্যাককুলাম বলেছিলেন, প্রতিভাবান গাপটিল ঠিকই ঘুরে দাঁড়াবে। সাবেক অধিনায়ক স্টিভেন ফ্লেমিং তাতে সমর্থন দিয়েছিলেন। বিশ্বাসের প্রতিদান এভাবে দেবেন, স্বয়ং গাপটিলও কি তা ভাবতে পেরেছিলেন? কোয়ার্টারে সাবেক চ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেললেন হার না মানা ২৩৭ রানের ইনিংস। ম্যাককুলামের হাতে শেষ চারের টিকেট এনে দেয়ার পাশাপাশি গড়লেন বিশ্বকাপ ইতিহাসের নতুন রেকর্ড! গ্রুপ পর্বে অজেয় থেকে শেষ আটে উঠে আসে নিউজিল্যান্ড। তবু বিশ্বকাপের সত্যিকারের ডাগহর্স, সাবেক চ্যাম্পিয়ন, ক্রিস গেইল নামের ভয়ঙ্কর এক ব্যাটিং দানবের ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে কোয়ার্টার ফাইনালটি কিউইদের জন্য ছিল অন্য এক চ্যালেঞ্জের। কঠিন সেই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সবাই তাকিয়ে ছিলেন খোদ অধিনায়কের দিকে। কারণ ব্যাট হাতে ম্যাককুলাম কী করতে পারেন, সেটি সবার জানা। দেশটির সাবেক কিংবদন্তি মার্টিন ক্রোর তুরুপের তাস কেন উইলিয়ামসন। দলীয় ৮৯ রানেই যখন এই দুই বড় তারকা সাজঘরে অনেকে তখন টস জিতে ব্যাটিং নেয়ার যৌক্তিকতা খুঁজতে ব্যস্ত। হতাশ ওয়েলিংটনের ওয়েস্টপ্যাক গল্যারি। তখনই দৃশ্যপটে গাপটিল। কেবল দলকেই উদ্ধার করেননি, ব্যাট হাতে নতুন ইতিহাস রচনা করলেন ডানহাতি ওপেনার। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১৫ রান করে বিশ্বকাপে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন গেইল, সেই উইন্ডিজের বিপক্ষে, সেই গেইলেরই সামনে তার রেকর্ড মুছে দিয়ে খেললেন ২৩৭ রানের ম্যারাথন ইনিংস। মাঠেই পেলেন গেইলের শুভেচ্ছা। ‘সে (গেইল) আমার কাছে আসল এবং বলল, অভিনন্দন, ডাবল সেঞ্চুরির ক্লাবে তোমাকে স্বাগতম’ জানান গাপটিল। ক্যারিবীয়দের সেমির স্বপ্ন চুরমার করে দেয়ার পথে ব্যক্তিগত ৪ রানে একবারই মারলন স্যামুয়েলসের হাতে জীবন পেয়েছিলন গাপটিল, এরপর আর পেছনে ফিরে তাকাননি। ওয়ানডেতে মারকাটারি ব্যাটিং প্রসঙ্গে গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স, রোহিত শর্মাদের নামই আগে উঠে আসে। ২০০৯-এ এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ওয়ানডে অভিষেকেই করেছিলেন সেঞ্চুরি (১২২*), মাঝে সেঞ্চুরি এসেছে আরও পাঁচটি। তাই বলে গাপটিলের নামের সঙ্গে ‘ড্যাশিং’, ‘খুনে’ শব্দগুলো কখনই ব্যবহৃত হয়নি। সেটি তার ব্যাটিংয়ের ধরনের জন্য। সব সময় ‘কুল’, দেখেশুনে সামনে এগোতে বিশ্বাসী। সেই তিনিই কি না বিশ্বকাপের নকআউট পর্বের হাঁকিয়ে বসলেন ডাবল সেঞ্চুরি! তাও ধুম-ধারাক্ক নয়, একেবারে নিজস্ব ঢংয়ে। ইনিংসজুড়ে প্রথাবিরোধী শট খুব বেশি খেলেননি। ব্যাটিং করেছেন ক্রিকেটের ব্যাকরণ মেনে। প্রথম ৫০ রান ৬৪ বলে, চার ৭। এরপর রানের গতি বড়ানোর দিকে মনোযোগী হয়েছেন। ১২ চারের সাহায্যে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১১ বলে। ১৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৪ বলে দেড় শ’। ১৫২ বলে ২১ চার ও ৮ ছক্কায় ইতিহাস গড়া ডাবল সেঞ্চুরিতে পা রাখেন গাপটিল। ১৫০ থেকে ২০০Ñ শেষ হাফ সেঞ্চুরি (৫০ রান) আসে মাত্র ১৮ বলে! আত্মবিশ্বাসে ১১০% পারদ চড়িয়ে তবেই খেলেছেন বড় শট। গাপটিলের ইনিংসের মাহাত্ম্য এখানেই। এক ইনিংসেই ‘জিরো থেকে হিরো’ বনে যান। ওয়েলিংটনের গ্যালারিতে ওঠে, গাপটিল-গাপটিল সেøাগান! অবিশ্বাস্য ইনিংস খেলার আগে তিনিই দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ওয়ানডে ইনিংসের মালিক ছিলেন। ২০১৩ সালে সাউদাম্পটনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অপরাজিত ১৮৯। অবিশ্বাস্য মনে হয় এই সেই গাপটিল? ১৮৯ থেকে অপরাজিত ২৩৭Ñ মাঝের সময়টা কি বাজেই না কেটেছে। এ সময়ে গড় ছিল ২৭.৫। এমনকি চলতি বিশ্বকাপেও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খারাপ করার পর তার পরিবর্তে টম লাথামকে দিয়ে ওপেন কারানো হয়েছিল! চার ইনিংসে রান ৪৯, ১৭, ২২ ও ১১! আফগানিস্তানের বিপক্ষে ৫৭ রান করে ফর্মে ফেরা। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৫, অতপর কোয়ার্টারের ইতিহাস। যে কোচ দ্বিধায় ছিলেন সেই তিনিও এখন গাপটিলে মুগ্ধ। ‘ও আসলে বড় আয়োজনের বড় কারিগর। আমরা অনেক সময়ই সেটি ভুলে যেতাম! এখন নিশ্চই মনে থাকবে। নিউজিল্যান্ডে হয়ে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির জন্য গোটা দেশ ওকে স্যালুট জানাচ্ছে। সবাই চাইছে, ট্রফি জিতেই থামুক সে!’ অথচ কিইদের ভরসার জায়গা থেকে উচ্চারিত প্রথম নামটি গাপটিলের নয়। টিম সাউদি, ড্যানিয়েল ভেট্টোরি, ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম, কোরি এ্যান্ডারসনরাই এগিয়ে। এবার নিশ্চই পিছিয়ে থাকবেন না তিনি? মঙ্গলবার প্রথম সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে মোকাবেলা করবে কিউইর।
×