ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

তিন দিন পর্যন্ত এ্যান্টিবায়োটিক না খাওয়ানোর পরামর্শ

মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, আতঙ্কের কিছু নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ মার্চ ২০১৫

মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে, আতঙ্কের কিছু নেই

নিখিল মানখিন ॥ মার্চ থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমী জ্বরের সময়। এ সময়েই দেশে বিভিন্ন মৌসুমী ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে। বর্তমানে সর্দি-কাশি জ্বরের প্রকোপ বেড়েছে রাজধানীতে। চিকিৎসকেরা এমন অবস্থাকে বলছেন ‘মৌসুমী জ্বর’। বিগত সময়ে এ সময়েই সোয়াইন ফ্লু’তে বেশি সংখ্যক মানুষ আক্রান্ত হয়। সব বয়সের মানুষই এ জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। নগরীর প্রায় প্রতিটি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে এ জ্বরে আক্রান্তরা ভিড় জমাচ্ছে। রোগীর কাশি অনেক সময় রূপ নিচ্ছে শ্বাসকষ্টে। কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছে নিউমোনিয়ায়। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মৌসুমী জ্বর নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ জ্বরের চিকিৎসা লাগে না। এ জ্বরে আক্রান্ত হলে মাথাব্যথা হতে পারে। তিন দিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর গা হালকা ঠা-া পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার মুছে দিতে হবে। তিন দিন পরও জ্বর না কমলে, ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে স্বাভাবিক খাবার দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। ছোঁয়াচে হওয়ায় এ ধরনের জ্বর থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা। নগরীতে সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের হিড়িক পড়েছে। একজন আক্রান্ত হলে পরিবারের কোনো সদস্যই রেহাই পাচ্ছে না। সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্চ-এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমী জ্বরের প্রকোপ থাকে। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। এমনটি বলছেন তাঁরা। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। নগরীর স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালেও (মিটফোর্ড হাসপাতাল) সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা আগের তুলনায় শতকরা ২০ ভাগ বেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তাঁরা জানান, সব বয়সের মানুষ আক্রান্ত হলেও শিশুদের সংখ্যাই বেশি। ভাইরাসজনিত কারণে এমনটি হয়ে থাকে। বিষয়টি নিয়ে আতঙ্কের কিছুই নেই। তিন দিন পর্যন্ত এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। প্যারাসিটামল খাওয়া যেতে পারে। তিন দিন পরও জ্বর না কমলে, ডাক্তারদের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে। রোগীকে তরল জাতীয় খাবার বেশি করে দিতে হবে। শরীর মুছে দিতে হবে। বাইরের খাবার ও পানি খাওয়ার বিষয়ে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়েও এ সব রোগে আক্রান্ত রোগীর ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক ডাঃ এবিএম আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে জানান, আগের তুলনায় মৌসুমী জ্বরে আক্রান্ত রোগীর ভিড় বেড়েছে। আমার ব্যক্তিগত চেম্বারেও এ ধরনের রোগীর আগমন বেড়েছে। সব বয়সের মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে। চেম্বারে প্রতিদিন ১৫ থেকে ২০ জন রোগী আসছে। তিনি জানান, এটি ভাইরাসজনিত রোগ। আর ভাইরাসবাহিত এ সব রোগ অন্য আরেকটি রোগে আক্রান্ত হতে সহায়তা করে। আবহাওয়ার বিরূপ আচরণের কারণে এ সব রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। রোদে ঘোরাফেরা কমাতে হবে। বাইরের খোলা জায়গার খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। বেশি পরিমাণে বিশুদ্ধ পানি খাওয়া উচিত। নিয়মিত শরীর মুছে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেও মৌসুমী জ্বরে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এ হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অধ্যাপক কাজী তরিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, সর্দি-কাশি জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা গ্রহণকারী রোগীর সংখ্যা অনেক বেড়েছে। এটি ভাইরাসজনিত রোগ, অস্বাভাবিক কিছু না। ঋতু পরিবর্তন হলে এমনটি হয়ে থাকে। এটি এক ধরনের মৌসুমী জ্বর। তাপমাত্রার তারতম্যের কারণেও সর্দি-কাশি জ্বর হতে পারে। খুব বেশি গরম ও খুব বেশি শীত না থাকাটাও একটি কারণ হতে পারে। তিনি জানান, এটি একটি স্বাভাবিক জ্বর। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর চিকিৎসা নিতে হয় না। কাশির কারণে গলা ব্যথা ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে। আক্রান্তের তিন থেকে চারদিন এন্টিবায়োটিক খাওয়া ঠিক হবে না। ছোঁয়াচে হওয়ায় এ ধরনের জ্বর থেকে সাবধান থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। রোগতত্ত্ব, রোগ নির্ণয় ও রোগ গবেষণা কেন্দ্রের (আইইডিসিআর)-এর উর্ধতন বৈজ্ঞানিক মুশতাক হোসেনও সাবধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি জানান, মার্চ-এপ্রিল থেকে অক্টোবর পর্যন্ত মৌসুমী অসুখের প্রকোপ থাকে। চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে কিছু ওষুধপত্র সেবন করলে কয়েকদিনের মধ্যেই সমস্যা কেটে যাবে। আতঙ্কের কিছু নেই। তবে আক্রান্ত রোগীর প্রয়োজনীয় চিকিৎসার বিষয়ে অবহেলা করা যাবে না। ভাইরাসবাহিত অসুখে আক্রান্ত হলে বাইরে বের হওয়া ঠিক হবে না। পেটের পীড়া ও শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে সরাসরি চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। জ্বরে আক্রান্ত রোগীর গা হালকা ঠা-া পানি দিয়ে দিনে কয়েকবার মুছে দিতে হবে। এ সময় মাথাব্যথা হতে পারে। জ্বর সাধারণত ১০১ ডিগ্রি ফারেনহাইট হলে বড়দের প্যারাসিটামল ট্যাবলেট ও শিশুদের প্যারাসিটামল সিরাপ খাওয়াতে হবে। জ্বর হলে স্বাভাবিক খাবার খেতে হবে। নাক পরিষ্কার রাখতে হবে। হাঁচি-কাশি দেয়া এবং নাক দিয়ে পড়া পানি মুছতে পরিষ্কার রুমাল বা কাপড় ব্যবহার করতে হবে। কিছুতেই ফ্রিজে রাখা ঠা-া বা পচাবাসি খাবার খাওয়া যাবে না। সোয়াইন ফ্লু নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডাঃ মাহমুদুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে এখনও সোয়াইন ফ্লু’র মৌসুম শুরু হয়নি। মার্চ থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন মৌসুমী ভাইরাস সংক্রমণের ঘটনা ঘটে।
×