ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সপ্তাহব্যাপী আয়োজন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে

গান কবিতা নাটক নৃত্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ মার্চ ২০১৫

গান কবিতা নাটক নৃত্যে স্বাধীনতা সংগ্রাম

মোরসালিন মিজান ॥ বাঙালীর শ্রেষ্ঠ ধন স্বাধীনতা। বহু সংগ্রামের বিনিময়ে পাওয়া বাংলাদেশ। নয় মাস বীরের মতো লড়ে মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধারা। শুরুটা এই মার্চে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ স্বাধীনতা ঘোষণা করেছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। দিবসটি উপলক্ষে প্রতি বছরই স্বাধীনতা উৎসবের আয়োজন করে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। একই দিন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। উভয় উপলক্ষ সামনে রেখে প্রতিবছর আয়োজন করা হয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসবের। রবিবার থেকে শুরু হয়েছে এবারের উৎসব। সপ্তাহব্যাপী আয়োজনে আলোচনা, সঙ্গীত, নৃত্য, নাটক, আলোকচিত্রের ভাষায় তুলে ধরা হবে বাঙালীর স্বাধীনতা সংগ্রামের নানা দিক। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের উন্মুক্ত মঞ্চে বিকেলে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়। স্বাধীনতা সংগ্রামে চিত্রশিল্পীদের বিশেষ ভূমিকার কথা অনেকেই জানেন। আয়োজকরা এবার সে দিকটিকে বিশেষভাবে তুলে ধরার প্রয়াস নিয়েছেন। আয়োজনের শুরুতেই এ বিষয়ে স্মারক বক্তৃতা করেন মুক্তিযুদ্ধকালীন সরকারের প্রকাশনা বিভাগের ডিজাইনার বিশিষ্ট চিত্রশিল্পী বীরেন সোম। ‘স্বাধীনতাসংগ্রামে শিল্পীসমাজ’ শীর্ষক আলোচনায় সেই সময় শিল্পীরা কীভাবে দেশের জন্য কাজ করেছেন তার নাতিদীর্ঘ বর্ণনা দেয়া হয়। একই মঞ্চ থেকে বার্ষিক প্রতিবেদন পেশ করেন জাদুঘরের সদস্য সচিব জিয়াউদ্দিন তারিক আলী। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের গত এক বছরের কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনে। এর আগে স্বাগত বক্তব্য রাখেন আরেক ট্রাস্টি ডাঃ সারওয়ার আলী। সন্ধ্যায় শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন সংগঠন ও স্কুলের শিক্ষার্থীরা সঙ্গীত নৃত্য আবৃত্তি ও নাটক পরিবেশন করে। এদিন দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। নৃত্য পরিবেশন করে সাংস্কৃতিক সংগঠন স্পন্দন। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। পথনাটক পরিবেশন করে গতি থিয়েটার। আলাদা করে সময় দেয়া হয়েছিল ওয়েস্ট এ্যান্ড হাই স্কুল ও খিলগাঁও গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থীদের। নিজেদের মতো করে মহান মুক্তিযুদ্ধকে তুলে ধরে তাঁরা। এদিকে, মুক্তিযুদ্ধের সময় চিত্রশিল্পীদের আঁকা বিভিন্ন ছবি নিয়ে শুরু হয়েছে প্রদর্শনী। যুদ্ধ চলাকালীন সময় কলকাতায় জড়ো হয়ে শিল্পীরা যেসব ছবি এঁকেছিলেন, সেসবের বেশ কিছু রেপ্লিকা এখানে প্রদর্শিত হচ্ছে। আয়োজকরা জানান, আজ সোমবার একই রকম আয়োজন থাকবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে। আজ একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস। দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করবে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী। পথনাটক পরিবেশন করবে আনন্দ ও নাট্যভূমি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে স্বরশ্রুতি এবং স্বরচিত্র আবৃত্তি চর্চা ও বিকাশ কেন্দ্র। নিজস্ব পরিবেশনা নিয়ে আসবে লেকসার্কাস বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও আজিমপুর গার্লস স্কুল এ্যান্ড কলেজ। মঙ্গলবার একক সঙ্গীত পরিবেশন করবেন বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী। দলীয় পরিবেশনা নিয়ে আসবে ঋষিজ শিল্পীগোষ্ঠী, স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র ও অপেরা। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে চারুকণ্ঠ ও স্রোত আবৃত্তি সংসদ। থাকবে আগারগাঁও আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের পরিবেশনা। ২৫ মার্চ সেই কালো রাত। এ উপলক্ষে সারা দেশেই থাকবে নানা কর্মসূচী। বিশেষ আয়োজন থাকবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরেও। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় কালোরাতে নির্মম গণহত্যার শিকার মানুষের স্মরণে প্রদীপ প্রজ্বলন করা হবে। সাংস্কৃতিক পরিবেশনা নিয়ে আসবে বধ্যভূমির সন্তানদল ও মাতুয়াইল সঙ্গীত একাডেমি। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করবে স্বনন ও মুক্তবাক। পরে সঙ্গীত পরিবেশন করবেন ছায়ানটের শিল্পীরা। পথনাটক পরিবেশন করবে লোকনাট্যদল-বনানী। আয়োজকরা জানান, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসেও থাকবে বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠানমালা। সকাল ৯টায় শিশু কিশোরদের জন্য আনন্দ আয়োজন। বিভিন্ন পরিবেশনা নিয়ে আসবে খেলাঘর ও কল্পরেখার ক্ষুদে শিল্পীরা। থাকবে আকর্ষণীয় সং যাত্রা। পরিবেশন করবে টাঙ্গাইলের মহাদেব সং যাত্রাদল। নিজস্ব পরিবেশনা নিয়ে আসবে ইউসেপ টুইটা বোট ফিল্ড স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুলের শিক্ষার্থীরা। সপ্তাহব্যাপী আয়োজন ২৮ মার্চ শেষ হবে।
×