ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে নিউজিল্যান্ড

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২২ মার্চ ২০১৫

উইন্ডিজকে হারিয়ে সেমিতে নিউজিল্যান্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ চতুর্থ কোয়ার্টারে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১৪৩ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে বিশ্বকাপের সেমিতে জায়গা করে নিয়েছে সহআয়োজক নিউজিল্যান্ড। ম্যাচের নায়ক মার্টিন গাপটিলের ইতিহাস গড়া ডাবল সেঞ্চুরির ওপর ভর করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেটে ৩৯৩ রানের বিশাল স্কোর গড়ে কিউইরা। জবাবে ৩০.৩ ওভারে ২৫০ রানে অলআউট হয় উইন্ডিজ। ফাইনালের টিকেট পেতে মঙ্গলবার প্রথম সেমিতে দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন ভারতের পর দ্বিতীয় দল হিসেবে অপরাজিত থেকে গ্রুপ পর্ব পেরোয় নিউজিল্যান্ড। কালও অব্যাহত থাকে কিউইদের সেই দাপট। প্রতিপক্ষ ক্যারিবীয়দের অনেকটা দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে ঘরের মাটিতে ১১তম বিশ্বকাপের শেষ চারে জায়গা করে নেয় ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের দল। ওয়েলিংটনের ওয়েস্টপ্যাক স্টেডিয়ামে টস জয় থেকে শুরু করে ম্যাচের পুরোটাই ছিল স্বাগতিকদের নিয়ন্ত্রণে। যেখানে ব্যাটিংয়ের অপূর্ব নিদর্শন স্থাপন করে ইতিহাসের পাতায় নাম লেখান ওপেনার গাপটিল। প্রতিপক্ষ বোলারদের নিয়ে ছেলেখেলায় নেতৃত্ব দেন তিনি, উইলোবাজিতে বেসামাল করে তোলেন জেসন হোল্ডার-জেরমে টেইলরদের! অথচ এক পর্যায়ে দলীয় ২৭ রানে প্রথম ও ৮৯ রানে দ্বিতীয় উইকেট হারায় কিউইরা। ব্যক্তিগত ১২ রান করে সাজঘরে ফেরেন অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। হালের তারকা কেন উইলিয়ামসন আউট হন ৩৩ রানে। বাকি গল্পটা কেবলই গাপটিলের। নিউজিল্যান্ডের ৩৯৩ রানের মধ্যে শতকরা ৬০.৫ ভাগই আসে তার ব্যাট থেকে! রস টেইলরের ৪২ দ্বিতীয় সর্বোচ্চ, এ থেকে প্রমাণ হয় এক গাপটিলের কাছে কী রকম অসহায় ছিলেন হোল্ডাররা? অপর প্রান্তে ধুম-ধাম পিটিয়ে সতীর্থরা অল্প স্বল্প রান করে দিয়ে সাজঘরে ফিরেছেন, তার মাঝে নিজের মতো করে চালিয়ে গেছেন তিনি। ফল তৃতীয় উইকটে টেইলরের সঙ্গে ১৪৩ রানই সর্বোচ্চ জুটি। দ্বিতীয় উইকেটে উইলিয়ামসনের সঙ্গে ১১.৪ ওভারে ৬২, পঞ্চম উইকেটে গ্রান্ট ইলিয়টের সঙ্গে মাত্র ৩.১ ওভারে ৫৫ রান যোগ করেন গাপটিল! গাপটিল একাই করেছেন ২৩৭, অন্যদিকে ন্যূনতম হাফসেঞ্চুরি পাননি আর কেউ, কিউইরা গড়েছে ৩৯৩ রানের পাহাড়সম সংগ্রহÑ বিশ্বকাপ তো বটেই, ওয়ানডে ইতিহাসেই এমন ব্যাটিং বিরল। সুতরাং নিউজিল্যান্ডের ইনিংস উল্লেখ করলে আগা-গোড়া কেবলই সামনে উঠে আসবে গাপটিলের নাম। আধুনিক ক্রিকেটে ক্রিস গেইল-এবি ডি ভিলিয়ার্সেল মতো ড্যাশিং-পুশিং নন, তাই তার ইনিংসটিও ছিল ব্যতিক্রম! ধীরে ধীরে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় তুলে নিয়েছেন। প্রথম হাফসেঞ্চুরি পূরণে বল খেলেন ৬৪, যেখানে চারের মার ৭টি। এরপর রানের গতি বড়ানোর দিকে মনোযোগী হন। ১২ চারের সাহায্যে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১১ বলে। ১৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৪ বলে দেড় শ’। ১৫২ বলে ২১ চার ও ৮ ছক্কায় ইতিহাস গড়া ডাবল সেঞ্চুরিতে পা রাখেন গাপটিল। ১৫০ থেকে ২০০Ñ শেষ হাফসেঞ্চুরি (৫০ রান) আসে মাত্র ১৮ বলে! ক্রিস গেইলকে ছাড়িয়ে (২১৫) বিশ্বকাপ ইতিহাসের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ২৩৭ রানের নতুন রেকর্ড গড়েন গাপটিল। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। অথচ ফর্মহীনতায় নিউজিল্যান্ডের বিশ্বকাপ দলে সুযোগ পাওয়া নিয়েই ছিল সংশয়। ক্রিকেট আসলেই গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা, যেখানে খেলাটির ভাগ্য বিধাতার লেখন আরও অনিশ্চয়তাময়! নিউজিল্যান্ডের স্কোর বোর্ডে শেষ ১০ ওভারে ওঠে ১৫৩ রান! বিশ্বকাপে এটিও নতুন রেকর্ড, ওয়ানডেতে দ্বিতীয়। বছরের শুরুতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ডি ভিরিয়ার্সের সেই ব্যাটিং তা-বের ম্যাচে শেষ ১০ ওভারে ১৬৩ রান তুলেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। শেষ দিকে ইলিয়টের ১১ বলে ২৭ বড় সংগ্রহে অবদান রাখে। হতাশায় পিষ্ট হওয়া উইন্ডিজ বোলারদের মধ্যে টেইলর ৩ ও রাসেল নেন ২ উইকেট। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালের মতো ম্যাচে আগে ব্যাট করা দল ৩৯৩ রান তুললে খেলার আগেই খেলা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু প্রতিপক্ষ দলে ক্রিস গেইল ছিলেন বলেই আগ্রহটা বজায় ছিল। শুরুতে ঝড়ের ইঙ্গিতও দিয়েছিলেন তিনি। ২৭ রানে ২ উইকেট হারানোর পরও তাই ক্যারিবীয়দের ভা-ারে ৯.১ ওভারে জমা হয় ৮০ রান, ১৬.১ ওভারে ১২০! ৩৩ বলে ২ চার ও ৮ ছক্কায় ৬১ রান করে জ্যামাইকান টর্নেডো সাজঘরে ফিরলে খেই হারায় ক্যারিবীয়রা, ১২০/৫Ñএ পরিণত হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা। তবে অলআউট হলেও, শেষ দিকের ব্যাটসম্যানদের ধুম-ধারাক্কা ছোট কয়েকটি আকর্ষণীয় ইনিংসে ভার করে ৩০.৩ ওভারেই ২৫০ রান তুলে ফেলে হোল্ডাররা! অধিনায়ক হোল্ডার নিজে নয় নম্বরে নেমে ২৬ বলে ৪২, তার আগে ড্যারেন সামি ১৬ বলে ২৭ ও আন্দ্রে রাসেল ১১ বলে ২০ রান করে সাজঘরে ফেরেন। কিউইদের হয়ে ট্রেন্ট বোল্ট ৪, টিম সাউদি ও ড্যানিয়েল ভেট্টোরি নেন ২ উইকেট।
×