ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ২২ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আজ ২২ মার্চ বিশ্ব পানি দিবস। এবারের পানি দিবসের প্রতিপাদ্য ধরা হয়েছে পানি এবং স্থায়িত্বশীল উন্নয়ন। ১৯৯৩ সাল থেকে সারাবিশ্বে ২২ মার্চ পানি দিবস হিসেবে পালন করা হচ্ছে। ওই বছর জাতিসংঘের সাধারণ সভায় ২২ মার্চকে পানি দিবস হিসেবে অনুমোদন দেয়া হয়। এরপর থেকেই প্রতিবছর ২২ মার্চ পানি দিবস বিশ্বে পানি দিবস হিসেবে পালন করা হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের পেক্ষাপটে পানি দিবস খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। কারণ বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে বেশি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনকারী দেশের মধ্যে অন্যতম। গত তিরিশ বছর ধরে বাংলাদেশের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ১.৪ ভাগ হারে নিচে নেমে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি পানির স্তর নেমে যাচ্ছে রাজশাহী ও রংপুর অঞ্চলে। একই কারণে প্রতিবছর মার্চ এপ্রিল মাচে দেশে ১৬ লাখ অগভীর নলকূপের মধ্যে ৪ লাখ অকেজো হয়ে যাচ্ছে। ফলে প্রতিবছর সেচের আওতায় জমির পরিমাণ ধীরে ধীরে কমে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল গ্রাউন্ড ওয়াটার এ্যাসোসিয়েশনের তথ্য মতে ২০১০ সালে বিশ্বে যে ১৫টি দেশ সবচেয়ে বেশি ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করে তাদের মধ্যে ভারত, চীন, যুক্তরাষ্ট্র, পাকিস্তান, ইরানের পরই বাংলাদেশের অবস্থান রয়েছে। বাংলাদেশে ২০১০ সালে ৩০.২১ কিউবিক কিলোমিটার ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা হয়। এর মধ্যে ৮৬ ভাগ সেচ কাজে, ১৩ ভাগ গৃহস্থালী এবং ১ ভাগ শিল্পে ব্যবহৃত হয়। বিএডিসির তথ্যানুযায়ী ২০০৪ থেকে ২০১০ সালের মধ্যে অগভীর নলকূপের সাহায্যে সেচের পরিমাণ ১৪ হাজার ৪৪১ বর্গকিলোমিটার থেকে কমে ১৩ হাজার ৬৯১ বর্গকিলোমিটারে দাঁড়িয়েছে। মার্চ এবং এপ্রিল মাসে ১৬ লাখ অগভীর নলকূপের মধ্যে ৪ লাখ অকেজো হয়ে পড়ে। পরিবেশ সংগঠন নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক ও পরিবেশ অধিদফতরের সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক প্রকৌশলী আব্দুস সোবহান বলেন, দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে বিগত ৩০ বছর (১৯৮১-২০১০) ধরে বার্ষিক গড় ১.৪% হারে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সবচেয়ে বেশি নেমেছে রাজশাহীতে। প্রতি ইউনিট এলাকায় নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর ফলে প্রতিটি নলকূপের আওতাধীন এলাকা ১৯৮৪-৮৫ হতে ২০১০-১১ অত্যন্ত কমে ১৪.৫ থেকে ২.৮ হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। গড়ে নদীর পানির স্তর ১৯৮১ হতে ২০১০-এর মধ্যে ২০ মিটার থেকে কমে ১৯ মিটারে দাঁড়িয়েছে। এই হ্রাস প্রবণতা ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ার সঙ্গে ইতিবাচকভাবে সম্পর্কযুক্ত। ১৯৮৯-২০১০ সালের মধ্যে শুষ্ক মৌসুমের মোট জলাভূমির প্রায় তিন ভাগের এক ভাগ হারিয়ে গেছে। এ অবস্থা থেকে ধারণা করা যায় যে, দেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার টেকসই/দীর্ঘস্থায়ী নয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ এবং খুলনা বিভাগে কৃষিকাজের জন্য গভীর নলকূপের মাধ্যমে ভূগর্ভ থেকে অতিমাত্রায় পানি অহরণ করা হচ্ছে। সেখানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ক্রমাগত নিচে নেমে যাওয়ার কারণে শুকনো মৌসুমে নদীর প্রবাহ দ্রুত শুকিয়ে যায়। পুকুর, জলাশয় এবং হস্তচালিত নলকূপ থেকে সাধারণ মানুষ তার প্রয়োজনীয় পানি সংগ্রহ করতে পারে না। সেখানকার মানুষের জীবনযাপনে সৃষ্ট এ সঙ্কট নিরসনকল্পে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও এর কার্যকর ব্যবহার নিশ্চিত করা না হলে ২০৫০ সাল নাগাদ বাংলাদেশের মানুষের জন্য খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি অধরাই থেকে যাবে। তাদের মতে, বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা মহানগরীর পানি ব্যবস্থাপনার চিত্রটি অত্যন্ত ভয়াবহ। শিল্পকারখানাসহ ও গৃহস্থালী কাজের পানির সংকট রয়েছে যা শুষ্ক মৌসুমে আরও প্রকট আকার ধারণ করে। গুরুত্বপূর্ণ এ প্রাকৃতিক সম্পদের যথাযথ সংরক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা জরুরী। জলাধার ও ভূগর্ভস্থ পানি এবং বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনায় সরকারী সংস্থাগুলো দায়িত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে না। বরং পানি উত্তোলন ও ব্যবহারেই সংস্থাগুলোর অধিক মনোযোগ। ফলে পানি সম্পদ আজ হুমকির সম্মুখীন। এ অবস্থা চলতে থাকলে আগামী দিনগুলোতে বিশাল জনগোষ্ঠীর সুপেয় পানি চাহিদা মেটাতে এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারকে কঠোর পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হবে। তাঁরা অবিলম্বে পানি সম্পদের উৎসগুলো সংরক্ষণ ও পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার আহ্বান জানান। বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে শনিবার পরিবেশ সংগঠন পবা আয়োজিত এক আলোচনা সভায় সবার জন্য বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতকরণে নদী, খাল-বিল, হাওড়-বাঁওড়, লেক, দীঘি-পুকুর, নিম্নাঞ্চল, জলাভূমি দখল, ভরাট ও দূষণ বন্ধে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছে। একই সঙ্গে ভূগর্ভস্থ পানির রিচার্জ এবং ভূপৃষ্ঠের ও ভূগর্ভস্থ পানির প্যাটার্ন ও ব্যাপ্তি অনুসরণের জন্য উপযুক্ত মনিটরিং ব্যবস্থা গড়ে তোলার আহ্বান জানানো হয়। নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সদস্য মোঃ আলাউদ্দিন, পবার সম্পাদক ও ঢাকা সিটি কলেজের প্রফেসর ড. মশিউর রহমান, নির্বাহী সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মোঃ আবদুস সোবহান প্রমুখ।
×