ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী মনজুর আলম না নোমান?

চট্টগ্রামে ফিরে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করলেন নাছির

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২২ মার্চ ২০১৫

চট্টগ্রামে ফিরে নির্বাচনী কর্মকাণ্ড শুরু করলেন নাছির

স্টাফ রিপোর্টার, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগ দলীয় সমর্থনে আজ ম নাছির উদ্দিনের প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ার পর নগরবাসীর দৃষ্টি এখন ২০ দলীয় জোটের প্রার্থীর দিকে। ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করছে বলে দলীয় বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত দেয়া হলেও আনুষ্ঠানিক ঘোষণা এখনও আসেনি। তবে থেমে নেই আগ্রহী মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীরা। বিশেষ করে কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করে চলেছেন। শনিবার পর্যন্ত গত তিনদিনে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে ৩ ও কাউন্সিলর পদে ৯১ মনোনয়নপত্র সরবরাহ হয়েছে বলে আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানানো হয়েছে। চট্টগ্রামে বিএনপির পক্ষে মেয়র পদে সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলমের পাশাপাশি সাবেক মন্ত্রী ও কেন্দ্রীয় বিএনপি নেতা আবদুল্লাহ আল নোমানের নাম আলোচনায় আসছে। দলের বিভিন্ন সূত্রে জানানো হয়েছে, বর্তমান মেয়র মনজুর আলম যেমন এ পদে পুনর্নির্বাচনে আগ্রহী, পাশাপাশি সরকারদলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচন করে বিজয় নিশ্চিত করতে দলের অধিকাংশ নেতাকর্মী নোমানকেই দলের পক্ষে সমর্থন দেয়া সঠিক হবে বলে মনে করছেন। যদিও আবদুল্লাহ আল নোমান এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য জানাননি। তবে এম মনজুর আলম নির্বাচন ঘোষণার আগ থেকেই বলে আসছেন দল নির্বাচনে গেলে এবং তাকে সমর্থন দেয়া হলে তিনি পুনরায় চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে অংশগ্রহণে প্রস্তুত রয়েছেন। শনিবারও জনকণ্ঠকে জানিয়েছেন একই প্রতিক্রিয়া। তার সকল প্রস্তুতি রয়েছে। এদিকে, এ সিটি কর্পোরেশন মেয়র নির্বাচনে জাতীয় পার্টির পক্ষে সোলায়মান আলম শেঠ ও দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তবে শেষ পর্যন্ত এরা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকবেন কি না তা নিয়ে সচেতন মহলে সন্দেহ রয়েছে। অপরদিকে, ঢাকায় দলীয় হাইকমান্ড মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিনকে চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে মেয়র পদে সমর্থন দেয়ার পর শনিবার সকালে তিনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম ফিরে এসেছেন। সঙ্গে ছিলেন এ পদে আগ্রহী অন্যতম প্রার্থী সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীসহ আরও কয়েক নেতা। চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমানবন্দরে আ জ ম নাছির উদ্দিনকে তার সমর্থক নেতাকর্মীরা স্বাগত জানিয়ে বরণ করে নেন। তবে মহিউদ্দিন চৌধুরী গ্রুপের কোন নেতা সমর্থক বা কর্মীকে এ সংবর্ধনায় অংশ নিতে দেখা যায়নি। চট্টগ্রাম সাংস্কৃতিক অঙ্গনের কিছু কর্মী ভিআইপি লাউঞ্জে তাকে শুভেচ্ছা জানাতে উপস্থিত ছিলেন। এ সময় তিনি তাদের উদ্দেশে বলেন, মেয়র পদে নির্বাচিত হলে তিনি চট্টগ্রামের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উজ্জীবিত করতে সচেষ্ট থাকবেন। দুপুরে এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী তার বাসভবনে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন মেয়র পদে দল মনোনীত প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিনকে জেতাতে তিনি কাজ করবেন। চশমা হিলের বাসভবনে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি বলেন, তিন দফায় টানা সতেরো বছর মেয়র পদে দায়িত্ব পালন করে চতুর্থ দফার নির্বাচনে তিনি হেরে গিয়েছিলেন। এবারে তিনি মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন। কিন্তু দলীয় সমর্থন আ জ ম নাছির উদ্দিন লাভ করায় তা তিনি মেনে নিয়েছেন। তার পক্ষে চট্টগ্রাম-১৪ দলের নেতারা সর্বসম্মতভাবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে প্রস্তাব পাঠালেও তা আমলে আনা হয়নি। বিষয়টি তিনি বৃহস্পতিবারের মধ্যে জেনে ফেলায় শুক্রবার প্রধানমন্ত্রীর চট্টগ্রামের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে অনুষ্ঠিত বৈঠকে নিজেই তার প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আ জ ম নাছিরকে তিনি সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান। তিনি বলেন, সবাই একসঙ্গে কাজ করলে আমাদের দল মনোনীত প্রার্থী আ জ ম নাছির বিজয়ী হবে। বর্তমানে বোমা হামলা নাশকতা যেভাবে চলছে তা বন্ধ করতে হলে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে এবং দল মনোনীত প্রার্থীকে বিজয়ী করতে হবে। আ জ ম নাছিরের তৎপরতা ॥ শনিবার ঢাকায় মনোনয়ন নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম ফিরে সকালে তিনি নিজ বাসভবনে যান। সেখানে প্রথমে তার মায়ের দোয়া নেন। এরপর সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। তার মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়ে সাংবাদিকদের জানান, দলীয় সভানেত্রী গত দু’বছর ধরে তার (নাছির) কার্যক্রম বিশ্লেষণ করেছেন। মিডিয়া ও প্রশাসনিক রিপোর্ট বিশ্লেষণ করেছেন। এরপর তাকে এবারের সিটি নির্বাচনে দলের সমর্থন দেয়ার মনস্থ করেছেন, যা তিনি শুক্রবারের বৈঠকে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। সাংবাদিকদের তিনি জানান, তিনি স্কুল জীবন থেকে রাজনীতি করে আসছেন। যখন তিনি রাজনীতির মঞ্চে থাকেন তখন তিনি নেতা। আর মঞ্চ থেকে নামলেই তিনি সাধারণ মানুষ। অতীতে সব সময় তিনি সাধারণ মানুষের কাতারে থেকেছেন। সুখে দুঃখে বিপদে আপদে তাদের পাশে থেকেছেন বলে দাবি করেন। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বড় কিছু হব ভেবে আমি কখনও সাধারণ মানুষের পাশে যাইনি। মানুষের সেবা করার জন্য আমি সকলের সহযোগিতা চাই। আমাকে যেন সেই সেবা করার সুযোগ দেয়া হয়। দুপুরে তিনি হযরত শাহ আমানত শাহ’র মাজার জিয়ারত ও পরে আওয়ামী লীগ নেতা মরহুম এমএ আজিজ, জহুর আহমদ চৌধুরী, এমএ মান্নাসহ প্রয়াত নেতাদের কবর জিয়ারত করেন। দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আগামী ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে আওয়ামী লীগের পক্ষে আনুষ্ঠানিক সাংবাদিক সম্মেলন করে আ জ ম নাছির উদ্দিনকে আগামী সিটি মেয়র নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে নগরবাসীর কাছে পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। পাশাপাশি ব্যক্ত করা হবে নির্বাচন নিয়ে দলের বিভিন্ন পরিকল্পনা ও কর্মসূচী। সিএমপি কমিশনারের হুঁশিয়ারি ॥ চট্টগ্রাম সিটি মেয়র নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী দমাতে অভিযানে নামছে পুলিশ। নগরীর ১৬ থানার তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী থেকে শুরু করে অস্ত্রের যোগানদাতা পর্যন্ত অপরাধীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল। এসব অপরাধী আসন্ন চসিক নির্বাচনকে ঘিরে রাজনৈতিক দলের ব্যানারে থেকে নির্বাচন কলুষিত করার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ধরনের অপরাধীরা ভোট কেন্দ্র ও চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন দফতরের ওপর যাতে প্রভাব ফেলতে না পারে সেদিকে পুলিশকে তৎপর থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। শনিবার বাকলিয়া থানা কম্পাউন্ডে এক মতবিনিময় সভায় সিএমপি কমিশনার এ হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন। বাকলিয়া থানা সূত্রে জানা গেছে, মহানগরীর ১৬ থানা এলাকায় পুলিশের কড়া নজরদারি শুরু হয়েছে। আগামী ২৮ এপ্রিলের নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নগরীর ১৬ থানা এলাকার সাধারণ মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হবে। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার থেকে শুরু হয়েছে পুলিশ ও এলাকাবাসীর মধ্যে নির্বাচন ভিত্তিক সমস্যা ও সমাধানমূলক কার্যক্রম। পুলিশের প্রথম সভাটি বাকলিয়া থানা কম্পাউন্ডে আয়োজন করা হলেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মোহসিনের সভাপতিত্বে এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল ম-ল। এ সময় উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও প্রশাসন) প্রকৌশলী বনজ কুমার মজুমদারসহ পুলিশের উর্ধতন কর্মকর্তাগণ।
×