ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডে দ্রুতই মিশন চালু হতে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২১ মার্চ ২০১৫

ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডে দ্রুতই মিশন চালু হতে যাচ্ছে

তৌহিদুর রহমান ॥ জাতীয় স্বার্থ রক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্যের সুযোগ বৃদ্ধি, দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়ন, শ্রমবাজার প্রসারের লক্ষ্যে বিদেশে বাংলাদেশ মিশন বাড়ছে। অতিসত্বর বিদেশে বাংলাদেশের দুটি নতুন মিশন চালু হচ্ছে। আগামী বছর আরও দুটি মিশন চালুর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এছাড়া গত ৫ বছরে ১১ নতুন মিশন চালু হয়েছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, চারদলীয় জোট সরকারের আমলে বিদেশে বেশ কয়েকটি মিশন বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে ২০০৯ সালে মহাজোট সরকারে আসার পরে পুনরায় মিশনগুলো চালুর সিদ্ধান্ত নেয়। এছাড়া নতুন নতুন মিশন চালুর পরিকল্পনাও গ্রহণ করে। সে লক্ষ্যে গত ৫ বছর বিভিন্ন দেশে ১১ মিশন চালু হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডে দূতাবাস খোলার জন্য ইতোমধ্যে যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সত্বর এই দুই দেশে নতুন দূতাবাস চালু হবে। আগামী বছর সুদান ও সিয়েরালিওনে দূতাবাস খোলার পরিকল্পনা রয়েছে সরকারের। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ইউরোপের দুটি দেশের দূতাবাসে নিয়োগের জন্য দুই রাষ্ট্রদূত, দুই প্রথম সচিব ও দুই সহকারী কনস্যুলার ইতোমধ্যেই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ইউরোপের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের সুযোগ বাড়ানোর লক্ষ্যে ডেনমার্ক ও পোল্যান্ডে দূতাবাস খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। আগামী মে মাসের মধ্যেই এই দুই দূতাবাসের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্পের বিকাশে সম্প্রতি অর্থনীতির এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। আর ডেনমার্ক বাংলাদেশের এই জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সবচেয়ে বড় ক্রেতা। তাছাড়া ডেনমার্ক বাংলাদেশের সফটওয়্যার রফতানির অন্যতম বৃহৎ বাজার। বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও সফটওয়্যার শিল্পের বিকাশে ডেনমার্কের প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতা ও কারিগরি সহায়তা রয়েছে। ডেনমার্কের সরকারী সাহায্য সংস্থা ডেনিশ ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (ডানিডা) বাংলাদেশের গ্রামীণ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছে। ডেনমার্কে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক বাংলাদেশী বসবাস করছে এবং নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। দেশটিতে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ঋণাত্মক হওয়ায় এবং জনগণের গড় আয় বেশি হওয়ায় বৃদ্ধ ব্যক্তির সংখ্যা বাড়ছে। এ কারণে এখানে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার বহুগুণে সম্প্রসারিত হবে। এসব বিবেচনায় ডেনমার্কে দূতাবাস খোলা হচ্ছে। জানা গেছে, ডেনমার্কের বাণিজ্য ও উন্নয়নমন্ত্রী মোনস ইয়েনসেন মঙ্গলবার ঢাকা সফরে এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীসহ কয়েক মন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন। এসব বৈঠকে তিনি বাংলাদেশ ও ডেনমার্কের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এছাড়া বাল্টিক ও স্ক্যান্ডিনেভিয়ান অঞ্চলের আটটি দেশের মধ্যে মাত্র একটিতে (সুইডেন) বাংলাদেশ দূতাবাস আছে। তাই ওই অঞ্চলে আরেকটি দূতাবাস স্থাপন করা হলে কূটনৈতিক কার্যক্রম আরও জোরদার হবে। সূত্র জানায়, ইউরোপের পোল্যান্ডে আগেও বাংলাদেশের দূতাবাস ছিল। তবে ২০০২ সালে চারদলীয় জোট সরকারের সময় পোল্যান্ডের দূতাবাসটি বন্ধ করে দেয়া হয়। পোল্যান্ডের দূতাবাস খোলার অপরিহার্যতার কারণ দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য। বাংলাদেশের চা রফতানির একটি অন্যতম বৃহৎ বাজার দেশটি। এছাড়া ইউরোপীয় দেশের মধ্যে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক পোশাক শিল্পপণ্যও রফতানি হয় পোল্যান্ডে। পোল্যান্ড অস্ত্র-গোলাবারুদেরও অন্যতম সরবরাহকারী। খুব সত্বর পোল্যান্ডে এই দূতাবাস চালু হচ্ছে। ইতোমধ্যে এই দূতাবাসের জন্য একজন রাষ্ট্রদূতও নিয়োগ দিয়েছে সরকার। মহাজোট সরকারে আসার পরে পোল্যান্ডের দিল্লীভিত্তিক রাষ্ট্রদূত প্রফেসর পিও কোডকোভসি বঙ্গভবনে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের কাছে তার পরিচয়পত্র পেশকালে পোল্যান্ডে দূতাবাস খোলার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, পোল্যান্ড ১৯৭২ সালের ১২ জানুয়ারি ষষ্ঠ রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশকে স্বীকৃতি প্রদান করে। সে কারণে পোল্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের একটি ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ইউরোপের এই দুই দেশের পরে সুদান ও সিয়েরালিওনের দূতাবাসের বিষয়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। এর মধ্যে সুদান ও সিয়েরালিওনে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অনেক বাংলাদেশী সেনা কর্মরত। এ দুই দেশে কৃষি খাতে জনশক্তি রফতানি ছাড়াও বাংলাদেশের নানাবিধ ব্যবসার সম্ভাবনা ও সুযোগ রয়েছে। এ কারণে আগামী বছর এই দুই দেশে মিশন খোলা হবে বলে আশা করছে মন্ত্রণালয়। গত ৫ বছরে বিদেশে ১১ মিশন মিশন খোলা হয়েছে। এসব মিশনের মধ্যে রয়েছে এথেন্স, ব্রাসিলিয়া, লিসবন, মেক্সিকো সিটি, পোর্ট লুইস, বৈরুত, ইস্তাম্বুল, কুনমিং, মিলান, মুম্বাই ও ভিয়েনা। এখন বিশ্বের ৫৩ দেশে বাংলাদেশের ৬৯ দূতাবাস, কনস্যুলেট, ডেপুটি হাইকমিশন, এ্যাসিসটেন্স হাইকমিশন অফিস রয়েছে।
×