ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্লগার অভিজিত হত্যাকাণ্ড

বুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন অধ্যাপক অজয় রায়

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২১ মার্চ ২০১৫

বুয়েট শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনলেন অধ্যাপক অজয় রায়

বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার ॥ বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিত রায় হত্যাকান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষক ফারসীম মান্নান জড়িত রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অভিজিতের বাবা অধ্যাপক অজয় রায়। শুক্রবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরসি মজুমদার মিলনায়তনে আয়োজিত এক নাগরিক সমাবেশে অভিজিতের খুনীদের হত্যাকারীদের গ্রেফতার করতে না পারায় ক্ষোভ প্রকাশ করে এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, সেদিন অভিজিত-বন্যাকে ওই আড্ডায় ডেকে নিয়েছিলেন ফারসীম মান্নান। সেদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মেলা প্রাঙ্গণে একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অভিজিত ও তার স্ত্রী অবস্থান করছিলেন। পরে বিজ্ঞান লেখকদের এক আড্ডায় যোগ দেন তারা। তিনি আরও বলেন, ফারসীম মান্নানের গতিবিধি ও তার চরিত্র আমার কাছে প্রশ্নবিদ্ধ মনে হচ্ছে। যিনি ফেসবুকের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনার ব্যবস্থা করেন। যাতে ১১ জন আমন্ত্রিত অতিথির মধ্যে ৪-৫ জন ছিলেন অনাগত। তাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এ সময় তিনি সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, তাদের বুয়েটের ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ওই শিক্ষকই ডেকে এনেছিলেন। অজয় রায় জানান, অভিজিতের বইয়ের প্রকাশনা সংস্থা শুদ্ধস্বরের অনুষ্ঠানে সাড়ে ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত অবস্থান করেন তার ছেলে ও পুত্রবধূ। পরে ছায়াবিথী ও অবসর প্রকাশনীর স্টলের মাঝে ত্রিঁপল বিছানো উন্মুক্ত স্থানে সেই আড্ডায় বসেন তারা। সেখানে রাত ৮টা পর্যন্ত বিজ্ঞান বিষয়ে আলোচনা হয়। পরে খোঁজ নিয়ে তিনি জানতে পারেন, জিরো টু ইনফিনিটি ও পাই নামে দুটো বিজ্ঞান ম্যাগাজিনের সদস্য ছিলেন ওই অনাহূত ব্যক্তি। যদিও ঘটনাস্থলে জিরো টু ইনফিনিটির সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন সেই ব্যক্তিদের ওপরে ওপরে রাগ দেখান। এক পর্যায়ে তাদের কারা আমন্ত্রণ করেছে জানতে চাইলে তারা দাবি করে, স্যার (ফারসীম মান্নান) তাদের ডেকেছেন। এগুলো অভিজিত জানত না। পরে অভিজিতকে দেখে তারা সেখান থেকে উঠে চলে যায়। ওই আলোচনা শেষে রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাইরে অভিজিতকে হত্যা করা হয়। ব্যক্তিগত অনুসন্ধানে তিনি এ তথ্য পেয়েছেন বলে জানান। এসব তথ্য ডিবি, সিআইডি এবং এফবিআই সদস্যদের জানানো হয়েছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, আমি পুরো বিষয়টি গোয়েন্দাদের জানিয়েছি। এরপর এক মাসের মতো সময় পার হতে যাচ্ছে। তবে দৃশ্যত কোনো অগ্রগতি হয়েছে বলে মনে হয় না। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে হত্যাকা-ে জড়িতদের বের করতে পারবে বলে আশা করি। এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের সভাপতিত্বে শোক সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক, শিক্ষক সমিতির সভাপতি ফরিদউদ্দিন আহমেদ, কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম, আওয়ামী লীগ নেতা নূহ উল আলম লেনিন, সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল (অব) শওকত আলী, কামাল লোহানী, খন্দকার ইব্রাহীম খালেদ, ডাঃ সারোয়ার আলী ও পঙ্কজ ভট্টাচার্যসহ শিক্ষাবিদ, অভিজিতের বন্ধু, শুভানুধ্যায়ী, প্রকাশক, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। সভার শুরুতে নাগরিক সমাজের পক্ষ থেকে প্রতিবাদপত্র পাঠ করেন জিয়াউদ্দিন তারেক আলী, অভিজিতের জীবনী পাঠ করে শোনান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস। এছাড়া তার প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানানো হয়। অভিজিত রায় গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একুশে বই মেলা থেকে সন্ত্রীক বাসায় ফেরার পথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘আততায়ী’র হামলায় নিহত হন।
×