সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ সমসাময়িক রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে গণসঙ্গীতকে অন্যতম মুখ্য হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেন সংস্কৃতিকর্মীরা। বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে সহিংসতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে গণসঙ্গীত মুখ্য ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে রচিত ও সুরারোপিত নতুন গণসঙ্গীতসমূহ এ আন্দোলেন বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে। বিশেষ করে গণসঙ্গীতের প্রচার, প্রসার এবং সঙ্গীতের এ ধারাকে একটি স্বতন্ত্র ধারা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার লক্ষ্যে প্রতি বছর গণসঙ্গীত উৎসব আয়োজন করে থাকে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। এরই ধারাবাহিকতায় ষষ্ঠবারের মতো আয়োজন করতে যাচ্ছে সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা। এ লক্ষে এবার আগামী ২৭ এবং ২৮ মার্চ এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
এবারের সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতার প্রতিযোগিতার সেøাগান নির্ধারণ করা হয়েছে-‘পথে পথে মিছিলের প্রতিরোধ, জনতার ঐক্যকে গড়েছি’। উদীচীর প্রতিষ্ঠাতা সত্যেন সেনের জন্মদিনকে উপলক্ষ করে গত কয়েক বছরের ধারাবাহিকতায় আয়োজিত হচ্ছে এবারের উৎসব ও প্রতিযোগিতা। স্থান-কাল ভেদে গণসঙ্গীতের ভিন্নতর ব্যাখ্যা থাকলেও প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে সময়োপযোগী বিষয়গুলোকে বিবেচনা করে উদীচী। গত মঙ্গলবার অনুষ্ঠিত হয় প্রতিযোগিতার ঢাকা বিভাগীয় পর্যায়। বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে সকাল ১০টায় শুরু হয় এ প্রতিযোগিতা। ঢাকা বিভাগের অন্তর্ভুক্ত বিভিন্ন জেলা পর্যায়ে অনুষ্ঠিত প্রতিযোগিতার বিজয়ীরা অংশ নেন বিভাগীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায়। এতে বিচারক ছিলেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সহ-সভাপতি ও বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী মাহমুদ সেলিম, প্রবীণ গণসঙ্গীত শিল্পী শাহ জামাল তোতা, বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী সোহানা আহমেদ। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন উদীচী কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি কামাল লোহানী।
ঢাকা ছাড়াও দেশের অন্যান্য বিভাগেও আয়োজিত হচ্ছে সত্যেন সেন জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা। ষষ্ঠ সত্যেন সেন গণসঙ্গীত উৎসব ও জাতীয় গণসঙ্গীত প্রতিযোগিতা সফল করার লক্ষ্যে উদীচীর কেন্দ্রীয় সভাপতি কামাল লোহানীকে চেয়ারম্যান এবং শংকর সাঁওজালকে আহ্বায়ক করে গঠিত ৯১ সদস্যের প্রস্তুতি পরিষদ নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশের বেশিরভাগ জায়গায় অনুষ্ঠিত হয়েছে জেলা পর্যায়ের প্রতিযোগিতা। বিভাগীয় পর্যায়ে বিজয়ী শিল্পীরা আগামী ২৭ মার্চ বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সঙ্গীত ও নৃত্যকলা মিলনায়তনে আয়োজিত জাতীয় পর্যায়ের প্রতিযোগিতায় চূড়ান্ত বিজয়ের লক্ষ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। ‘ক’, ‘খ’, ‘গ’ ও দলীয়- এই চারটি বিভাগে প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। একক প্রতিযোগিতার ক্ষেত্রে অনুর্ধ-১২ বছর বয়সীরা ‘ক’ বিভাগে, অনুর্ধ-১৮ বছর বয়সীরা ‘খ’ বিভাগে এবং ১৮ বছরের বেশি বয়সী সকল প্রতিযোগী ‘গ’ বিভাগের অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন। দলীয় প্রতিযোগিতা (‘ঘ’ বিভাগ)-এর ক্ষেত্রে কমপক্ষে চারজন শিল্পীর অংশগ্রহণ বাঞ্ছনীয়।
এদিকে উদীচী সূত্রে জানা গেছে এবারের গণসঙ্গীত উৎসবে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন ভারতের বিশিষ্ট গণসঙ্গীত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদার। এছাড়াও দু’দিনব্যাপী উৎসবে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ সমরে অনুপ্রেরণা দেয়া কয়েকজন কণ্ঠসৈনিককে উদীচীর পক্ষ থেকে সম্মাননা জানানো হবে।
প্রসঙ্গত, প্রগতিশীল গণচেতনা সম্পন্ন জাগরণমূলক গান, শ্রমিক-কৃষক-মেহনতি মানুষের দুঃখ-দুর্দশা এবং অধিকার সম্পন্ন সচেতনতামূলক গান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ গান, স্বাধীনতা সংগ্রামের গান, সমাজের অন্যায় অত্যাচার নিপীড়ন অবসানের দিকনির্দেশনামূলক গান, মৌলবাদ-সাম্প্রদায়িকতাবিরোধী গান, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির গান, যুদ্ধবিরোধী-স্বৈরাচারবিরোধী গান, সাম্রাজ্যবাদ ও পুঁজিবাদবিরোধী গান, বিশ্ব শান্তির পক্ষে গান, শোষণের বিরুদ্ধে গান, মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিরুদ্ধে গানকে গণসঙ্গীত হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে।