ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

লিজের শর্তভঙ্গ

সরকারী জমিতে ॥ ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ১৯ মার্চ ২০১৫

সরকারী জমিতে ॥ ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিল্লা, ১৮ মার্চ ॥ কুমিল্লায় বন্দোবস্ত (লিজ) শর্তভঙ্গ করে সরকারের প্রায় দুইশ’ কোটি টাকার ভূমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা চালাচ্ছে একটি ডেভেলপার কোম্পানি। এ লক্ষ্যে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় এলাকায় বন্দোবস্তকৃত ওই সম্পত্তির ওপর নির্মিত প্রায় অর্ধশত বছরের পুরাতন দীপিকা ও দীপালী সিনেমা হল ও আশপাশের ভবনগুলো প্রভাবশালীদের যোগসাজশে দীর্ঘদিন ধরে কখনও প্রকাশ্যে কখনও রাতের আঁধারে ভাঙ্গার কাজ চলছে। এদিকে ওই সম্পত্তি রক্ষাসহ স্থাপনা ভাঙ্গন বন্ধ করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের দায়সারা পদক্ষেপের কারণে থেমে থেমে ভাঙ্গনের কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে আসে বন্দোবস্তগ্রহীতাসহ সম্পত্তির মধ্যস্বত্বভোগী ডেভেলপার কোম্পানিটি। শর্তভঙ্গের কারণে এ সম্পত্তিতে সরকারী উদ্যোগে আধুনিক মানের সিনেমা হলসহ সরকারী প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক কার্যালয় অথবা কুমিল্লা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন বিশিষ্টজনরা। জানা যায়, কুমিল্লা নগরীর কান্দিরপাড় এলাকায় ২৪২নং ছোটরা মৌজার ২৬৯ এসএ খতিয়ানভুক্ত ১২৯৮, ১২৯৯, ১২৯৬, ১৩০০ দাগের ৬৩ শতাংশ সরকারী ভূমিতে সিনেমা হল ও হোটেল নির্মাণের জন্য ১৯৬৩ সালে মেসার্স দেলোয়ার থিয়েটার এ্যান্ড এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বন্দোবস্তের আবেদন করেন। ওই সময় শহরবাসীর বিনোদনের বিষয়টি বিবেচনা করে সেখানে শুধু সিনেমা হল ও হোটেল করার শর্তে ১৯৬৫ সালে সরকার ওই সম্পত্তি রিকুজিশন করে রেজিস্ট্রিকৃত দলিল সম্পাদন করে দেয়। কিন্তু সম্প্রতি ওই সম্পত্তিতে সরকারের অনুমতি না নিয়েই বহুতল বাণিজ্যিক, আবাসিক ও সিনেমা হল তৈরি করতে ঢাকার একটি হাউসিং কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় বন্দোবস্ত গ্রহীতা। ২০১২ সালে বিষয়টি তদন্ত করে সরকারী লিখিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয় যেহেতু ওই ভূমি সরকার থেকে শুধু সিনেমা হল ও হোটেল নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেয়া হয়েছিল, তাই বন্দোবস্ত শর্ত মোতাবেক সেখানে বাণিজ্যিক কিংবা আবাসিক ভবন তৈরির কোন সুযোগ নেই। পরবর্তীতে বন্দোবস্ত গ্রহীতার পক্ষে ওই হাউসিং কোম্পানি গত বছরের ১৮ জানুয়ারি দীপিকা সিনেমা হল ভাঙ্গার কাজ শুরু করে। তবে প্রশাসন মার্চের শেষের দিকে পুনরায় ভবনটির পেছনের অংশ দিয়ে আবারও ভবনগুলো ভাঙ্গার কাজ শুরু করা হয়। ওই সময় প্রায় দেড় মাস ধরে ভবনটি ভেঙ্গে সিংহভাগ গুঁড়িয়ে ফেলা হয় গত ১৫-২০ দিন ধরে আবার সরকারের ওই ভূমিতে প্রায় অর্ধশত শ্রমিকের মাধ্যমে পুরাতন ভবন ভাংচুরের কাজ চালানো হচ্ছে। এ নিয়ে নগরজুড়ে ব্যাপক তোলপাড় চলছে। বিশিষ্টজনরা বলছেন, নগরীর কেন্দ্রস্থলে সরকারী এ জায়গার বর্তমান মূল্য প্রায় ২শ’ কোটি টাকা। প্রশাসনের নাকের ডগায় সরকারী সম্পত্তি এভাবে যোগসাজশে বেহাত হওয়ার বিষয়টি দুঃখজনক। শর্তভঙ্গের কারণে বন্দোবস্ত বাতিল করে ভূমিটি সরকারের দখলে নিয়ে বিশাল এ জায়গায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় আধুনিক মানের সিনেমা হলসহ কয়েকটি সরকারী প্রতিষ্ঠানের দাফতরিক কার্যালয় নির্মাণ করা যেতে পারে। অথবা এখানে প্রতিষ্ঠা করা যেতে পারে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। জেলা প্রশাসক মোঃ হাসানুজ্জামান কল্লোল ভাংচুরের বিষয়টি দেখবেন বলে জানান। অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আবদুল মতিন জানান, ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে খবর পেয়ে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও তহশিলদারকে পাঠিয়ে কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ শামীম হোসেন জানান, ঘটনাস্থলে গিয়ে ভাঙ্গার কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (দক্ষিণ) মোঃ আলী আশরাফ ভূঁইয়া জানান, ওই সম্পত্তির ভবন ও বিভিন্ন স্থাপনা ভাঙ্গনের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে এবং কার্যকর করতে কোতোয়ালি মডেল থানার ওসিকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কোতোয়ালি মডেল থানার ওসি মোঃ খোরশেদ আলম জানান, এ সম্পত্তি নিয়ে আদালতে মামলা রয়েছে এবং তা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত সকল কার্যক্রম বন্ধ রাখতে সংশ্লিষ্টদের নোটিশ দেয়া হয়েছে। তবে স্থানীয় সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে সিনেমা হল দুটি সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে এবং সামনের অংশের ভবনগুলোও ভাঙ্গন শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
×