ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিশু সাঈদ হত্যা

প্রকাশিত: ০৬:২১, ১৯ মার্চ ২০১৫

শিশু সাঈদ হত্যা

সিলেটে স্কুলছাত্র আবু সাঈদ অপহরণ, খুন ও লাশ গুমের ঘটনাটি মর্মান্তিক এবং অত্যন্ত উদ্বেগজনক। ঘটনাটি চরম পৈশাচিক ও নিষ্ঠুরতাকেও হার মানায়। নৃশংসতা ও অমানবিকতা সমাজের কোন্ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে এই দৃষ্টান্ত দেখাল ঘাতকরা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কোমলমতি নিষ্পাপ শিশুরাও মানুষরূপী শ্বাপদের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। দুর্বৃত্তরা টাকার জন্য হত্যা করেছে শিশু আবু সাঈদকে। দুঃখজনক হলো, এই বর্বরতার সঙ্গে জড়িত আছে পুলিশ, রাজনৈতিক দলের কর্মী ও পুলিশের সোর্স। প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়, সিলেট শহরে বসবাসকারী পুলিশ কনস্টেবল এবাদুলের বাসা থেকে শনিবার রাত ১১টায় উদ্ধার করা হয়েছে চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্র সাঈদের বস্তাবন্দী লাশ। ১১ মার্চ স্কুল থেকে বাসায় ফেরার পথে সাঈদকে অপহরণ করা হয়। পরে অপহরণকারীরা তার বাবার কাছে ফোন করে ৫ লাখ টাকা মুক্তিপণ চায়। টাকা না পেলে সাঈদকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। পরে সাঈদের বাবা সংশ্লিষ্ট থানায় জিডি করেন। লাশ উদ্ধারের পর জানা গেছে, এবাদুলই ছিল সাঈদ অপহরণের মূল হোতা। মোবাইলে কথোপকথন ট্র্যাকিংয়ের মাধ্যমে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদে সাঈদ হত্যার বিস্তারিত বিবরণ দেয় সে। আদালতে এবাদুলের জবানবন্দীতে বলা হয়, অপহরণকারীদের পা জড়িয়ে ধরে জীবন ভিক্ষা চেয়েছিল সাঈদ। কিন্তু নিষ্পাপ এই শিশুর কান্নায় মন গলেনি তাদের। সাঈদ তাদের চিনে ফেলেছিল, পরে লোকজনকে বলে দিতে পারেÑ এ আশঙ্কায় তারা তাকে হত্যা করে। হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয় চারজন। একজন ঘরের দরজায় পাহারায় ছিল, একজন সাঈদের দুই হাত ধরে রেখেছিল, একজন ধরে রেখেছিল দুই পা, আরেকজন তাকে গলা টিপে হত্যা করে। নিষ্ঠুরতা কোন্ পর্যায়ে গেলে অপহরণকারীরা এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, তা বুঝতে কারও কষ্ট হয় না। এই হত্যার ঘটনাটি জনমনে উদ্বেগের কারণ বিশেষ করে এর সঙ্গে জড়িত একজন পুলিশ কনস্টেবল। তার বাসা থেকেই লাশটি উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধী আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীও দিয়েছে। অর্থাৎ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য নিজেই এই অপরাধের সঙ্গে জড়িত। এখানে ভূমিকাটা রক্ষকের ভক্ষক হওয়ার মতোই। গত বছর নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত ৭ খুনের মামলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সম্পৃক্ততার পর, এই ঘটনাটিতেও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি মানুষকে বিশেষভাবে ভাবিয়ে তুলেছে। এমনিতে দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে দেশের মানুষ এক ধরনের নিরাপত্তারহীনতায় ভুগছে। রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কোন সদস্য যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটায়, তাহলে মানুষ তো আরও নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বে। সমাজে অপরাধ যেন না বাড়ে, অপরাধীরা যাতে শাস্তি পায়- তা দেখার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এ দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই যথাযথভাবে পালন করতে হবে। ছোট ও নিষ্পাপ শিশুদের অপহরণ করার পর টাকা আদায়ের টোপ হিসেবে ব্যবহার করা নিকৃষ্টতম মানসিকতার পরিচায়ক। শিশু সাঈদ অপহরণ ও খুনের সঙ্গে যারা জড়িত, যারা এ নিষ্ঠুর ঘটনাটি ঘটিয়েছে তাদের অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক- দেশবাসী এটা আশা করে।
×